কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার বলা যায় দুই দলকেই। কিন্তু শনিবার বিশ্বকাপ মিশনটা শেষ করতে হবে যেকোনো এক দলকে। শেষ হাসিটা হাসবে কে? ইংল্যান্ড না বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স? সেটিই জানা যাবে রাত ১টার ম্যাচের শেষে।
চলতি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড যেমন রয়েছে দুর্দান্ত ফর্মে, ঠিক তেমনি ফ্রান্সও আছে উড়ন্ত ফর্মে। এখন পর্যন্ত এক ম্যাচেও হারেনি থ্রি-লায়ন্সরা। শেষ আটে নাম লিখিয়েছে তারা পরাজয়ের মুখ না দেখেই। অপরদিকে ফ্রান্স গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে হেরেছিল তিউনিসিয়ার কাছে। এটিই এখন পর্যন্ত তাদের একমাত্র পরাজয়।
বিশ্বকাপের শুরুতেই ইরানকে ৬-২ গোলে বিধ্বস্ত করে গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরা। পরের ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছিল থ্রি লায়ন্সরা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ওয়েলসকে ৩-০ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়েই শেষ ষোলোতে পা রাখে তারা। একই ব্যবধানে সেনেগালকে হারিয়ে শেষ আট নিশ্চিত হয় ইংলিশদের।
এদিকে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স তাদের কাতার বিশ্বকাপের মিশনটা শুরু করে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ গোলে হারানোর মধ্য দিয়ে। পরের ম্যাচেই ডেনমার্ককে ২-১ গোলে হারানোর মাধ্যমে নিশ্চিত হয় তাদের শেষ ষোলো।
তবে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বড় রকমের হোঁচট খায় তারা। সাইড বেঞ্চ পরীক্ষা করতে গিয়ে তিউনিসিয়ার কাছে ১-০তে হেরে বসে ফরাসিরা। ছোট দলের বিপক্ষে পরীক্ষা চালাতে গিয়ে বিপাকে পড়লেও রাউন্ড অফ সিক্সটিনে আর ভুলের অবকাশ রাখেনি তারা। পোল্যান্ডকে ৩-১ গোলে হারিয়েই শেষ আটে পা রাখে দিদিয়ের দেশমের দল।
দুই দলের হেড টু হেড পরিসংখ্যান জয়ের পাল্লাটা বেশ ভারী ইংলিশদের। দুই দলের মোট ৩১ বারের দেখায় ১৭ বারই জিতেছে থ্রি-লায়ন্সরা। ৯ বার জিতেছে ফ্রান্স। আর ড্র হয়েছে ৫ বার।
সেই সঙ্গে বিশ্বকাপের ইতিহাসটাও বেশ তিক্ত ফ্রান্সের জন্য। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে দুই দলের দুইবারের দেখায় কোনোবারই জয় পায়নি ফ্রান্স। ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দেখায় ২-০ গোলে হেরেছিল ফ্রেঞ্চম্যানরা। এরপর ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে তাদের দ্বিতীয় দেখায় মিচেল প্লাতিনির ফ্রান্স ৩-১ গোলে ইংলিশদের কাছে হেরে যায়।
তবে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের ম্যাচে ফিফা র্যাঙ্কিং দিচ্ছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস। বর্তমান র্যাঙ্কিংয়ের চার নম্বরে ফ্রান্স। আর ইংল্যান্ড রয়েছে পাঁচে। তাই স্বভাবতই ধরেই নেয়া যায় লড়াইটা হবে বেশ জমজমাটই।
এ তো গেল পরিসংখ্যানের মারপ্যাঁচ। এবারে আসি দুই দলের শক্তিমত্তার জায়গায়।
চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত পাঁচ গোল করে গোল্ডেন বুট জেতার দৌড়ে নিজেকে বেশ এগিয়েই রেখেছেন ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপে। দুদলের ভেতর ব্যবধান গড়ে দিতে তিনিই যথেষ্ট। সঙ্গে রয়েছেন অলিভিয়ের জিরুড। তিনি জ্বলে উঠতে পারলে ইংল্যান্ডের শিরোপা জয়ের ৫৬ বছরের অপেক্ষা ছয় দশকে পরিণত হতে সময় লাগবে না।
তবে কম যায় না ইংলিশরাও। এই ম্যাচে লাইমলাইটে থাকছেন বুকায়ো সাকার। তার পারফরম্যান্সের ওপর থ্রি-লায়ন্সদের জয় অনেকটা নির্ভর করে। সঙ্গে আরও আছেন মার্কাস র্যাশফোর্ড। ফ্রান্সের জন্য ভয়ের অনেক বড় কারণ হয়ে উঠতে পারেন তিনি যদি তার সেরা দিন হয় ম্যাচের দিনটি। চলতি আসরে এখন পর্যন্ত দু জনেই গোল করেছেন ৩টি করে।
শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় কাতারের আল বাইত স্টেডিয়ামে হবে ম্যাচটি। আর এই ম্যাচে দেশমের দলের থাকবে পরিসংখ্যানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জয় বাগিয়ে মাঠ ছাড়ার প্রত্যয়, আর সাউথগেট শীষ্যদের সামনে লক্ষ্য থাকবে অতীতের পুনরাবৃত্তি আরও একবার ঘটানো।