নিউজিল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে সোমবারের বাইশ গজের বিশ্বকাপ যুদ্ধে পাদপ্রদীপে থাকবেন অলরাউন্ডাররাই। শক্তির বিচারে দু’দলের ব্যবধান অনেক। বতর্মান ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে এটাকে আমি অসম ব্যবধানই বলব। এর কারণ হলো- নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং-বোলিং খুবই বিধ্বংসী। সে তুলনায় নেদারল্যান্ডস অনেক পিছিয়ে।
তবে একটা জায়গায় দারুণ মিল আছে দু’দলের। সেটি হলো দু’দলেই অলরাউন্ডারের ছড়াছড়ি। নিউজিল্যান্ড দলে পাঁচ ও নেদারল্যান্ডস দলে রয়েছেন ছয় অলরাউন্ডার। বেশ কিছু কার্যকরী ব্যাটিং, বোলিং অলরাউন্ডার থাকায় দু’দলই বাড়তি সুবিধা পাবে। তাদের ‘গেম প্ল্যান’ সহজ হবে। এ ছাড়া কৌশল নির্ধারণে অনেক অপশন থেকে সেরাটি বেছে নেয়ার সুযোগ থাকছে।
অবশ্য খেলার অভিজ্ঞতা ও ফর্ম, বড় টুর্নামেন্টে বড় দলের বিপক্ষে চাপ নিয়ে খেলার মানসিকতা, বিপর্যস্ত পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা, কঠিন অবস্থায় কার্যকর সিদ্ধান্ত নেয়ার দূরদর্শিতা, মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে অটল থাকার প্রবণতা- এসব টেকনিক্যাল দিক বিবেচনা করলে নিউজিল্যান্ডের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকবে নেদারল্যান্ডস।
নিউজিল্যান্ডের কেমন অ্যাটাকিং ব্যাটিং- সেটি আমরা বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই দেখেছি। তাদের ব্যাটিং স্তম্ভের মূল শক্তি কেন উইলিয়ামসনকে ছাড়াই বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক ‘ক্ল্যাসিক’ জয় পেয়েছে তারা।
উইলিয়ামসনের অনুপস্থিতিতে কখনও ছয়, কখনও ৭ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা অলরাউন্ডার রাচিন রবিন্দ্র ওপেনিংয়ে সুযোগ পেয়েই তাণ্ডব চালিয়েছেন। তার খুনে মেজাজের ব্যাটিং স্টাইল দলের অন্যদের অনুপ্রেরণা জোগাবে। ডেভন কনওয়েও ধ্বংসাত্মক ব্যাটিং উপহার দিয়েছেন।
গত ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে অনেক গভীরতা ছিল। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সোমবার সেটি না-ও দেখা যেতে পারে। কেননা লম্বা টুর্নামেন্ট। ব্যাটারদের সতেজ রাখতে হবে। বরং ডাচদের বিপক্ষে বোলিংয়ে শক্তি বাড়াতে পারে কিউইরা, যাতে কম রানে আটকে দিয়ে সহজ জয় তুলে নিতে পারে। বেঞ্চের খেলোয়াড়দের বাজিয়ে দেখার সুযোগও রয়েছে। টিম সাউদি ইনজুরির কারণে একাদশের বাইরে। যদি ফেরেন তাহলে নিজেকে ফিরে পেতে চাইবেন এই গতি তারকা।
অপরদিকে হারানোর কিছু নেই ডাচদের। গত ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হারলেও শাহিন শাহ আফ্রিদি, হ্যারিস রউফ, হাসান আলিদের সামনে যে পরীক্ষা দিয়েছে তারা, সেই অভিজ্ঞতা কাজে দেবে নেদারল্যান্ডসের। তাদের দলের প্রধান অস্ত্র বাস ডি লিড। এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার একাই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। তার বৈচিত্র্যময় বোলিং আর স্টাইলিশ ব্যাটিং দেখার মতো। আগের ম্যাচে যে একটি ডেলিভারিতে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে বোল্ড করলেন তিনি, তা ছিল অসাধারণ। বল বুঝতেই পারেননি পাকিস্তানি ব্যাটার। ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক গলে বল সোজা চলে যায় স্টাম্পে।
ডি লিডের সামনে কিউইরাও বেকায়দায় পড়তে পারেন। পেসার ভন বেক, ভন মেকারেনের বোলিংও হতে পারে বিপজ্জনক। তাদের সঙ্গে আরিয়ান দত্ত, কলিন আকারম্যানের স্পিনও কিউইদের জন্য মরণফাঁদ তৈরি করতে পারে।
এদিকে হায়দরাবাদের যে রাজিব গান্ধী স্টেডিয়ামে ম্যাচটি হবে, ওই মাঠের উইকেটের আচরণ আগে অনেক বৈচিত্র্যময় দেখা গেছে। শুরুর দিকে পেসাররা ভালো সহায়তা পান। স্পিনও ধরে। তবে এই মাঠটি হাই-স্কোরিংয়ের একটি মাঠ। অনেক বড় মাঠ। বল ব্যাটে আসবে, প্রচুর রান উঠবে। চলতি বছর হায়দরাবাদের এ মাঠেই ভারতীয় ওপেনার শুভমান গিল ওয়ানডে ক্রিকেটে ২০৮ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন। কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকারও ওয়ানডেতে ১৭৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন এ মাঠেই। কাজেই ব্যাটিংয়ে দক্ষতা দেখাতে পারলে স্কোর বোর্ডে রান জমা হবে দ্রুতই।
এই মাঠে নিউজল্যান্ডের খেলার অভিজ্ঞতা আছে। এ ছাড়া তাদের খেলায়াড়রা আইপিএল খেলায় সবকিছুই হাতের তালুর মতো চেনা। তবে নেদারল্যান্ডসও এ মাঠে আগে খেলেছে। অতীত অভিজ্ঞতা কাজে দেবে তাদেরও।
সব শেষে একটি কথাই বলব, বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে ছোট-বড় বলতে কোনো দল নেই। সবাই যোগ্যতা প্রমাণ করেই এখানে এসেছে। নিউজিল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস দলের মধ্যে শক্তি ও সামর্থ্যের ব্যবধান অনেক হলেও একটি উপভোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ উপহার দেবে দুই দল- এমন প্রত্যাশা থাকবে।