ওয়েলসের বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতেই লিড নিয়েছিল ইরান। কিন্তু অফসাইডে বাতিল হয় সেই গোল। এরপর পুরো ম্যাচের নির্ধারিত সময়ে গোলের দেখা মেলেনি কারোরই।
কিন্তু নাটকের যে ছিল তখনও বাকি। রেফারি নির্ধারিত ৯০ মিনিটের সঙ্গে অতিরিক্ত ৯ মিনিট যোগ করে। আর সেই অতিরিক্ত সময়ের একদম শেষ মুহূর্তে জোড়া গোল করে চলতি বিশ্বকাপের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে ইরান।
পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেও হারকে সঙ্গী করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে ওয়েলসকে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ইরানের এটি তৃতীয় জয়। একইসঙ্গে ইউরোপের কোন দেশের বিপক্ষে এটি তাদের প্রথম জয়।
এই জয়ে টেবিলের দুইয়ে উঠে এল এশিয়ার দলটি।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ ও বল দখলের লড়াই দুটোতেই এগিয়ে ছিল ওয়েলস। যদিও ওয়েলসের গোলমুখে শট বেশি যায় ইরানের। ম্যাচের ৬২ শতাংশ সময় বল নিজেদের দখলে রেখে ইরানের পোস্টে ১০টি শট নেয় ওয়েলস। অপরদিকে ৩৮ শতাংশ বল দখলে রেখে ২১টি শট নেয় ইরান।
তৃতীয় মিনিটেই আক্রমণের সূচনা করে ওয়েলস। বাঁ দিক থেকে পাওয়া বল গোলমুখে শট নেন উইলিয়ামস। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় ভেস্তে যায় তার সেই প্রচেষ্টা।
দ্বাদশ মিনিটে ফের সুযোগ হাতছাড়া করেন মোরে। ডানদিক থেকে ডি বক্সের ভেতর দুর্দান্ত এক ইনসুইঙ্গারে ক্রস করেন রবার্টস। বক্সের ভেতর বল পেয়ে সেটি হালকা করে জালের দিকে ঠেলে দেন তিনি। কিন্তু ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটি আটকে দেন ইরানি গোলরক্ষক।
আক্রমণের পসরা ওয়েলস সাজিয়ে বসলেও ম্যাচের ১৬তম মিনিটে লিড নেয় ইরান। কিন্তু ভিএআর দেখে অফসাইড ঘোষণা করে সেই গোল বাতিল করে দেন রেফারি।
এরপর প্রথমার্ধে বেশ কিছু আক্রমণ চালালেও গোলের দেখা মেলেনি ওয়েলসের।
বিরতি থেকে ফিরে পুরো ভিন্নরূপে আগমণ ঘটে ইরানের। শুরুতে প্রতিপক্ষের চাপে থাকলেও এবার ওয়েলসকে চেপে ধরে তারা।
ম্যাচের ৫২ তম মিনিটে দুর্দান্ত সুযোগ সৃষ্টি হয় তাদের লিড নেয়ার। কিন্তু ভাগ্য সহায় না থাকায় আজুমানের সেই শট লাগে ডানদিকের বারে। ফিরতি শটে ফের গোলের প্রচেষ্টা চালান গোলিজাদে। কিন্তু সেটি গিয়ে আঘাত হানে বাম দিকের বারপোস্টে। আর তাতেই আরও একবার হতাশ হতে হয় ইরানিদের।
একে তো একের পর এক আক্রমণ চালাচ্ছিল ইরান, তার সঙ্গে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে ম্যাচের ৮৬তম মিনিটে লালকার্ড দেখেন ওয়েলস গোলরক্ষক ওয়েইন হেনেসি।
চলতি বিশ্বকাপের এটিই প্রথম লাল কার্ড। প্রথমে হলুদ কার্ড দেখালেও ভিএআর দেখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন রেফারি।
ম্যাচ চলার সময় ইনজুরি আর লাল কার্ডের ঝামেলার সুবাদে নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে বাড়তি ৯ মিনিট যোগ করেন রেফারি। কে জানতো, এই অতিরিক্ত সময়ে কপাল পুড়বে ওয়েলসের। এটা না ভেবেছিল ইরান না ভেবেছিল খোদ ওয়েলসের ফুটবলাররা।
অতিরিক্ত সময়ের সাড়ে ৮ মিনিটের মাথায় ওয়েলস শিবির স্তব্ধ করে দিয়ে বক্সের বাইরে থেকে নেয়া জোরাল শটে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন ইরানি ডিফেন্ডার রোজবেথ চেশমি।
ঠিক তার দুই মিনিট পর ওয়েলসের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিয়ে তাদের জয়ের আশা পুরোপুরি নিভিয়ে দেন রামিন রাজিয়ান। রেফারির শেষ বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে মেতে ওঠেন ইরান দল ও সমর্থকরা।