ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে লক্ষ্য যাইহোক, খেলা হয় চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক- দীর্ঘদিন ধরে এ দুই দেশের মধ্যকার ঐতিহ্যবাহী ক্রিকেটযুদ্ধে এমন এক অলিখিত নিয়ম চলে আসলেও বিশ্বকাপের আজকের ম্যাচে দেখা গেল উল্টো চিত্র। বল হাতে পাকিস্তানি ব্যাটারদের কুপোকাত করে ব্যাট হাতেও নৈপুণ্য দেখিয়েছে ভারত। ফলে ম্যাচটি একপ্রকার একপেশে বানিয়ে জিতেছে রোহিত শর্মার দল।
প্রথমে পাকিস্তানকে ১৯১ রানে অল আউট করে ৩০.৩ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় ভারত। ম্যাচটিকে একপেশে করতে ব্যাট হাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ৬৩ বলে ৬টি করে ছক্কা ও চার মেরে ৮৬ রান করে আউট হন তিনি। শ্রেয়াস আইয়ার করেন অপরাজিত ৫৩ রান।
১৯২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম বলেই চার মেরে রানের খাতা খোলেন হিটম্যান রোহিত শর্মা। তিনি পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে পাশ বদল করলে তৃতীয় বলে চার মেরে রানের খাতা খোলেন শুভমান গিলও।
দ্বিতীয় ওভারে হাসান আলীর বলে তিনটি চার মারেন গিল। পরের ওভারেও সেই ধারা অব্যাহত রাখতে গিয়ে শাহীন আফ্রিদির শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। শাহীনের অফ স্টাম্পের বাইরে করা শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে সজোরে ব্যাট চালান গিল। কিন্তু বলটি সোজা ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট অঞ্চলে দাঁড়িয়ে থাকা শাদাবের কাছে চলে গেলে লুফে নিতে ভুল করেননি তিনি।
শুরুতেই উইকেট হারানোর পর তিনে ব্যাট করতে নামেন বিরাট কোহলি। তিনি একপাশে ধরে খেলার চেষ্টা করেন। আরেক পাশে সমানে ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছিলেন হিটম্যান, চার-ছক্কার ফুলঝুরি ফোটান তিনি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোহলিও হাত খুলে খেলা শুরু করেন।
অষ্টম ওভারের চতুর্থ বলে রান আউটের একটি সম্ভাবনা জেগেছিল। তবে উইকেটে ডাইরেক্ট হিট না করায় সে যাত্রায় বেঁচে যান কোহলি। হারিস রউফের ফুল টস ডেলিভারিটি মিড অনের দিকে সজোরে পাঠান রোহিত। সঙ্গে সঙ্গেই ক্রিজের মাঝামাঝি চলে আসেন কোহলি। তবে বল সরাসরি ফিল্ডারের হাতে চলে যাওয়ায় খানিকটা দ্বিধায় পড়েন রোহিত। শেষপর্যন্ত রান নেয়ার জন্য দৌড় শুরু করেন। তবে দূর থেকে করা থ্রোটি ডাইরেক্ট স্ট্যাম্পে লাগলে বিদায় নেয়া লাগত কোহলির। সেটি অবশ্য হয়নি। পরের বলেই রউফকে ছক্কা হাঁকান তিনি।
তবে দশম ওভারের পঞ্চম বলে হাসান আলীর স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে আউট হন কোহলি। হাসানের গুড লেংথের বলটি লং অনের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি তিনি। মিড অনে দাঁড়িয়ে থাকা নওয়াজের ক্যাচটি নিতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি। ১৮ বল খেলে ৩টি চার মেরে ১৬ রান করে বিদায় নেন কোহলি।
একাদশ ওভারে আউট হতে হতে বেঁচে যান শ্রেয়াস আইয়ার। হ্যারিসের তৃতীয় ডেলিভারিতে ডিফেন্স করেন তিনি। কিন্তু বল ব্যাটের নিচে ড্রপ করে উইকেটের দিকে এগিয়ে যায়। তাড়াতাড়ি ব্যাট দিয়ে বলটি অন্যদিকে ঠেলে দেন শ্রেয়াস। ফলে সে যাত্রায় প্লে ডাউনের শঙ্কামুক্ত হন তিনি।
এর মধ্যেই ৩৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন রোহিত। তার কিছু পরই দলীয় সংগ্রহ ১০০ পার করে ভারত।
রোহিতের ৬৩ বলে ৮৬ রানের ঝড়ো ইনিংস থামান শাহীন আফ্রিদি। শাহীনের করা অফ কাটারে বিভ্রান্ত হয়ে মিড উইকেটে ইফতিখার আহমেদের হাতে ক্যাচ দেন রোহিত। বাকি সময়টা দেখেশুনে খেলে ভারতকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান শ্রেয়াস আইয়ার ও লোকেশ রাহুল।
এই ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানকে বেশ ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ইমাম উল হক। দুজনে মিলে যোগ করেছিলেন ৪১ রান। এর পরের দুই ব্যাটার পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান মোটামুটি লম্বা ইনিংস খেললেও বাকিরা শুধু আসা-যাওয়ার মাঝে ছিলেন।
দলের হয়ে অধিনায়ক বাবর আজম সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেছেন। রিজওয়ান ৪৯ রানে আউট হন। ইমাম-উল ৩৬ ও আব্দুল্লাহ শফিক ২০ রান করে সাজঘরে ফেরেন।
টস হেরে ভারতের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানকে এদিন ভালো শুরু এনে দেন আব্দুল্লাহ শফিক ও ইমাম-উল হক। অষ্টম ওভারের শেষ বলে সিরাজের গুড লেংথের ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে আউট হন ২৪ বলে ২০ রান করা আব্দুল্লাহ শফিক। এর কিছুক্ষণ পর ফিরে যান ইমাম-উলও। হার্দিকের ফুল লেংথের ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন পাকিস্তানের এই ব্যাটার।
দলীয় ৭৬ রানে দুই উইকেট পড়লে ইনিংসের হাল ধরেন বাবর ও রিজওয়ান। প্রতিটি বলের প্রতি সুবিচার করে ডট, এক-দুই ও চারের সাহায্যে রানের চাকা সচল রাখেন তারা। তবে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পরই ধৈর্য্য হারান বাবর। সিরাজের বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি।
এরপর পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে ধস নামে। রিজওয়ান একপাশ আগলে রাখলেও শেষপর্যন্ত তিনিও ফিরেছেন বোল্ড হয়ে। বুমরাহর বলে ব্যক্তিগত ৪৯ রানের মাথায় ফিরে যান তিনি। আর দলীয় শেষ ৩৬ রান সংগ্রহ করতে গিয়ে ৮ উইকেট হারায় পাকিস্তান। শেষমেষ ৪২.৫ ওভারে ১৯১ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস।
এদিন পেস ও স্পিন, দুই বিভাগেই নজরকাড়া বল করেছেন ভারতীয় বোলাররা। ফলও পেয়েছেন তেমনভাবেই। দুই ওভার বল করা শার্দুল ঠাকুর ছাড়া বাকি পাঁচ বোলারই পেয়েছেন দুটি করে উইকেট।
বোলারদের মধ্যে জসপ্রিত বুমরাহর ইকোনমি রেট ছিল চোখে পড়ার মতো। সাত ওভার বল করে মাত্র ১৯ রান দিয়েছেন তিনি। ফলে ম্যাচসেরার পুরস্কারটি উঠেছে তার হাতেই।