দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা যেদিন ক্ষেপে যান, সেদিন বিপক্ষ দলের ঘোর বিপদ- প্রত্যেক ক্রিকেটপ্রেমীই এ কথা জানেন। প্রোটিয়া ব্যাটাররা রণমূর্তি ধারণ করলেই রেকর্ড বই নতুন করে লিখতে বসতে হয়। আজ বিশ্বকাপের ম্যাচেও হয়েছে তেমনটি।
দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের প্রথম ইনিংসের পর রেকর্ড বইয়ে দশটি পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে পাঁচটি রেকর্ড ভাঙা হয়েছে।
চলুন জেনে নিই রেকর্ড বইয়ে কী কী পরিবর্তন আনলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা।
বিশ্বকাপে এক ইনিংসে তিন সেঞ্চুরি
প্রথম কোনো বিশ্বকাপ ম্যাচে এক ইনিংসে তিন ব্যাটারের সেঞ্চুরির করার বিরল রেকর্ড গড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ শতকের দেখা পান কুইন্টন ডি কক (১০০), রাসি ভান ডার ডুসেন (১০৮) ও আইডেন মার্করাম (১০৬)।
বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরি
আজ বিশ্বকাপে মাত্র ৪৯ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন আইডেন মার্করাম। এটিই এখন ওয়ানডে বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। এর আগের রেকর্ডটি ২০১১ সালের বিশ্বকাপে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেদিন ৫০ বলে শতক তুলে নিয়েছিলেন আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়েন।
বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির তৃতীয় রেকর্ডটি অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের। ২০১৫ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫১ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি।
চতুর্থ রেকর্ডটিও দক্ষিণ আফ্রিকার এবং ২০১৫ বিশ্বকাপেই। সিডনিতে এবি ডি ভিলিয়ার্স সেদিন ক্যারিবিয়ান বোলারদের পিটিয়ে মাঠের সবদিক দিয়ে চার-ছক্কার ফুল ফোটানোর কথা নিশ্চয়ই মনে আছে ক্রিকেট ভক্তদের।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি মার্করামের
বিশ্বকাপে ৪৯ বলে মার্করামের এই সেঞ্চুরিটি দ্রুততম হলেও এক দিনের ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের মধ্যে মার্করাম তৃতীয়।
ওয়ানডেতে দ্রুততম সেঞ্চুরিটি ডি ভিলিয়ার্সের দখলে। ২০১৫ সালে জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৩১ বলে শতক হাঁকিয়েছিলেন মিস্টার ৩৬০।
এর পরের রেকর্ডটি মার্ক বাউচারের। ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪৪ বলে সেঞ্চুরি করে এই কীর্তি গড়েন বাউচার। আর বিশ্বকাপে ৫২ বলে ডি ভিলিয়ার্সের সেঞ্চুরিটি প্রোটিয়া ব্যাটার হিসেবে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস
দক্ষিণ আফ্রিকার ৪২৮ রানের এই ইনিংসটি এখন বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস হিসেবে রেকর্ড বইয়ে নাম লিখিয়েছে। ২০১৫ বিশ্বকাপে পার্থে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ছয় উইকেটে ৪১৭ রানের পুঁজি পায় অস্ট্রেলিয়া। সেটিই এতদিন বিশ্বকাপে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড ছিল।
রেকর্ড বুকে তিনে রয়েছে ভারতের ৪১৩ রানের ইনিংসটি। ২০০৭ বিশ্বকাপে বারমুডার বিপক্ষে ওই রান তুলেছিলেন ভারতীয় ব্যাটাররা।
চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানেও দক্ষিণ আফ্রিকার দুটি ইনিংস রয়েছে। ২০১৫ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৪১১ রান তুলেছিল প্রোটিয়ারা। ওই বিশ্বকাপেই উইন্ডিজদের বিপক্ষে ৪০৮ রান করে তারা।
দক্ষিণ আফ্রিকার চতুর্থ সর্বোচ্চ সংগ্রহ
একদিনের ক্রিকেটে বেশ কয়েকটি বড় ইনিংস খেলার ইতিহাস আছে দক্ষিণ আফ্রিকার। আজকের পুঁজিটি তাদের বড় পুঁজিগুলোর মধ্যে চতুর্থ।
দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ৪৩৯ রানের। ২০১৫ সালে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দুই উইকেটে ওই রান তোলেন প্রোটিয়া ব্যাটাররা।
দ্বিতীয়টি ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই বিখ্যাত রান তাড়ার গল্প। অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ৪৩৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৩৮ রান করে ম্যাচটি দুই উইকেটে জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০০০ সালের দশকে ক্রিকেট দেখা প্রতিটি দর্শকের মনে গেঁথে আছে সেই ম্যাচের স্মৃতি।
তৃতীয় সংগ্রহটিও ৪৩৮ রানের। তবে সেটি ভারতের বিপক্ষে ২০১৫ সালে।
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪ শতাধিক ইনিংস প্রোটিয়াদের
আজকের ইনিংসটি নিয়ে বিশ্বকাপে মোট তিন ম্যাচে ৪০০ পার করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তারাই বিশ্বকাপে একমাত্র দল হিসেবে তিনবার এই কীর্ত গড়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া একবার করে চারশ’ পার করার রেকর্ড আছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার।
ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪ শতাধিক ইনিংস
একদিনের ক্রিকেটেও সবচেয়ে বেশি সংখ্যক চারশ’ পার করা ইনিংস দক্ষিণ আফ্রিকার। এ পর্যন্ত তারা আটটি চার শতাধিক রানের ইনিংস খেলেছে।
এ তালিকায় ঠিক তাদের পেছনে ভারত। ছয়টি চারশ’ পার করা ইনিংস রয়েছে তাদের। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইংল্যান্ডের রয়েছে পাঁচটি ৪০০ রান পার করা ইনিংস।
এ ছাড়া দুবার করে চার শতাধিক রান করেছে অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কা।
বিশ্বকাপে সবচেয়ে খরুচে শ্রীলঙ্কান বোলার পাথিরানা
দক্ষিণ আফ্রিকার নানা রেকর্ড গড়ার ইনিংসে লজ্জার রেকর্ডটি গড়েছেন মাথিশা পাথিরানা। বিপুল রানের এমন ইনিংসে অবশ্য বিপক্ষ দলের কোনো এক বোলারের কপাল পোড়েই। সেদিক থেকে আজ ভুগেছেন পাথিরানা।
বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া ম্যাচেই ১০ ওভারের স্পেলে ৯৫ রান দিয়েছেন তিনি। শ্রীলঙ্কান বোলার হিসেবে কোনো বিশ্বকাপ ম্যাচে এটি সর্বোচ্চ রান খরচের রেকর্ড।
এর মাধ্যমে টেস্টের ইতিহাসে প্রথম বল করা শ্রীলঙ্কান মিডিয়াম পেসার আশান্থা দেল মেলের লজ্জা নিবারণ করেছেন তিনি। ১৯৮৭ সালে করাচিতে আশান্থার স্পেলে ৯১ রান নিয়েছিলেন উইন্ডিজ ব্যাটাররা।
এছাড়া ২০১৯ বিশ্বকাপে নুয়ান প্রদীপের বলে ৮৮ রান তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে ৮৭ রান দিয়েছিলেন থিসারা পেরেরা।
ডি ককের ডাবল
দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটরক্ষক হিসেবে বিশ্বকাপে দুই সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন কুইন্টন ডি কক। এর আগে উইকেটরক্ষক হিসেবে একটি শতক রয়েছে এবি ডি ভিলিয়ার্সের।
২০১১ বিশ্বকাপেই ওই দুটি সেঞ্চুরি করেন ডি ভিলিয়ার্স ও ডি কক। আজকে ডি ভিলিয়ার্সকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি।
বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সে সেঞ্চুরি ডুসেনের
দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বয়সে শতকের দেখা পেয়েছেন রাসি ভান ডার ডুসেন। ৩৪ বছর ২৪২ দিন বয়সে সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি।
তার উপরে রয়েছেন ফাফ ডু প্লেসি। গত বিশ্বকাপে ৩৫ বছরের সাত দিন বাকি থাকতে সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। ম্যানচেস্টারে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেদিন শতকের দেখা পান ডু প্লেসি।
এ ছাড়া ৩১ বছর ৩৩৭ দিন বয়সে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন হাশিম আমলা। ২০১৫ বিশ্বকাপে তিনি এই কীর্তি গড়েন। ২০০৭ বিশ্বকাপে ৩১ বছর ১৫১ দিন বয়সে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকান জ্যাকস ক্যালিস। ২০১৫ বিশ্বকাপে ৩১ বছর ১০ দিন বয়সে শতরান করেন ডি ভিলিয়ার্স।