বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নেমেই দাপুটে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। তারপর যেন জিততে ভুলেই গেছে সাকিবের দল। পরের টানা পাঁচটি ম্যাচেই হারের পর আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচটিতেও ভক্তদের টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে বসে থাকার প্রতিদান দিতে পারেনি বাংলাদেশ।
আজ বাংলাদেশের প্রাপ্তি বলতে পাকিস্তানের তিনটি উইকেট নিতে পেরেছেন বোলাররা। আর লিটন দাস দুই ম্যাচ পরে ফের রানের দেখা পেয়েছেন। বাকি পুরো ম্যাচে পাকিস্তান বলতে গেলে বাংলাদেশকে নিয়ে ছেলেখেলা করেছে।
এই হারে প্রথম দল হিসেবে এবারের টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে টাইগারদের। অন্যদিকে আজকের জয়ে পয়েন্ট টেবিলের পাঁচ নম্বরে উঠে এসেছে বাবর আজমের দল।
ম্যাচের শুরু থেকেই চুপসে যায় বাংলাদেশি সমর্থকদের মুখ। ছবি: ক্রিকইনফো
২০৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ১০৫ বল হাতে রেখে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান। এদিন আব্দুল্লাহ শফিক ও ফখর জামানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙতেই ঘাম ছুটেছে সাকিব, মোস্তাফিজদের।
রান তাড়া করতে নেমে সাবধানি শুরু করেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ ও ফখর। তবে সময় যত বেড়েছে তাদের দুজনের রান তোলার গতি ততই বেড়েছে।
তাসকিন ও মেহেদী হাসান মিরাজদের পর বোলিংয়ে এসে ব্যর্থ হন সাকিবও। কোনোভাবেই ব্রেকথ্রু আনতে না পেরে শেষমেষ নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে বল তুলে দিয়েও কাজ হয়নি।
প্রায় একইসঙ্গে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন দুই পাকিস্তানি ওপেনার। এর পরই বোলারদের ওপর আরও চড়াও হতে গিয়ে বাংলাদেশকে উইকেট বিলিয়ে দেন আব্দুল্লাহ শফিক। এর কিছু পর তিনে নামা বাবর আজমও মাত্র ৯ রান করে ফিরে যান। মিরাজের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়েছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক।
মিরাজের তিনটি উইকেটই বাংলাদেশের প্রাপ্তি।
দ্রুত রান তুলতে গিয়ে বিদায় নেন ফখরও। মিরাজের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ৭৪ বলে ৮১ রান করা ফখর ৭টি ছক্কা ও তিনটি চার মারেন। ফলে তিনটি উইকেটই যায় মিরাজের পকেটে।
এরপর বাকি কাজটুকু ভালোভাবে সামলেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ। রিজওয়ান ২১ বলে ২৬ ও ইফতিখার ১৫ বলে ১৭ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন।
৮১ রানের অনবদ্য ইনিংসের জন্যে ম্যাচসেরা হয়েছেন ফখর জামান।
৭৪ বলে ৮১ রান করতে গিয়ে ছক্কার বন্যা বইয়ে দেন ফখর।
এর আগে টস জিতে আজ আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন সাকিব আল হাসান। এবারের বিশ্বকাপে ব্যাটিং ব্যর্থতার ধারা বজায় রেখে একের পর এক উইকেট বিলিয়ে দিতে থাকেন বাংলাদেশি ব্যাটাররা। ফলে পাকিস্তানি বোলিং তোপে ৪৫.১ ওভারেই ২০৪ রান করে অল আউট হয়ে যায় সাকিব অ্যান্ড কোং।
কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে শাহিন, ওয়াসিমদের বোলিং তোপে গুঁড়িয়ে যায় বাংলাদেশের টপ অর্ডার। তবে এর মধ্যে আজ ভালো খেলার চেষ্টা করেছিলেন গত কয়েক ম্যাচে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে চলা লিটন দাস। দলীয় ২৩ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশের হাল ধরেন লিটন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
কিন্তু তাদের ব্যাটিং দৃঢ়তা দেখিয়েও খুব বেশি লাভ হয়নি। কারণ ৬৪ বলে ৪৫ রান করে লিটন এবং একই সংখ্যক বল মোকাবিলা করে মাহমুদুল্লাহ ৪৩ রান করে ফেরার পর আর তেমন কেউই নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।
বাংলাদেশি ব্যাটারদের হতশ্রী পারফরম্যান্সে হাসি আটকে রাখতে পারেননি হারিস।
শেষের দিকে সাকিবের ৪৩ ও মেহেদী হাসান মিরাজের ২৫ রানের ইনিংস ছাড়া আর কোনো ব্যাটারই আজ দুই অঙ্কের ঘরে নিজের রান ওঠাতে পারেননি। পাকিস্তানি বোলাররা টপাটপ উইকেট তুলে নিলে ২৯ বল বাকি থাকতেই লেজ গুটিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরে টাইগাররা।
আজ পাকিস্তানি বোলারদের কেউই উইকেটের জন্য হতাশ হননি। শাহিন আফ্রিদি ২৩ রান খরচ করে তিন উইকেট নেন। মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রও তিন উইকেট নেন, তবে তিনি শাহিনের চেয়ে আট রান বেশি খরচ করেন। আর হারিস রউফ দুটি এবং ইফতিখার আহমেদ ও উসমান মীর একটি করে উইকেট পান।