ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবিন্দ্র খেললেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। বিস্ফোরক ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখিয়ে দুজনই পেলেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের দেখা। এ দুই কীর্তিমান সেঞ্চুরিয়ানের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের সুবাদে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ৯ উইকেটে হারাল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে।
দুর্দান্ত এক জয় দিয়ে বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করল কিউইরা। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৮২ রান করে ইংলিশরা। জবাবে এক উইকেট হারিয়ে ৮২ বল হাতে রেখেই কাঙ্ক্ষিত জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড।
বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে শুক্রবার পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ডস। বেলা আড়াইটায় এ ম্যাচের ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ বেতার।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এমন সহজ জয় পাবে নিউজিল্যান্ড, সেটি হয়তো ভাবেনি কেউই। অকল্পনীয় ব্যাটিং উপহার দিয়েছেন কনওয়ে ও রাচিন। ইংলিশ বোলারদের তুলাধোনো করে মাটিতেই যেন নামিয়ে দিলেন এই দুই ব্যাটার।
গত বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমিয়ে তুলেছিল কিউইরা। ফাইনাল ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত সুপার ওভারে গিয়ে গড়ায়। সুপার ওভারে নিউজিল্যান্ডকে হতাশ করে শিরোপা জয়ের উৎসব করে ইংলিশরা।
চার বছর পর আবার বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হয় দল দুটি। গত বিশ্বকাপের ফাইনালে হারার প্রতিশোধ নেয় নিউজিল্যান্ড। উপভোগ্য ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখিয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপে জয় তুলে নেয় তারা।
এ জয়ের দুই নায়ক হলেন কনওয়ে ও রাচিন। এই দুই ব্যাটার রেকর্ডের পাতা ওলট-পালট করে দিয়েছেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে নিউজিল্যান্ডের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার নতুন রেকর্ড গড়লেন রাচিন। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দেশের পক্ষে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরি পূর্ণ করার রেকর্ডও করে নিলেন এ ব্যাটিং অলরাউন্ডার। মাত্র ২৩ বছর ৩২১ দিনে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তিনি।
রাচিন ভেঙে দিয়েছেন নাথান অ্যাস্টলের রেকর্ড। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে ২৪ বছর ১৫২ দিন বয়সে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন নাথান। তিনি সেঞ্চুরি করে আউট হলেও রাচিন ১২৩ রানে অপরাজিত থাকেন। ৯৬ বলে চার-ছক্কার বৃষ্টি ছড়িয়ে অনবদ্য এ ইনিংস খেলেন তিনি। অন্যদিকে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা কনওয়ে চলতি বছর ওয়ানডেতে চতুর্থ সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব দেখান। ১২১ বলে ১৫২ রানের ইনিংস উপহার দেন তিনি।
কনওয়ে ও রাচিন মিলে ২৭৩ রানের লম্বা জুটি গড়েন। এ জুটিও রেকর্ড গড়েছে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড গড়েছেন তারা। এর আগে দ্বিতীয় উইকেটে গাপটিল ও উইল ইয়ং ২০৩ রানের জুটি গড়েছিলেন।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই অনেক রেকর্ড গড়ে বিশ্ব চাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দেয় নিউজিল্যান্ড। কনওয়ে ও রাচিন মিলে যে ব্যাটিংয়ে তাণ্ডব চালালেন, এতে বিশ্বকাপের শুরুতেই বড় বার্তা দিলেন কিউইরা। তিন শর কাছাকাছি রানের লক্ষ্য মামুলি বানিয়ে যে জয় নিয়েছেন তারা, সামনের ম্যাচগুলোয় তা আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে।
২৮৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই এক উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। এরপর আর উইকেট হারাতে হয়নি তাদের। কনওয়ে ও রাচিন মিলে দলকে সহজ জয় এনে দেন।
এর আগে জো রুটের হাফ সেঞ্চুরি ও লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে তিন শর কাছাকাছি রান করে ইংল্যান্ড। রুট সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেন।
ভারতের আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন নিউজিল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক টম ল্যাথাম। পেসার ট্রেন্ট বোল্টের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের প্রথম বলে কোনো রান নিতে না পারলেও পরের ডেলিভারিতে লং লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকান ইংল্যান্ডের ওপেনার জনি বেয়ারস্টো। ওভারে আরও একটি চারে দলকে ১২ রান এনে দেন তিনি।
প্রথম ওভারে ১২ রান এলেও পরের দিকে রান তোলার গতি কমে যায় ইংল্যান্ডের। সাত ওভার শেষে ৩৯ রান পায় ইংলিশরা। অষ্টম ওভারের চতুর্থ বলে আরেক ওপেনার ডেভিড মালানকে ১৪ রানে শিকার করে নিউজিল্যান্ডকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার ম্যাট হেনরি।
ভালো শুরুর পরও বেশি দূর যেতে পারেননি বেয়ারস্টোও। ১৩তম ওভারে স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের বলে আউট হওয়ার আগে চারটি চার ও একটি ছক্কায় ৩৫ বলে ৩৩ রান করেন বেয়ারস্টো।
ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে খেলতে না পারা বেন স্টোকসের জায়গায় ইংল্যান্ড একাদশে সুযোগ পেয়ে মারমুখী মেজাজে ইনিংস শুরু করেন হ্যারি ব্রুক।
১৭তম ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে আসা নিউজিল্যান্ড স্পিনার রাচিন রবিন্দ্রর করা তৃতীয় ও চতুর্থ বলে বাউন্ডারি এবং পঞ্চম বলে ছক্কা মারেন ব্রুক, তবে ওভারের শেষ বলে ডেভন কনওয়েকে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে চারটি চার ও একটি ছক্কায় ১৬ বলে ২৫ রান করেন ব্রুক।
ব্রুকের বিদায়ে উইকেটে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মইন আলি। ওকেশনাল অফ স্পিনার গ্লেন ফিলিপসের বলে বোল্ড হন ১৭ বলে ১১ রান করা মইন। এতে ১১৮ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
বড় জুটির লক্ষ্যে পঞ্চম উইকেটে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন জো রুট ও অধিনায়ক জস বাটলার। তাদের হাফ সেঞ্চুরির জুটিতে দুই শর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড।
৩৪তম ওভারে বাটলারকে ৪৩ রানে থামিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ব্রেকথ্রু এনে দেন হেনরি। ৪২ বলের ইনিংসে দুটি করে চার-ছক্কা হাঁকান বাটলার। জুটিতে ৭২ বলে ৭০ রান যোগ করেন রুট-বাটলার। এ জুটিতেই ৫৭ বল খেলে ওয়ানডেতে ৩৭তম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান রুট।
বাটলারের বিদায়ের পর লিয়াম লিভিংস্টোনকে নিয়ে আবারও জুটি গড়ার চেষ্টা করেন রুট, কিন্তু সেটি বড় হতে দেননি বোল্ট। লং অফে হেনরিকে ক্যাচ দিয়ে ২০ রানে থামেন লিভিংস্টোন। জুটিতে ৩৩ বলে ৩৩ রান যোগ করেন লিভিংস্টোন-রুট।
হাফ সেঞ্চুরির পর ইনিংস বড় করার চেষ্টারত রুট ৪২তম ওভারে ফিলিপসের ডেলিভারিতে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন, তবে আউট হওয়ার আগে চারটি চার ও এক ছক্কায় ৮৬ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেন রুট।
দলীয় ২২৯ রানে সপ্তম ব্যাটার হিসেবে রুট ফেরার পর লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের কাছ থেকে ৫৩ রান পায় ইংল্যান্ড। শেষ উইকেটে ২৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩০ রান তোলেন আদিল রশিদ ও মার্ক উড। এতে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৮২ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড।
লোয়ার অর্ডারে স্যাম কারান ১৪, ক্রিস ওকস ১১, আদিল রশিদ অপরাজিত ১৫ এবং মার্ক উড অনবদ্য ১৩ রান করেন। নিউজিল্যান্ডের হেনরি ৪৮ রানে তিনটি, স্যান্টনার ৩৭ রানে ও ফিলিপস ১৭ রানে দুটি করে উইকেট নেন। ম্যাচসেরার পুরস্কার পান রাচিন রবিন্দ্র।