বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হতাশা নিরাশা গ্রাস করেছে বাংলাদেশকে

  •    
  • ৩০ অক্টোবর, ২০২৩ ২৩:৩২

আশা করি, সর্বশক্তি প্রদর্শন করতে পারলে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি জমজমাট ও স্মরণীয় ম্যাচ উপহার দিতে পারবে বাংলাদেশ। একটি ভালো জয়ের অপেক্ষায় সবাই।

চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জন্য সেমিফাইনালে খেলার সব রাস্তা বন্ধ। গত ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৮৭ রানের হারটি সব কিছুতেই পানি ঢেলে দিয়েছে! যে আশা-ভরসা নিয়ে স্বপ্ন দেখিয়ে বিশ্বকাপের মহামঞ্চে খেলছিল বাংলাদেশ, ওই এক হারে নিমিষেই সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল!

বাংলাদেশের ক্রিকেটের আকাশ এখন কালো মেঘে ঘনঘটা; গুমোট এক পরিবেশ বিরাজমান। এই যে অপ্রত্যাশিত, অবিশ্বাস্য রকমের এক বৈরী পরিস্থিতি তৈরি হলো, তা কল্পনায় ছিল না কারও।

বছরের পর বছর ওয়ানডে ক্রিকেট খেলে যে একটি ব্র্যান্ড তৈরি হলো- সেই ক্রিকেট বিশ্বমঞ্চে প্রদর্শন হলো কই!

হ্যাঁ, দল যে সব সময় জিতবে- এমন ধারণা করাটাও সম্পূর্ণ ভুল। কেননা দল কখনও কখনও হারবে, কখনও তুমুল প্রতিযোগিতা জমিয়ে তুলবে, কখনো অঘটনের শিকার হবে, কখনো জয়ের ধারায় থাকবে- এসব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, কোনো এক অদৃশ্য, অজানা কারণেই যেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নেই! এ পর্যন্ত যে ছয় ম্যাচ খেলেছে তারা, প্রথম ম্যাচটি বাদ দিলে কোনো ম্যাচেই স্বাভাবিক ক্রিকেটটা খেলতে পারেনি। আসেনি প্রত্যাশিত ফলও।

নেদারল্যান্ডস ম্যাচে সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে মঙ্গলবার পাকিস্তানের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানও টানা হারের মধ্যে আছে। তবে বাংলাদেশের জন্য পাকিস্তান সব সময় শক্ত প্রতিপক্ষ। আমি মনে করি, এই পাকিস্তানের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে সাকিবদের। এই ম্যাচটি সহজ হবে না। তবে এই ম্যাচে যদি একটি ভালো জয় তুলে নিতে পারে টাইগাররা, তাহলে যে হতাশার রাজ্যে বিচরণ করছে বাংলাদেশ- সেখানে কিছুটা স্বস্তির হাওয়া বইতে পারে।

বাংলাদেশের টানা পাঁচ ম্যাচে হারের কারণ ব্যবচ্ছেদ করলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। মোটা দাগে যদি বলি, কোনোভাবেই স্বাভাবিক ব্যাটিং শক্তিটা দেখাতে পারছে না বাংলাদেশ। একযোগে টপ অর্ডার, মিডল অর্ডার ব্যাটাররা অফ ফর্মে চলে গেছেন। যা অল্প-স্বল্প রান আসছে, সেটি লোয়ার মিডল অর্ডারের সৌজন্যে।

ভারতের মাটিতে টুর্নামেন্ট। সেখানে রান হবে- এটাই পূর্বানুমান। আর এখন এটাই দেখা যাচ্ছে। অথচ এই উইকেটে অন্য দলের ব্যাটাররা যেখানে দক্ষতা দেখিয়ে রান তুলছেন, সেখানে বিপরীত মেরুতে অবস্থান বাংলাদেশের ব্যাটারদের। টপ অর্ডারে ব্যাপক রদবদলও এ ক্ষেত্রে দায়ী। যদি একজন ব্যাটার আগে থেকে না জানেন, কোথায় ব্যাট করবেন- তাহলে তার প্রস্তুতি কী হবে, কীভাবে রান করবেন, এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে যেতে হয়। ইনিংসের শুরুটা যদি ভালো না হয়, তাহলে কীভাবে বড় স্কোর হবে?

বাংলাদেশের না ইনিংসের শুরুটা ভালো হচ্ছে, না মাঝের সময়ে ইনিংস মেরামত হচ্ছে- সব জায়গাতেই ব্যর্থ ব্যাটাররা। ব্যক্তিগত কিংবা দলীয়- কোনো পারফরম্যান্স শো করতে পারেনি তারা। তামিম ইকবালবিহীন উদ্বোধনী জুটি জমেনি। অফ ফর্মে থাকা লিটনের সঙ্গে নতুন তানজিদ তামিম বড় ম্যাচের চাপ নিতে পারছেন না। তিনে নেমে মেহেদী হাসান মিরাজও সফল নন। চার নম্বরে নেমে টানা ম্যাচেই হতাশার ছবি এঁকেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আর অধিনায়ক সাকিবের ব্যাটে তো রান নেই দীর্ঘ সময় ধরেই।

বিশ্বকাপের মাঝে হঠাৎ দেখলাম ঢাকায় এসে সাকিবের ব্যাটিংয়ের সমস্যার সমাধান খুঁজতে। এরপর যদি বলি, মুশফিকও যেন নিজেই নিজের ছায়া হয়ে গেছেন। তাওহিদ হৃদয় তো রান করতে না পারায় একাদশে জায়গাই হারালেন। কিছু রান আসছে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে। কিন্তু শুধু লোয়ার মিডল অর্ডারের দিকে তাকিয়ে থাকলেই কী বড় স্কোর হয়? ব্যাটিংয়ের আসল কাজটা তো করে দেন উপরের সারির ব্যাটাররা। আর সেখানেই সুপার ফ্লপ বাংলাদেশ।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে যে ব্যাটিং দেখা গেল, তা খুবই হতাশাজনক, অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য। এই ব্যাটিং ব্যর্থতার সঙ্গে যোগ হলো বিবর্ণ বোলিংও। স্পিনাররা গুরু দায়িত্ব পালন করছেন। পেসাররা সেভাবে দায়িত্ব নিতে পারেননি।

সব সময় উইকেট যে সহায়ক হবে বোলারদের জন্য, এটা বৈশ্বিক আসরে আশা করা যায় না। এখানে মেধা খাটিয়ে, বৈচিত্র্যময় বোলিং প্রদর্শনী দেখিয়ে সফল হতে হয়। আর এই জায়গাতেই পিছিয়ে বাংলাদেশ। প্র

থম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বোলারদের সৌজন্যে জয় এলেও পরের ম্যাচগুলোয় তাদের পারফরম্যান্স ‘আপ টু দ্য মার্ক’ ছিল না। ব্যাটিং-বোলিং- মহাগুরুত্বপূর্ণ এই দুই বিভাগের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও বাংলাদেশের দুর্দশা দেখা গেছে। গত ম্যাচে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ মিস হয়েছে। মোট কথা, সব দিক থেকেই বিশ্বকাপে কোণঠাসা বাংলাদেশ।

আমার মতে, এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সবচেয়ে যে জিনিসটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ- সেটি হলো দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলা। হাতে থাকা বাকি তিন ম্যাচে ভালো কিছু করে দেখাতে পারলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলবে।

এদিকে টানা চার ম্যাচে হেরে হতাশার সাগরে ডুবেছে পাকিস্তান দলও। তবে এই দলটি যে পর্যায়ের ক্রিকেট খেলতে জানে, বাংলাদেশের জন্য ম্যাচ বের করা অনেক কঠিন হবে। ধারাবাহিক না হলেও পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ খুবই শক্তিশালী। সাড়ে তিন শর মতো রান চেজ করে জেতার সক্ষমতা আছে তাদের। এই ব্যাটিং শক্তির পাশাপাশি তাদের বিধ্বংসী পেস অ্যাটাকের সামনে বিপাকে পড়তে পারে বাংলাদেশ। শাহিন শাহ আফ্রিদিদের বল সামলানো অনেক কঠিন কাজ হবে। তাদের দ্রুতগতির বৈচিত্র্যময় বোলিং-ই আজকের ম্যাচে মূল পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। এ ছাড়া স্পিনেও এগিয়ে দলটি।

সব মিলিয়ে এই পাকিস্তান খুবই শক্তিশালী। তারা ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। বাংলাদেশকে সেই হিসাব করেই মাঠে নামতে হবে। কোনো প্রকার ভুল করা যাবে না।

আশা করি, সর্বশক্তি প্রদর্শন করতে পারলে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি জমজমাট ও স্মরণীয় ম্যাচ উপহার দিতে পারবে বাংলাদেশ। একটি ভালো জয়ের অপেক্ষায় সবাই।

এ বিভাগের আরো খবর