বড় লক্ষ্য তাড়া করতে ব্যাটিংয়ে যে আক্রমণাত্মক মনোভাব থাকা দরকার, তা দিয়েই শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু একপাশ থেকে একের পর এক দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে টপ-অর্ডার বিধ্বস্ত হলে আর জয়ের মনোভাব ধরে রাখতে পারেননি ব্যাটাররা। পরাজয়ের ব্যবধান কমানোটাই ছিল তখন লক্ষ্য।
ইংল্যান্ডের দেয়া ৩৬৫ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ১০ বল বাকি থাকতেই ২২৭ রানে গুটিয়ে গেছে টাইগারদের ইনিংস। ফলে ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে বাংলাদেশের।
বড় লক্ষ্য তাড়ার করার জন্য যেমন মারমুখী ব্যাটিংয়ের দরকার ছিল, তেমন শুরুই করেছিলেন লিটন দাস। প্রথম ওভারে তিনটি চার মেরে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং পারফরম্যান্সের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। তবে পরের ওভারে ঠিক উল্টোটা দেখিয়েছেন তানজিদ হাসান তামিম। দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে রিস টপলির আউটার লেংথের বলে স্পর্শ করেই বিপদে পড়ে যান তিনি। স্লিপে থাকা জনি বেয়ারস্টো ক্যাচটি লুফে নিলে ১ রান করে প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা দেন তানজিদ।
পরের তিন ব্যাটারের অবস্থাও ছিল তানজিদের মতোই। তানজিদ আউট হওয়ার পরের বলেই ডাক মেরে সাজঘরে ফিরেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তানজিদের মতো ভুল করে তার খেসারত দিয়ে আউট হন শান্ত।
টপলির অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বলটি পয়েন্টেট থাকা লিয়াম লিভিংস্টোনের হাতে চলে যাওয়ায় টপলিকে হ্যাটট্রিকের সুযোগ করে দিয়ে আউট হন শান্ত।
পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারিয়ে খানিকটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তাই চারে নেমে বেশ কয়েকটি বল ঠেকিয়ে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেন সাকিব। তবে আট বল খেলার পর টপলির ডেলিভারিতেই বোল্ড হয়ে যান টাইগার অধিনায়ক। সাকিব ৯ বলে ১ রান করে যখন ফিরছেন, স্কোরবোর্ডের অবস্থা তখন তিন উইকেট হারিয়ে ২৬ রান।
পাঁচে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ অবশ্য চার মেরে রানের খাতা খোলেন। তবে তিনিও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ওকসের ডেলিভারি সামনের পায়ে ভর দিয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হয়ে যান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করলেও এদিন তিনি ফিরেছেন ৮ রানে।
বাংলাদেশের ব্যাটাররা আসা-যাওয়ার মিছিলে মধ্যেও একপ্রান্ত আগলে রেখে রানের গতি ঠিক রেখেছিলেন লিটন। শুরু থেকেই দেখেশুনে একের পর এক আত্মবিশ্বাসী শট খেলছিলেন এই ওপেনার। এর মধ্যেই ৩৮ বলে নিজের অর্ধশতক পূর্ণ করে ফর্মে ফেরার আভাস দেন তিনি।
মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে শুরুর বিপর্যয় সামাল দেন লিটন। দারুণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছিলেন তিনি। তবে তিন অঙ্কে পৌঁছানোর আগে আবারও অফ স্টাম্পের বাইরের স্লোয়ার ডেলিভারিতে খোঁচা দিয়ে বাটলারকে কাচ দেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ওকসের বলে ৭৬ রান করে আউট হন লিটন।
লিটন ফিরে গেলে হাফ সেঞ্চুরি পার করেন মুশফিক। তবে হাফ সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। টপলির বলে কাট করতে গিয়ে তিনি ডিপ থার্ডম্যানে থাকা রশিদের হাতে ধরা পড়েন। মুশফিক ৫১ রান করে ফিরলে ৩১ ওভার শেষে ১৬৪ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর শেখ মেহেদীকে নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তৌহিদ হৃদয়। তবে ৪০তম ওভারে লিয়াম লিভিংস্টোনের স্পেলের প্রথম বলেই কট বিহাইন্ড হয়ে যান তৌহিদ। সাজঘরে ফেরার আগে ৬১ বল খেলে ৩৯ রান তোলেন তিনি।
এরপর রশিদ খানের গুগলিতে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন শেখ মেহেদী। ৩২ বল খেলে ১৪ রান করতে সমর্থ হন তিনি। তার পর উইকেট ছেড়ে পিছিয়ে যাওয়া শরিফুলকে ইয়র্কার দেন মার্ক উড। ফলে বলটি ঠেকাতে না পেরে স্টাম্প উপড়ে দেন উড। এরপর স্যাম কারানের বলে তাসকিন বোল্ড হয়ে গেলে ২২৭ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।
ইংল্যান্ডের হয়ে একাই চার উইকেট নিয়েছেন রিস টপলি। ক্রিস ওকস নিয়েছেন দুই উইকেট। আর স্যাম কারান, আদিল রশিদ, মার্ক উড ও লিয়াম লিভিংস্টোন পেয়েছেন একটি করে উইকেটের দেখা।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমেই বাংলাদেশি বোলারদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়তে শুরু করেন ইংলিশ ব্যাটাররা। প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৬১ রান তোলেন দুই ইংলিশ ওপেনার। এর কিছু পর ৩৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ডাউইড মালান। তারপর ৫৪ বলে নিজের অর্ধশতক পূর্ণ করেন জনি বেয়ারস্টো।
নিজের শততম ওয়ানডে ম্যাচে নেমে বাংলাদেশের বিপক্ষে অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন বেয়ারস্টো। তবে অর্ধশতকের পর বেশিক্ষণ স্থায়ী হননি এই ওপেনার।
বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন সাকিব। সাকিবের একটু দ্রুতগতির লেংথ বলে লাইন মিস করে বোল্ড হন ৫৯ বলে ৫২ রান করা বেয়ারস্টো।
বেয়ারস্টো ফেরার পর ক্রিজে থিতু হন জো রুট। এর মাঝে ৯১ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন মালান। আর ৪৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন রুট। সেঞ্চুরির পর আরও বেশি হাত খুলে খেলা শুরু করেন মালান। পরে ১০৭ বলে ১৪০ রান করে আউট হন তিনি। শেখ মেহেদীর টসড আপ ডেলিভারিতে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন এই ওপেনার।
এরপর জস বাটলার ক্রিজে এসেই আক্রমণামত্মক ব্যাটিং শুরু করেন। তবে মাত্র ১০ বলে ২০ রান করে ইন সাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়ে যান তিনি। তার উইকেটটি নেন শরিফুল ইসলাম। এরপর বোলিংয়ে এসে পরপর দুই বলে রুট ও লিয়াম লিভিংস্টোনকে ফেরান শরিফুল।
৪১.৫তম ওভারে লাইনে থাকা বল তুলে মারতে গিয়ে টপ এজ হয়ে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেন রুট। ৬৮ বলে ৮২ রানের মাথায় থামেন তিনি। পরের বলটি ডিফেন্স করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন লিভিংস্টোন
এর পর থেকে ইংল্যান্ডের রানের গতি কমে আসে। মারকুটে ব্যাটার হ্যারি ব্রুকও এরপর বেশিদূর এগোতে পারেননি। শেখ মেহেদীর অফ স্টাম্পের বাইরের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে লিটন দাসের তালুবন্দি হন তিনি। তার পর দেখেশুনে খেরতে থাকা স্যাম কারানও আউট হয়েছেন মেহেদীর বলে। অফ স্টাম্পের বাইরের বল লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন তিনি। দারুণ এক ডাইভে কারান সাজঘরে পাঠান নাজমুল হোসেন শান্ত।
আদিল রশিদও বড় শট খেলতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে শান্তকে ক্যাচ দেন। শেষ ওভারে তাসকিনের বলে ক্রিস ওকস ফেরার পর আট ইউকেট হারিয়ে ৩৬৪ রান করে ইংল্যান্ড।
মেহেদী ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার। ৩টি উইকেট নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। একটি উইকেট পেয়েছেন সাকিব আল হাসান ও তাসকিন আহমেদ।
দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ১০৭ বলে ১৪০ রান করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন ডাউইড মালান।