তামিম ইকবালের হঠাৎ জরুরি সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণায় শুরু হয় নানা জল্পনা-কল্পনা। অনেকেই ধারণা করছিলেন, অধিনায়কত্ব ছাড়তে যাচ্ছেন টাইগার ক্যাপ্টেন। অবসরের ঘোষণা আসতে পারে বলেও ধারণা করছিলেন কেউ কেউ।
বৃহস্পতিবার ডাকা এ সংবাদ সম্মেলনের স্থান ও সময় নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয় প্রথমে। শুরুতে দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলনের কথা জানানো হয়, স্থান হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে টিম হোটেল রেডিসন ব্লুর কথা। বেলা পৌনে ১২টার দিকে ধোঁয়াশা কাটে, নিশ্চিত হওয়া যায় সংবাদ সম্মেলন হবে নগরীর হোটেল টাওয়ার ইনে, বেলা দেড়টায়।
তবে নির্ধারিত সময়ের ২০ থেকে ২৫ মিনিট আগেই হাজির হন তামিম। হাজির হওয়ার ৭ থেকে ৮ মিনিটের মধ্যেই শুরু করেন কথা বলা। কথা বলার মধ্যে অন্তত চার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তার কান্না ছুঁয়ে যায় উপস্থিত সবাইকে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই অবসরের ঘোষণা দেন ওয়ানডে অধিনায়ক। বলেন, ‘গতকাল ছিল আমার শেষ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি, এখনই। এটা হঠাৎ সিদ্ধান্ত না, আমি এটা নিয়ে ভেবেছি। এটার ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে, আামর এখানে বলার দরকার আছে বলে মনে করি না।’
তামিম বলতে থাকেন,‘এটা না যে আমি হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা নিয়ে কয়েকদিন ধরে কথা বলছিলাম, এমকি আমার পরিবারের সদস্যদের সাথেও। আমার মনে হয় এটা আমার জন্য আন্তির্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সঠিক সময়। আমার মনে হয় যারা প্রাপ্য তাদের ধন্যবাদ জানানো প্রয়োজন।
‘আমি সবসময় একটা কথা বলেছি যে, আমি খেলাটি খেলেছি...।’
কথা শেষ না করে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই ক্রিকেটার। প্রায় ৪৫ সেকেন্ড পর নিজেকে সামলে নিয়ে ফের বলা শুরু করেন। টাইগার ক্যাপ্টেন বলেন, ‘আমি সবসময় বলেছি, আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য।’
বাবার স্বপ্নের কথা বলে আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ফের নিজেকে সামলে তামিম বলেন, ‘আমি সবসময় বলেছি যে, আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। আমি জানিনা আমি ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কতটুকু তা পূরণ করতে পেরেছি। অসংখ্য মানুষকে আমার ধন্যবাদ জানানো প্রয়োজন।
‘আমার সবচেয়ে ছোট চাচা যিনি ইন্তেকাল করেছেন, ওনার নাম আকবর খান। ওনার হাত ধরেই আসলে আমার প্রথম ক্রিকেট বলের টুর্নামেন্ট খেলা। তিনি এবং তার পরিবারকে ধন্যবাদ।’
এরপর ছোটবেলার কোচের কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে তামিমের। আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন। এর কিছুক্ষণ পর ক্রিকেটে নিজের চেষ্টার কথা বলতে গিয়ে চোখ মোছেন তিনি৷
তামিমের অবসরের ঘোষণায় কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেক ভক্ত সমর্থক। সংবাদ সম্মেলনের পরপরই তামিম ইকবালের কান্নার ছবি ও ভিডিও সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানেও অনেকেই তার অবসরে কষ্ট পাওয়ার কথা জানান।
অর্নব নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, কিংবদন্তিদের বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে দেখেই বোঝা যাচ্ছে অভিমানে অবসর নিয়েছেন, নয়তো সামনে এশিয়া ও বিশ্বকাপ, এমন হুটহাট ডিসিশন নিতো না।
আবুল কালাম নামের একজন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটারের অবসর কেন মাঠ থেকে হয় না? ব্যাটিং খারাপ হচ্ছিলো, অধিনায়কত্ব ছেড়ে কিছুদিন বিশ্রামে থেকে আবার রিদমে ফেরা যেত। তামিমের মারদাঙ্গা ব্যাটিং কে না উপভোগ করে?
‘তোমার জন্য খারাপ লাগছে, ভালো থেকো লিজেন্ড, তোমাকে মিস করবো-মিস করবে বাংলাদেশ।’
হাবিবুর রহমান নামের একজন লিখেছেন, ‘ক্রিকেট প্রেমীরা আপনাকে ভুলবে না কখনো। তামিমের এই হঠাৎ অবসর যেটা শুনে রীতিমত বড় ধাক্কা খেলাম। মেনে নিতে খারাপ লাগছে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওপেনার ব্যাটসম্যানের এই আচমকা অবসর।’
এ ছাড়া ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে প্রবল বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের রাস্তায় হাত চাপড়ে এক ভক্তকে কাঁদতে দেখা গেছে। সঙ্গে থাকা কয়েকজন চেষ্টা করছিলেন তাকে শান্ত করার।