ভারতের হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালার যে মাঠে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে বাংলাদেশ, মঙ্গলবার সেই মঞ্চে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেট-যুদ্ধ হবে।
শুরুতেই চমকে যেতে পারেন এই ভেবে, যে দুটি দলের শক্তি-সামর্থ্যের দিক দিয়ে বিশাল ব্যবধান, সেই দুই দলের মধ্যে কি মাঠের যুদ্ধ জমবে? আসলে বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে কোনো দলকেই ছোট কিংবা বড় ভাবা উচিত নয়। যোগ্যতা প্রমাণ করেই তারা এখানে খেলতে এসেছে। তাই নেদারল্যান্ডসকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই দক্ষিণ আফ্রিকার।
এক বছরও হয়নি বিশ্বকাপের মঞ্চে ডাচদের কাছে হেরে যাওয়ার দগদগে ক্ষত এখনও রয়েছে প্রোটিয়াদের। গত বছর অ্যাডিলেডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরেই তো টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকানদের। সেই তরতাজা দুঃস্মৃতি কি এখনও তাড়া করে বেড়ায় না তাদের? ফলে আজ বাড়তি সতর্ক হয়েই মাঠে নামবে টেম্বা বাভুমার দল।
আমি মনে করি, ধর্মশালার মাঠে আজকের ম্যাচে টসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কেননা হিমাচলের ঠাণ্ডা আবহাওয়া খেলায় অনেক প্রভাব ফেলবে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উইকেটের আচরণও হবে রহস্যময়। যেটি দেখা গেছে বাংলাদেশের দুটি ম্যাচে। ব্যাটাররা বেশি সুবিধা আদায় করে নিতে পারেন। তবে কৌশলী হয়ে বোলিং করলে সফল হবেন বোলাররা। টসজয়ী দল দিনের আলোর সুবিধা কাজে লাগাতে পারেন। যেহেতু দিবা-রাত্রির ম্যাচ হবে এটি।
ব্যাটিং-বোলিংয়ের পাশাপাশি ভালো ফিল্ডিংও খুব জরুরি। ধর্মশালার আউটফিল্ড নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এই আউটফিল্ডে ড্রাইভ দিতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন দুই দলের খেলোয়াড়রা। বিশেষ করে গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে নেদারল্যান্ডসকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
আফ্রিকানরা ব্যাটিংয়ে খুবই শক্তিশালী। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৪২৮ রান তুলে বিশ্বরেকর্ড গড়ে এই বিশ্বকাপ শুরু করেছেন তারা। তাদের অনেক পাওয়ার হিটার রয়েছে। দুর্দান্ত ফর্মে আছেন ব্যাটাররা। তবে চার, সিঙ্গেল, ডাবলস যদি ঠিকঠাক মতো আটকানো যায়, তা হলে ম্যাচে ডাচদের ভালো অবস্থানে থাকার সুযোগ হবে। কোনোভাবেই ক্যাচ ছাড়া যাবে না। হাফ চান্সকে ফুল চান্সে রূপান্তরিত করতে হবে। কোনো সুযোগই নষ্ট করা যাবে না। বড় দলের বিপক্ষে সফল হতে হলে ফিল্ডিংয়ের এই ছোট ছোট জিনিসগুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। কেননা এগুলো ম্যাচের রং বদলে দিতে সক্ষম।
ব্যাটিংয়ে যেমন বিধ্বংসী, বোলিংয়ে আরও ভয়ংকর দক্ষিণ আফ্রিকা। কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি, জেনসেনের ঝড়োগতির বল খুবই মারাত্মক-ধারালো। মহারাজ ও শামসিদের মায়াবি স্পিনও বেশ কার্যকর। ফলে স্কট অ্যাডওয়ার্ডস বাহিনীকে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।
অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে একসময় যুব ক্রিকেট খেলা অ্যাকারম্যান, রিলোফ ভান ডাররা দেখেশুনেই খেলবেন। তাদের আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতাও আছে। সেটিও বাড়তি কাজে দেবে। অন্যদিকে বিশ্বকাপে যে দশটি দল খেলছে, এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটাররাই কিন্তু দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। ডি কক টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন। মারক্রাম খুবই আক্রমণাত্মক। ডুসেনও আগ্রাসী। অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার একসঙ্গে জ্বলে উঠছে। ডাচদের বিপক্ষেও তারা ছন্দ ধরে রাখার চেষ্টা করবেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রানরেট। অনেক লম্বা টুর্নামেন্ট। শেষ দিকে গিয়ে রানরেটের হিসাব-নিকাশ বড় হয়ে দেখা দিতে পারে। তাই নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ভালো ব্যাটিং করে রানরেট বাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে দক্ষিণ আফ্রিকা।
এদিকে প্রোটিয়াদের চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত নেদারল্যান্ডসও। তাদের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার নিয়মিত কাউন্টি ক্রিকেটে খেলে থাকেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন তারা। গত দুটি ম্যাচে হারলেও পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুইশর বেশি রান করে নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন ডাচ ব্যাটাররা।
ডি লিড অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে দলকে যেভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেই ধারা আজকের ম্যাচেও দেখা যেতে পারে। এ ছাড়া তাদের পেস বোলিং অ্যাটাকও খারাপ নয়। স্পিনেও ভালো দলটি। সব মিলিয়ে আমি বলব, দক্ষিণ আফ্রিকানদের বিপক্ষে চোখে চোখ রেখেই মাঠের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবে নেদারল্যান্ডস দল। আগ্রাসী মনোভাব, আত্মবিশ্বাসী শরীরী ভাষা ও শক্ত মানসিকতা নিয়ে ইতিবাচক খেললে দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাটিতে নামাতে পারে ডাচরা।