অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপ ঘুরে আবার উপমহাদেশে ফিরেছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। সবশেষ ২০১১ সালে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার মাটিতে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৯ সালে এ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিল ইংল্যান্ড ও ওয়েলস। এক যুগ পর আবার উপমহাদেশে বসেছে ক্রিকেটের এই বৈশ্বিক আসর, তবে এবার এককভাবে বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে ভারত। অনেক প্রতীক্ষার পর আজ থেকে ওয়ানডে বিশ্বকাপের এই ১৩তম আসরের মাঠের যুদ্ধ শুরু হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় আহমাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে ক্রিকেট রাজত্বের লড়াই শুরু হবে। এই একই স্টেডিয়ামে আগামী ১৯ নভেম্বর ফাইনাল ম্যাচের মাধ্যমে বিশ্বকাপের সমাপনী টানবে।
করোনা মহামারির পর এই প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত চার বছরে করোনার থাবা, অনেক তারকা ক্রিকেটারের অবসর, নতুনদের আগমন, বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটের উত্থান-পতন দেখেছে বিশ্ব, তবে এসব ছাপিয়ে ক্রিকেটের নির্মল বিনোদন উপভোগের মাহেন্দ্রক্ষণ আবার এসেছে। এবারের বিশ্বকাপে হট ফেভারিট তকমা এঁটেছে স্বাগতিক ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান।
অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকের মতে, বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের দৌড়ে ঘরের মাঠে কোনোভাবেই ভারতকে আটকানো যাবে না। আবার ইংল্যান্ড যদি শিরোপা ধরে রাখে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। পাকিস্তান দল ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ হলেও তাদের হিসাবের বাইরে রাখা যাচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়া দলটিও অনেক ব্যালান্সড। এই পরাশক্তি দলগুলোর ভিড়ে বাংলাদেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন ক্রিকেট গবেষকরা। বিশ্ব তারকা সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন দলটি বিশ্বকাপে বড় চমক দিতে পারে। যদিও অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবালকে ছাড়াই বিশ্বকাপে খেলতে গেছে বাংলাদেশ। ফিটনেস সমস্যার কারণে দল থেকে বাদ পড়েছেন তামিম। এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এ বিতর্ক পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ থাকলেও দলের অধিকাংশ সদস্য তরুণ। তারুণ্যদীপ্ত বাংলাদেশ দলটি সেমিফাইনালে খেলার দৃঢ় মনোবল নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে গেছে। এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা। প্রতিবেশী দেশে বিশ্বকাপ আয়োজন হওয়ায় নিজ দেশের মতো প্রায় একই রকম কন্ডিশনে খেলার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ। তাই অতীত সাফল্য ছাড়িয়ে নতুন ইতিহাস গড়ার লক্ষ্য টাইগারদের।
এই বিশ্বকাপ হবে প্রায় দেড় মাসের বেশি সময়ব্যাপী। এই লম্বা সময় খেলার চ্যালেঞ্জ থাকবে প্রতিটি দলের। এবারও মোট ১০টি দেশ বিশ্বকাপে খেলছে। প্রত্যেক দল পরস্পরের বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে। অর্থাৎ প্রাথমিক পর্বে প্রতিটি দলকে ৯টি করে ম্যাচ খেলতে হবে। এরপর সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ রয়েছে। এ জন্য প্রচুর ট্রাভেল, ভিন্ন ভিন্ন মাঠে খেলা- থাকবে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার মতো আরও অনেক চ্যালেঞ্জ। অবশ্য উপমহাদেশের উইকেটে ভালো খেলার প্রত্যাশায় ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও আফগানিস্তান দল। প্রায় একই রকম কন্ডিশন, উইকেট, দর্শকের উপস্থিতি- সব মিলিয়ে ‘অ্যাডভান্টেজ’ পাবে এশিয়ার দেশগুলো। উপমহাদেশের দলগুলোর মধ্যে ভারত-পাকিস্তানের লড়াই বিশ্বকাপে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের ক্রিকেটযুদ্ধের সময় পুরো পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, তবে এশিয়ার বাইরের দেশগুলোও বিশ্বকাপ জয়ের মিশন নিয়েই ভারতে এসেছে। বিশ্বকাপের আগে উপমহাদেশের মাঠে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডসের খেলোয়াড়রা প্রচুর ম্যাচ খেলেছে। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সফল হতে চাইবেন তারা। স্পিন খেলার যে চিরায়ত দুর্বলতা এশিয়ার বাইরের দেশগুলোর, সেটি এবার তেমন দেখা নাও যেতে পারে। কেননা আইপিএল, দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বেশি হওয়ায় শক্তি ও দুর্বলতার ব্যবধান কমে এসেছে। ভারতের উইকেটে প্রচুর রান উঠবে- এটা প্রত্যাশিত। জয় পেতে হলে বড় স্কোরই গড়তে হবে। এখনকার ক্রিকেট হলো ধ্বংসাত্মক ক্রিকেটের মহড়া। তিনশ’, সাড়ে তিনশ’ রান যেন হয়ে গেছে মুড়ি-মুড়কির মতো। ফলে বিশ্বকাপ হবে ব্যাটারদের। তবে অনেকের মতে, বিশ্বকাপ শিরোপা জিততে বোলাররা বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন। এবারের বিশ্বকাপে খেলছে না দুইবারের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে। টেস্ট খেলুড়ে আইসিসির পূর্ণ সদস্য এই দুই দেশের অনুপস্থিতি, বিশ্বকাপ কিছুটা হলেও আমেজ হারিয়েছে। বিশ্বকাপে সরাসরি খেলছে স্বাগতিক ভারত, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তান। বাকি দুই দল শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডস বাছাই পর্ব খেলে বিশ্বকাপের মূল পর্বে এসেছে। যাই হোক, ১০ দলের বিশ্বকাপ লড়াই দেখার জন্য এখন উন্মুখ হয়ে আছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
এদিকে ভারতের মাটিতে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপে বৃষ্টিও চোখ রাঙাতে পারে। এরই মধ্যে প্রস্তুতি ম্যাচে সেই আভাস পাওয়া গেছে। বেশ কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচ বৃষ্টির বাধায় পরিত্যক্ত হয়েছে। ফলে বৈরী আবহাওয়ার বিষয়টিও থাকছে, তবে বিশ্বকাপের আয়োজনের কোনো কমতি রাখেনি ভারত। সফল একটি বিশ্বকাপ উপহার দেয়ার প্রত্যয় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই)। সব দলের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা। জয় হোক ক্রিকেটের।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলা