ফিফা বিশ্বকাপের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ৩২ দেশের অংশগ্রহণে কাতারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ। একে একে দেশটিতে পৌঁছাতে শুরু করেছে দলগুলো। আয়োজক দেশটি এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতিও শেষ করেছে।
বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে কাতারে নির্মাণ করা হয়েছে সাতটি নতুন স্টেডিয়াম। দেশটির আগের একটি স্টেডিয়ামসহ মোট আটটি ভেন্যুতে হবে এবারের বিশ্বকাপ। পুরোপুরি প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়া স্টেডিয়মাগুলোতে এখন শুধু ম্যাচ গড়ানোর অপেক্ষা।
জেনে নেয়া যাক, বিশ্বকাপের আট স্টেডিয়ামের বিশেষত্ব-
লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম, লুসাইল (ধারণক্ষমতা ৮০ হাজার)
এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় এই স্টেডিয়ামে আগামী ১৮ ডিসেম্বর ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া গ্রুপ পর্বের বেশ কয়েকটি ম্যাচসহ প্রথম সেমিফাইনালের ভেন্যুও এই লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম।
দোহার ১৫ কিলোমিটার উত্তরে দুই লাখ জনসংখ্যার পরিকল্পিত একটি শহর লুসাইল। বিশ্বকাপের পর এই স্টেডিয়ামটিকে সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বড় একটি স্থান হিসেবে রূপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। এ কারণে ৮০ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামটির বেশিরভাগ আসন উঠিয়ে অন্যত্র দান করা হবে।
লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম
আল-বায়াত স্টেডিয়াম, আল-খোর (ধারণক্ষমতা ৬০ হাজার)
আগামী ২০ নভেম্বর কাতার বনাম ইকুয়েডরের উদ্বোধনী ম্যাচটি আল-খোরের আল-বায়াত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া গ্রুপ পর্বের স্পেন বনাম জার্মানির মধ্যকার হাই ভোল্টেজ ম্যাচটিসহ গ্রুপ পর্বের পাঁচটি, শেষ-১৬ এর একটি, কোয়ার্টার ফাইনালের একটি ও দ্বিতীয় সেমিফাইনাল এই মাঠেই অনুষ্ঠিত হবে।
বেদুইনদের তাবুর আদলে এই স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়েছে। বিশ্বকাপের পর স্টেডিয়ামটির ছাদ সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।
দোহার ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অন্যতম ব্যস্ত শহর হিসেবে আল-খোর পরিচিত। আল-খোর থেকে রাজধানী দোহায় দ্রুত পৌঁছানোর জন্য মেট্রো রেলের ব্যবস্থা আছে। সমর্থকদের যাতায়াতের জন্য সবচেয়ে কষ্টকর একটি ভেন্যুও বলা যায়।
আল-বায়াত স্টেডিয়াম
অ্যাডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম, আল-রাইয়ান (ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার)
দোহার পশ্চিমাঞ্চলে আল-রাইয়ান শহরের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে এই স্টেডিয়ামটি অবস্থিত। এখানে যেতেও মেট্রো রেল ব্যবহার করতে হবে। এই স্টেডিয়ামে গ্রুপ পর্বের ৬টি, শেষ ১৬ ও কোয়ার্টার ফাইনালের একটি করে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বকাপের পর এর ধারনক্ষমতা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে।
এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম
আহমাদ বিন আলি স্টেডিয়াম, আল-রাইয়ান (ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার)
কাতারের ঘরোয়া ফুটবলের অন্যতম সফল ক্লাব আল-রাইয়ানের হোম ভেন্যু এই আহমাদ বিন আলি স্টেডিয়াম। পুরনো ভেন্যুর ঠিক পাশেই নতুন করে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এই স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়েছে। অ্যাডুকেশন সিটির কাছেই এই ভেন্যুর জন্য একটি মেট্রো স্টেশন আছে। এখানে আসলে সমর্থকরা মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমির আবহ পাবেন। এই স্টেডিয়ামটিরও ধারনক্ষমতা বিশ্বকাপের পর অর্ধেকে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
আহমাদ বিন আলি স্টেডিয়াম
খালিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম, দোহা (ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার)
১৯৭৬ সালে নির্মিত এই স্টেডিয়ামটি কাতার বিশ্বকাপের স্বত্ত্ব পাওয়ার সময় একমাত্র ফুটবল ভেুন্য হিসেবে পরিচিত ছিল। যদিও তারপর এর অনেক কিছুই সংষ্কার করা হয়েছে। ২০১১ এশিয়ান কাপ ফাইনাল ও লিভারপুল-ফ্ল্যামেঙ্গোর মধ্যকার ২০১৯ সালের ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপের ফাইনাল এই স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ২১ নভেম্বর এই মাঠেই ইরানের বিপক্ষে ইংল্যান্ড তাদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে। এ ছাড়া গ্রুপ পর্বের আরও পাঁচটি ও নক আউট পর্বে শেষ-১৬ এর একটি ম্যাচ এখানে অনুষ্ঠিত হবে।
খালিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম
আল-থুমামা স্টেডিয়াম, দোহা (ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার)
দোহার দক্ষিণে হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামটি। মধ্যপ্রাচ্যে পুরুষরা ঐতিহ্যগতভাবে মাথায় যে টুপি পড়ে থাকে তার আদলেই এই স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে ৬টি গ্রুপ পর্বের ম্যাচ ও একটি কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ আয়োজিত হবে। বিশ্বকাপের পর ব্যয় সংকোচনে এর ধারণক্ষমতা ২০ হাজারে নামিয়ে আনা হবে।
আল-থুমামা স্টেডিয়াম
স্টেডিয়াম ৯৭৪, দোহা (ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার)
৯৭৪ নম্বরটি কাতারের আন্তর্জাতিক ডায়াল কোড। একইসাথে স্টেডিয়াম নির্মাণে যে কন্টেইনার ব্যবহার করা হয়েছে তার সংখ্যাও এটি প্রতিনিধিত্ব হয়েছে। বিশ্বকাপের পর এই স্টেডিয়ামটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হবে।
স্টেডিয়াম ৯৭৪
আল-জানুব স্টেডিয়াম, আল-ওয়ারকাহ (ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার)
দোহার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আল-ওয়ারকাহতে এই স্টেডিয়ামটি অবস্থিত। কাতারের ঐতিহ্যবাহী বিশেষ নৌকার আদলে এই স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই ধরনের নৌকার সাহায্যে সমুদ্রে মাছ ধরা ও মুক্তা আহরণ করা হয়।
আল-জানুব স্টেডিয়াম