হঠাৎ ভারত থেকে ঢাকায় উড়ে এসে ছোটবেলার কোচের কাছ থেকে ব্যাটিংটা ঝালিয়ে নিয়ে গেলেন ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান। বোলিংটা ভালো করলেও তার ব্যাটিংটা ঠিকমতো হচ্ছিল না। তাই নিজের সমস্যাগুলো সমাধানের উপায় খুঁজতে দেশে আসেন এই অলরাউন্ডার।
গত বিশ্বকাপে ব্যাট-বলে যে অনবদ্য সাকিবকে আমরা দেখেছিলাম, এবার তার সেই দ্যুতি ছড়ানো পারফরম্যান্স দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য ‘বাউন্স ব্যাক’ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন।
অন্যদিকে, কাঁধের ব্যথা সেরে মাঠে ফেরার অপেক্ষায় দলের সেরা পেসার তাসকিন আহমেদ। এই বিশ্বকাপে তাকেও সেরা ফর্মে দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বকাপের আগে গত কয়েক বছর ধরে যে বিধ্বংসী বোলিং করে নিজেকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেলেন তাসকিন, বিশ্বকাপে তার সেই প্রভাব দেখছি না। তারও ‘বাউন্স ব্যাক’ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত। এই দুই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় যেমন ধুঁকছে, বাংলাদেশ দলও খাদের কিনারায়।
আজ বাংলাদেশ দল ‘বাউন্স ব্যাক’ করার লক্ষ্যে মাঠে নামবে। প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস বলেই জয়ের প্রত্যাশাটা বাড়ছে। টানা চার ম্যাচে হেরে কোণঠাসা বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে খেলার যে লক্ষ্য, সেখান থেকে অনেকটাই বিচ্যুত এখন দল। তবুও হাতে থাকা বাকি ম্যাচে ভালো খেলে যদি বিশ্বকাপ শেষ করা যায়, তাহলে তো মন্দ হয় না। বাংলাদেশের শেষ তিনটি ম্যাচে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী। এর আগে যদি নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় তুলে নেয়া যায়, তাহলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে, আরও ভালো খেলার মানসিকতা তৈরি হবে।
আমি মনে করি, আজ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষের ম্যাচটির মর্যাদা অনেক। এই ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ম্যাচে জয় তুলে নেয়া উচিত সাকিবদের।
আফগানিস্তানকে হারানোর পর থেকেই বাংলাদেশ কক্ষপথে নেই। বিশেষ করে ব্যাটিং ব্যর্থতায় দল বেশি পিছিয়ে পড়েছে। টপ অর্ডার ঠিকভাবে ক্লিক করতে পারছে না। মিডল অর্ডারেও ভরসা রাখা যায় না। কিছু রান আসছে লোয়ার মিডল অর্ডার থেকে। অর্থাৎ আমরা দেখেছি, গত তিন ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকেই দলের গুরুত্বপূর্ণ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরির ইনিংস খেলে এই সিনিয়র ক্রিকেটার প্রমাণ করেছেন যে, এখনো তার নাম বাতিলের খাতায় যায়নি। এখনো তার ব্যাট যথেষ্ট আস্থাশীল, দায়িত্ববান ও স্কিলফুল।
মুশফিকও ব্যাট হাতে সফল। এই দুই ব্যাটার ছাড়া দলের অন্য কাউকে ধারাবাহিক দেখা যাচ্ছে না। ভারতের উইকেটে আমরা যা দেখলাম, ব্যাটিং করে বড় স্কোর গড়তে হবে এবং প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে। এখন পর্যন্ত সেটি করে দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। আশা করি, আজকের ম্যাচে ব্যাটিং শক্তির সেরা প্রদর্শনী দেখাবেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা।
পাশাপাশি বোলিংয়েও জ্বলে উঠতে হবে তাসকিনদের। সমন্বিত পারফরম্যান্সেই বাংলাদেশ ‘বাউন্স ব্যাক’ করতে পারে।
নেদারল্যান্ডসকে সহজ প্রতিপক্ষ হিসেবে নেয়া যাবে না। বাছাই পর্বের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলতে এসেছে তারা। বাছাই পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, স্কটল্যান্ডসহ অনেক দলকে হারিয়েছে তারা। তাদের দলে কাউন্টি ক্রিকেট খেলা বেশ কিছু প্রতিভাবান ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রয়েছে। তারা দলকে এগিয়ে রাখছে। বিশেষ করে তাদের যে অলরাউন্ডার ডি লিড, তার ব্যাটিং বলেন আর বোলিং বলেন, খুবই কার্যকর। তাদের আরও কয়েকজন অলরাউন্ডার আছেন, তারা ব্যাটিং ও বোলিংয়ে দলের অপশন বাড়িয়ে দিয়েছে। মোট কথা, বিশ্বকাপে বড় দলগুলোর বিপক্ষে যে ডাচরা চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে জানে, সেই প্রমাণ দিয়েছে তারা।
এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে সেরা পারফর্ম করা দলের মধ্যে একটি দক্ষিণ আফ্রিকা। এই দলটিকে হারিয়ে বিশ্বকাপে অঘটনের জন্ম দিয়েছে ডাচরা। অর্থাৎ বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে কোনো দলকেই হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। তাই নেদারল্যান্ডসকে প্রবল প্রতিপক্ষ মনে করেই খেলতে হবে টাইগারদের। তাদের দুর্বলতা ও সবলতার জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী কৌশল নিয়ে মাঠে নামতে হবে। কোনোভাবেই কোনো জায়গায় ভুল করা যাবে না। নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলতে হবে।
আরেকটি কথা না বললেই নয়, ক্রিকেট খেলায় অনেক সময় নিজেদের দিনে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল সেরা পারফরম্যান্স দেখাতে পারে। এ ব্যাপারেও বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে সাকিবদের।
পরিশেষে বলব, সবদিক বিবেচনা করে যদি মাঠে নামে বাংলাদেশ দল, নেদারল্যান্ডসকে সহজেই হারাতে পারবে এবং সাফল্যের খাতায় আরেকটি জয় যোগ হবে। যে জয় সামনে যাওয়ার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।