স্পিন শক্তিতে আফগানিস্তান কতটা ভয়ংকর, সেটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে। রশিদ খান, মুজিব উর রহমান ও মোহাম্মদ নবিরা যে বিশ্ব মানের স্পিনার, তা দেখেছে পুরো বিশ্ব। এই তিন স্পিনারের মায়াবী ঘূর্ণিতে কোমর সোজা করেই দাঁড়াতে পারেননি ইংলিশ ব্যাটাররা। তিনশর কম রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তাদের ইনিংস গুটিয়েছে মাত্র ২১৫ রানে, প্রায় দশ বাকি থাকতেই। এই বিষাক্ত স্পিনের সামনে যেভাবে নীল হয়েছেন মালান, জো রুট, লিভিংস্টোনরা, বুধবার নিউজিল্যান্ডেরও একই দুর্দশা হতে পারে।
বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত যে কটি দল দুর্দান্ত খেলছে, এর মধ্যে একটি দল নিউজিল্যান্ড। তিন ম্যাচের তিনটিই জয়ে রাঙিয়েছে দলটি। তাদের ব্যাটাররা দারুণ ফর্মে আছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন গত ম্যাচে ফিরলেও আবারও চোটগ্রস্ত হয়েছেন। কিউই ব্যাটিংয়ের প্রাণ উইলিয়ামসন না খেললেও তাদের দলে পারফর্মারের কিন্তু অভাব নেই।
তবে গত তিন ম্যাচের তুলনায় নিউজিল্যান্ডের জন্য বুধবারের ম্যাচটি একটু ব্যতিক্রম হতে পারে। আর সেটি ঘটবে আফগানিস্তানের স্পিন শক্তির কারণেই। রশিদ, মুজিবদের সামনে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে টম লাথামদের। অবশ্য ভারতের মাটিতে তাদের কিছু ক্রিকেটারের স্পিন খেলার অভ্যস্ততা আছে আইপিএলের কল্যাণে। আমি মনে করি, এটি তাদের জন্য বেশ কাজে দেবে।
চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের যে উইকেটে গত ম্যাচ খেলেছে নিউজিল্যান্ড, ওই উইকেট ব্যাটিং-সহায়ক ছিল। যদিও ঐতিহ্যগতভাবে চেন্নাইয়ের উইকেট স্পিনবান্ধব। অনেক লো স্কোরিং ম্যাচ হয়েছে সেখানে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে ভারতের স্পিনাররা বেশ সুবিধা পেয়েছেন। ওই একই রকম উইকেট হলে বিপদ হতে পারে নিউজিল্যান্ডের। এ ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে প্রবল। অবশ্য কিউই দলে কয়েকজন বিশ্বমানের স্পিনার আছেন। বাঁহাতি স্পিনে স্যান্টনার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে আছেন রাচিন রবীন্দ্রও। ইশ সোধির লেগ স্পিন কাজে লাগাতে পারে তারা। অফ স্পিনে গ্লেন ফিলিপসও জ্বলে উঠতে পারেন। অর্থাৎ উইকেটে স্পিন ধরলে ভালো সুবিধা পাবে নিউজিল্যান্ডও। এ ক্ষেত্রে বাড়তি একজন স্পিনার নিয়ে নামতে পারে বর্তমান রানার্সআপ দলটি।
অন্যদিকে উইকেটের আচরণ গত ম্যাচের মতো হলে পেস অ্যাটাক কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। চেন্নাইয়ের উইকেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে স্পিন শক্তি সেভাবে কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। পেস অ্যাটাকেই নির্ভর হতে হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে কিউই বিধ্বংসী পেস অ্যাটাক বড় আতঙ্কের কারণ হতে পারে আফগানিস্তানের জন্য। টিম সাউদি, টেন্ট বোল্টদের তুফান গতির ধারালো বলের সামনে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে তাদের ব্যাটারদের।
অবশ্য আগের ম্যাচে ইংলিশদের বেশ দক্ষভাবে সামালিয়েছেন গুরবাজরা। ওই ম্যাচের ব্যাটিং বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে তাদের। অন্যদিকে, পেস আক্রমণে আফগানদের মূল অস্ত্র ফজল হক ফারুকি। তার বল খেলা খুবই কঠিন। নতুন বলে মারাত্মক ভয়ংকর এই বাঁহাতি পেসার। ডেথ ওভারেও সফল ফারুকি। আফগানিস্তানকে এগিয়ে দিতে পারেন তাদের পেসাররাও।
একটি বিষয় খুবই লক্ষণীয়, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গত ম্যাচে দুর্দান্ত ফিল্ডিং করেছে আফগানিস্তান। তাদের গ্রাউন্ড ফিল্ডিং ছিল দেখার মতো। আমি সব সময় বলে থাকি, বড় দলের বিপক্ষে আপনাকে সফল হতে হলে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং- তিন বিভাগেই সমানভাবে জ্বলে উঠতে হবে। যেখানে সুযোগ আসবে, সেটি কোনোভাবেই হাতছাড়া করা যাবে না। ক্যাচ মিস করা যাবে না। টাইট ফিল্ডিং দিতে হবে। যেহেতু পাওয়ার প্লের সময় বৃত্তের বাইরে বেশি খেলোয়াড় রাখা যায় না, পাওয়ার প্লের পর ফিল্ডিং হিসাব করে সাজাতে হবে।
শেষ দিকে আমি এটাই বলব, বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে যে মোমেন্টাম পেয়েছে আফগানিস্তান, সেটিই তাদের অনেক এগিয়ে দেবে। আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওই জয় আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি হিসেবে কাজে দেবে তাদের। মানসিকভাবে চাঙা, উজ্জীবিত থাকা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেললে যেকোনো দল সফল হয়। আজকের ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তানের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমবে বলে আশা করছি।