বিশ্বকাপে দলগুলোর মধ্যে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াই বেশ জমে উঠেছে। যেভাবে খেলছে দলগুলো, তাতে কারা সেমিফাইনালে যেতে পারে- এর একটা আগাম অনুমান করা যেতেই পারে।
সেমিফাইনালে নাম লেখানোর দৌড়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড দল। এ পর্যন্ত যে ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলছে দল দুটি- তা প্রশংসার দাবিদার। উপমহাদেশের দেশে এসে আফ্রিকানরা ও কিউইরা যে সুন্দর ও উপভোগ্য ক্রিকেট উপহার দিচ্ছে, তা সত্যিই বিস্ময়কর। নান্দনিক ব্যাটিং ও বোলিংয়ের শক্তির প্রদর্শনী দেখিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয় জয় করছে তারা।
আজ এই দুদল পরস্পরের বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে। আমি মনে করি, যে মানের ক্রিকেট খেলছে দল দুটি- তাতে লড়াইটা হবে সেয়ানে সেয়ানে। দুদলের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও ক্রিকেটীয় সৌন্দর্যে মোহিত করা একটি ম্যাচ দেখা যাবে বলে আশা করি।
নেদারল্যান্ডসের কাছে অঘটনের ম্যাচটি বাদ দিলে বিশ্বকাপে অনেক উঁচু মানের ক্রিকেট খেলছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বড় টুর্নামেন্টে তাদের আগ্রাসী মেজাজের ভিন্ন ক্রিকেট দেখা যাচ্ছে। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে চার শর বেশি রান করে আফ্রিকানরা বার্তা দিয়ে দেয় যে, এবার কিছু একটা ঘটাতেই ভারতে এসেছে তারা। অতীতে দেখা গেছে, শুরুর দিকে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স শো করলেও টুর্নামেন্টে শেষ দিকে গিয়ে হতাশায় পোড়ে দলটি। এ জন্য তাদের নামের পাশে ‘চোকার্স’ শব্দটি উচ্চারিত হয়।
আমার মতে, এবার নতুন ধারার ক্রিকেট খেলছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ দলটি অনেক দূর যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। এরই মধ্যে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে বড় হারের লজ্জা দিয়েছে তারা। শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশকেও সহজে হারিয়েছে। তবে সর্বশেষ ম্যাচে দেখলাম, পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের ম্যাচটি খুবই ক্লোজ হয়েছিল। ওই ম্যাচেও রুদ্ধশ্বাস জয় তুলে নেয় আফ্রিকানরা। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওই অপ্রত্যাশিত হারের পর টানা তিন জয় পাওয়ায় এখন বেশ চনমনে দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকানদের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও জয়ের ছন্দ ধরে রাখতে পারে তারা।
অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের কথা যদি বলি, টুর্নামেন্টের শুরুটা স্বপ্নের মতো হয়েছে তাদের। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপে যাত্রা করা দলটি পরের তিনটি ম্যাচেও জয় পায়। অর্থাৎ টানা চার জয়ের পর তাদের থামিয়েছে ভারত। ভারতীয়দের কাছে হারের হতাশা পরে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেও কাটিয়ে উঠতে পারেনি কিউইরা। ফলে টানা দুই হারে তারা মানসিকভাবে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তাদের উচিত হবে- ইতিবাচক ক্রিকেট খেলে ঘুরে দাঁড়ানোরে লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামা। সেমিফাইনালে খেলার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি মাথায় রেখেই হয়তো মাঠে নামবে নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়রা।
পাওয়ার ব্যাটিং কাকে বলে? সেটি এই আসরে দেখিয়ে দিচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটাররা। কুইন্টন ডি কক, আইডেন মার্করাম, হাইনরিখ ক্লাসেনরা যেন মেশিনের গতিতে রান তুলছেন। তাদের সামনে কিউই বোলাররাও তুলাধোনা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
তবে নিউজিল্যান্ডের পেস ইউনিট বেশ বৈচিত্র্যময় ও খুবই কার্যকর। পাশাপাশি তাদের স্পিন অ্যাটাকও ধারালো। ফলে আফ্রিকান ব্যাটাররা বেকায়দায় পড়তে পারেন। অবশ্য বিধ্বংসী পেস-স্পিনের বিপক্ষে বড় স্কোর গড়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। কুইন্টন ডি কক যে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন, আজকের ম্যাচেও তার ব্যাট জ্বলে উঠতে পারে।
অন্যদিকে কিউইরাও ব্যাটিংয়ে কম যাবেন না। তাদেরও বিস্ফোরক ব্যাটিং লাইনআপ রয়েছে। রাবাদা, লুঙ্গি, জেনসেনদের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে দক্ষতা দেখাতে পারেন তারা। কিউই অলরাউন্ডার রাচিন রবিন্দ্র দুর্দান্ত খেলছেন। ব্যাটিংয়ে যেমন বিধ্বংসী, বোলিংয়েও উজ্জ্বল এই ক্রিকেটার। তার পারফরম্যান্স ম্যাচে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আফ্রিকান স্পিনারদের দেখে-শুনে খেলতে হবে। তা না হলে বিপদে পড়তে হতে পারে।
আজ পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে হবে খেলা। এই মাঠটি আকারে ছোট। ফলে দুদলের ব্যাটাররা যে বড় শট খেলতে অভ্যস্ত, তাতে প্রচুর বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি হবে। স্কোর বোর্ডে রান উঠবে প্রচুর; হাই-স্কোরিং ম্যাচ হবে।
এই ম্যাচে টস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। টস জয়ী দল বেশি সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে।
এ পর্যন্ত টস জিতে আগে ব্যাটিং করে জয়ের সাফল্য বেশি দক্ষিণ আফ্রিকার। রান তাড়া করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে দলটি। তাই টসের দিকে তাকিয়ে থাকবে তারা। নিউজিল্যান্ডও যদি টস জিতে, আগে ব্যাটিং করবে। কেননা দিনের আলো কাজে লাগিয়ে রাতের সুবিধা আদায় করে নেয়ার চেষ্টা করবে দলটি।
যাই হোক, আমার মতে, যারা আজ মাঠে সেরাটা খেলতে পারবে, তাদের দিকেই জয়ের পাল্লা ভারী থাকবে।