বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৫৫ রানে চূর্ণ-বিচূর্ণ শ্রীলঙ্কা, স্বপ্নভঙ্গের রাতে একগাদা লজ্জার রেকর্ড

  •    
  • ২ নভেম্বর, ২০২৩ ২২:৩৯

দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম উইকেটের পতন থেকেই রেকর্ড বুকে জায়গা করে নিতে শুরু করে শ্রীলঙ্কা। প্রতিটি উইকেট পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা নতুন নতুন রেকর্ড হিসেবে উপস্থিত হয়। তবে সে রেকর্ড গৌরবের কিছু নয়, লজ্জার।

০, ০, ১, ০, ১, ১২, ০, ০- এটি শ্রীলঙ্কার প্রথম আট ব্যাটারের ব্যক্তিগত স্কোর। সেমিফাইনালের আশা জিইয়ে রাখতে প্রতিটি ম্যাচেই জয়ের বিকল্প ছিল না শ্রীলঙ্কার। কিন্তু ভারতের বোলিং তোপে মাত্র ৫৫ রানেই গুটিয়ে গেছে লঙ্কানদের ইনিংস।

৩৫৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ৩০২ রানে হেরেছে দ্বীপরাষ্ট্রের দলটি। এর ফলে বাংলাদেশের পর শ্রীলঙ্কারও সেমিতে খেলার আশা শেষ হয়ে গেছে।

দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম উইকেটের পতন থেকেই রেকর্ড বুকে জায়গা করে নিতে শুরু করে শ্রীলঙ্কা। প্রতিটি উইকেট পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা নতুন নতুন রেকর্ড হিসেবে উপস্থিত হয়। তবে সে রেকর্ড গৌরবের কিছু নয়, লজ্জার।

ইনিংসের প্রথম বলে উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপ আসরে প্রথম কোনো ইন্ডিয়ান বোলার হিসেবে উইকেট পান জসপ্রীত বুমরাহ।

এছাড়া বিশ্বকাপ আসরে দ্বিতীয়বার দুই শ্রীলঙ্কান ওপেনারই ডাক মারার লজ্জার রেকর্ড গড়েছেন। এর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে এমন কীর্তি ঘটান লাহিরু থিরিমানে ও তিলকরত্নে দিলশান। সেবার আফগনদের বিপক্ষে খেলতে নেমে এমন বিপাকে পড়েন তারা। এছাড়া ২০১৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিল ও কলিন মুনরোও ডাক মেরে আউট হন। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ২০০৬ সালে প্রথম ঘটে এ ঘটনা।

শ্রীলঙ্কার শীর্ষ চার ব্যাটার মিলে আজ মাত্র এক রান তুলতে পেরেছেন। এটিই একদিনের ক্রিকেটে প্রথম চার ব্যাটারের সর্বনিম্ন সংগ্রহ। এই রেকর্ড আরও আছে পাকিস্তানের। ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদের চার ব্যাটার ফেরেন মাত্র ১ রান করে। এছাড়া ২ রানের সংগ্রহে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আয়ারল্যান্ড, তিন রান করে যৌথভাবে তৃতীয় অবস্থানে র‌য়ে‌ছে পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড।

ভারতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার প্রথম চার ব্যাটারের তিনজনই ডাক মেরে আজ বিরল এক রেকর্ডে প্রবেশ করেছে। এমন রেকর্ড আরও একবার আছে দলটির। সেটি ২০০৩ সালে। এছাড়া ইংল্যান্ডের প্রথম চারজনের তিন ব্যাটার ডাক মারেন ২০২২ সালে।

চলতি বিশ্বকাপে প্রথম দশ ওভারে আজই সবচেয়ে কম রান উঠেছে। ৬ উইকেটে মাত্র ১৪ রান তুলতে পেরেছে শ্রীলঙ্কা। এর আগে প্রথম পাওয়ার প্লেতে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ডটি ছিল ভারতের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩ উইকেটে ২৭ রান করে তারা।

তাছাড়া বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম দশ ওভারে এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। এর আগে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে দুই উইকেট হা‌রি‌য়ে ১২ রান তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের বিশ্বকাপে একই স্কোর (১২/২) করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

আজ পাঁচ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপে ভারতীয় বোলার হিসেবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী জহির খানের ৪৪ উইকেট টপকে এখন শীর্ষে মোহাম্মদ শামি। তাছাড়া বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক (৩) ফাইফার অর্জনে এখন মিচেল স্টার্কের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন এই ভারতীয়।

শুধু তাই নয়, ভারতীয় বোলার হিসেবে শ্রীনাথ ও হরভজনের তিনটি ফাইফার ছাড়িয়ে শামির ফাইফার এখন চারটি।

বিশ্বকাপে সর্বনিম্ন রান সংগ্রহের লজ্জা থেকে ১২ বছর পর মুক্তি মিলেছে বাংলাদেশের। ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। সেটি পেছ‌নে ফে‌লে এবার রেকর্ড‌টি নি‌জের ক‌রে নিল শ্রীলঙ্কা।

লক্ষ্য তাড়া করতে নামার পর শ্রীলঙ্কার ব্যাটারদের কোনো সুযোগই দেননি জসপ্রীত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজ। দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে পাথুম নিশাঙ্কাকে সাজঘরে ফেরান বুমরাহ। পরের ওভারের প্রথম বলেও একই চিত্র। সিরাজের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন দিমুথ করুনারত্নে। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি। ওভারের পঞ্চম বলে সিরাজের আউট সাইড অফের ডেলিভারিটি ড্রাইভ করতে গিয়ে থার্ড স্লিপে কাচ হয়ে যান সাদিরা সামারাবিক্রমা।

তৃতীয় ওভারে লঙ্কান ব‌্যাটাররা বুমরাহকে দেখেশুনে খেললেও চতুর্থ ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে ফের উকেট তুলে নেন সিরাজ। কুশল মেন্ডিসকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান তিনি।

দলীয় ৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দি‌শেহারা হ‌য়ে প‌ড়ে শ্রীলঙ্কা। এই তিন রানের দুটিই ছিল ওয়াইড থেকে পাওয়া।

দশম ওভারে মোহাম্মদ শামির হাতে বল তুলে দেন রোহিত। এসেই ভারতীয় বোলিংয়ের ষোলকলা পূর্ণ করেন তিনি। পরের ৬ উইকেটের পাঁচটিই গেছে তার পকেটে।

শামির প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে জাদেজাকে ক্যাচ দিয়ে ২৪ বলে ১ রান করে ফেরেন আসালঙ্কা। পরের বলেই ডাক মেরে কট বিহাইন্ড হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটা দেন দুসান হেমন্ত।

এ সময় প্রথম পাওয়ার প্লে শেষ হয়। পাওয়ার প্লে‌তে মাত্র ১৪ রান করতে গি‌য়ে ছয় উইকেট হারায় লঙ্কানরা। আউট হওয়া ছয় ব্যাটারের ব‌্যাট থে‌কে আসে মোট ২ রান।

শামির পরের ওভারে কট বিহাউন্ড হয়ে যান দুশমন্ত চামিরা। ৬ বল খে‌লে ডাক মে‌রে বিদায় নেন তি‌নি।

তার পরের ওভারেও উইকেট পান শামি। এবার তার শিকার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। উইকেটে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন মাথিউস। শামির ফ্লাইটেড ইয়র্কার মিস করে বোল্ড হয়ে ফেরেন ২৫ বলে ১২ করে।

নিজের পরপর তিন ওভারে শামি চার উইকেট তুলে নিলে ১৩.১ ওভার শেষে ২৯ রানে ৮ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। এরপর কোনোমতে উইকেটে টিকে থাকার চেষ্টা করেন মাহিশ থিকশানা ও কাসুন রাজিথা।

এই দুই ব্যাটারের ২০ রানের জুটি ভাঙেন শামিই। দলীয় ৪৯ রানের মাথায় ১৪ রান করে আউট হন রাজিথা। পরে জাদেজার বলে পাঁচ রান করে দিলশান মধুশঙ্ক ক্যাচ হয়ে গেলে ১৯.৪ ওভারে ৫৫ রান তুলে পাততাড়ি গুটিয়ে মাঠ ছাড়ে শ্রীলঙ্কা।

প্রথম ইনিংসে মধুশঙ্ক পাঁচ উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে শামিও পেয়েছেন ফাইফারের দেখা। এছাড়া মোহাম্মদ সিরাজ তিনটি এবং বুমরাহ ও জাদেজা একটি করে উইকেট নিয়েছেন।

অনবদ‌্য বো‌লিং‌য়ের পর ম্যাচসেরার স্বীকৃতিও পেয়েছেন শামি।

এর আগে টস জিতে ভারতকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান লঙ্কান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস। ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই দিলশান মধুশঙ্কের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত। আজ প্রথম বলে চার মেরে ইনিংস শুরু করলেও পরের বলেই ফিরে যেতে হয় হিটম্যানকে।

রোহিত ফিরে গেলে শুভমান গিলকে নিয়ে ইনিং‌সের হাল ধরেন বিরাট কোহলি। এই দুজনের মারকুটে ব্যাটিংয়ে একসময় মনে হচ্ছিল আজ সাড়ে চারশ পার করবে ভারত। তবে ১৮৯ রানের জুটি গড়ে শুভমান গিল ও কোহলি বিদায় নিলে ব্যাটিং ধস নামে। আসলে ত্রিশ ওভারের পর এই দুই ব্যাটার প্যাভিলিয়নে ফিরলে, যিনি ক্রিজে এসেছেন, তিনিই শুরু থেকে মারমুখী হয়ে খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৫৭ রান তুলতে সমর্থ হয় ভারত।

দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৯২ রান করেন শুভমান, কোহলি ৮৮ এবং শ্রেয়াস আইয়ার আউট হন ৮২ রান করে।

অন্যদিকে দিলশান মধুশঙ্ক একাই পাঁচ উইকেট নিয়ে ভারতের ইনিংস বড় করতে না দেয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বাকি একটি উইকেট নেন দুশমন্ত চামিরা।

ত্রিশতম ওভারের শেষ বলে দলকে ব্রেকথ্রু এনে দেন মধুশঙ্ক। তার স্লোয়ার বাউন্সারে টপ এজ হয়ে কট বিহাউন্ড হয়ে যান শুভমান। ফেরার আগে ৯২ বল খেলে ৯২ রান করেন তিনি। মারেন ১১টি চার ও দুটি ছক্কার মার।

এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কোহলিও। মধুশঙ্কের পরের ওভারেই কাটার ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে কভার অঞ্চলে পাথুম নিশাঙ্কার হাতে ক্যাচ দেন। ৯৪ বলে ৮৮ রান করা কোহলি আজ ১১টি চার মেরেছেন।

১৯৩ ও ১৯৬ রানে দ্বিতীয় ও তৃতীয় উইকেট পড়ার পর লোকেশ রাহুলকে নিয়ে ইনিংস বড় করার চেষ্টা শুরু ক‌রেন শ্রেয়াস। কিন্তু রাহুল বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ২১ রান করে তিনি ফিরে যান। তারপর দ্রুত আউট হয়ে ফেরেন সূর্যকুমার যাদবও। এদিন মাত্র ১২ রান করে মধুশঙ্কের বলে কাটা পড়েন তিনি।

এ সময় উইকেটের একপাশ আগলে রাখেন শ্রেয়াস। পরে জাদেজার সঙ্গে আরেকবার জুটি বড় করার চেষ্টা করেন। তবে এবারের চেষ্টায় সফল হন শ্রেয়াস। ত‌বে ৫৭ রানের জুটি গড়ে বিদায় নেন তিনি।

ফেরার আগে ৫৬ বলে ৬টি ছক্কা ও ৩ চারে ৮২ রানের ইনিংস খেলেন শ্রেয়াস। এবারও শ্রীলঙ্কার কান্ডারি সেই মধুশঙ্ক। আক্রমণাত্মক খেলতে থাকা শ্রেয়াসকে স্লোয়ার ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত করেন তি‌নি। ফলে কভারের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে চাওয়া বলটি কভার অঞ্চল থেকেই লুফে নেন থিকশানা।

শেষ ওভারের তৃতীয় বলে মোহাম্মদ শামি চার বলে দুই রান করে আউট হন। আর শেষ বলে রান আউট হন ২৪ বলে ৩৫ রান করা রবীন্দ্র জাদেজা। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কাকে ৩৫৮ রানের লক্ষ্য দেয় ভারত।

আজকের রেকর্ড গড়া জয়ে প্রথম দল হিসেবে অফিশিয়ালি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করল স্বাগতিকরা।

এ বিভাগের আরো খবর