বিতর্কিত আম্পায়ারিং, ধারাবাহিকতাহীন ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং ও চাপ সামলাতে না পারা এই ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের খেলার টুকরো ছবি। সাউথ আফ্রিকার কল্যাণে পাওয়া সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেটে হেরে শেষ করতে হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর।
বিশ্বকাপের চলতি আসরের সেমিফাইনালে খেলার আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের ভারতের বিপক্ষে হারের পর। পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচটা ছিল নিয়মরক্ষার।
কিন্তু রোববার সকালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সাউথ আফ্রিকা সুপার টুয়েলভে নিজেদের শেষ ম্যাচে হারায় শেষ চারে জায়গা করে নেয়ার সুযোগটা আবার চলে আসে বাংলাদেশের সামনে।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় দিয়ে চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মিশন শুরু করলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে বিশ্বকাপ শেষ করতে হয়েছে বাংলাদেশের।
পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনোরকমে জয় পেলেই প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি শেষ চারে খেলার সুযোগ হত লাল সবুজের প্রতিনিধিদের। সে সুযোগ লুফে নিতে পারেনি সাকিব বাহিনী।
এই জয়ের সুবাদে ভারতের সঙ্গে গ্রুপ-টু থেকে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হলো পাকিস্তানের। আর এই গ্রুপ থেকে প্রথম দল হিসেবে আগে সেমিতে নাম তুলেছিল ভারত।
বাংলাদেশের দেয়া ১২৮ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেট ও ১১ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় পাকিস্তান।
অ্যাডিলেইড ওভালে বাঁচামরার লড়াইয়ে রোববার টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করলেও শেষ দিকে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৪০ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।
তৃতীয় ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে ছক্কা হাঁকান লিটন দাস। পঞ্চম বলে কাট করতে গিয়ে শান মাসুদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৮ বলে ১০ রান করে আউট হন তিনি। দলীয় ২১ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি।
এরপর শান্তর সঙ্গে ৫২ রানের জুটি গড়েন সৌম্য সরকার। এবারও সৌম্য ক্যাচ তুলে দেন মাসুদের হাতে। ১ চার ও ছক্কায় ১৭ বলে ২০ রান করেন তিনি। এরপর সাকিব আল হাসান ১ বল খেলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান সাজঘরে।
সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন অধিনায়ক সাকিব। রিপ্লেতে দেখা যায় ব্যাটে বল লাগলেও বিতর্কিতভাবে শূন্য রানে আউট হয়ে ফেরেন সাকিব।
অধিনায়কের পর আউট হন ফিফটি তুলে নেয়া শান্তও। ইফতিখার আহমেদের বলে বোল্ড হয়ে শেষ হয় তার ৪৮ বলে ৫৪ রানের ইনিংস। এরপর আর কেউই দলের হাল ধরতে পারেননি। গড়ে ওঠেনি পার্টনারশিপও।
১১ বলে ৫ রান করে মোসাদ্দেক বোল্ড হন আফ্রিদির বল বুঝতে না পেরে। আর সোহান তুলে মারতে গিয়ে ২ বলে শূন্য রানে দেন ক্যাচ।
এরপর আফিফ চেষ্টা করলেও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ২০ বলে ২৪ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। ইনিংসের শেষ ৫৩ রান তুলতে ৭ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের পক্ষে ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন আফ্রিদি। ম্যাচ সেরাও হয়েছেন তিনি। দুই উইকেট পান শাদাব খান।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শুরু থেকে দেখেশুনে ব্যাটিং করতে থাকেন দুই পাক ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। সতর্ক শুরুর পর দলীয় ৬১ রানে বিদায় নেন দুইজন।
নাসুমের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়ার আগে বাবর আজম খেলেন ৩৩ বলে ২৫ রান আর এবাদতের শিকার রিজওয়ানের ব্যাট থেকে আসে ৩২ বলে ৩২ রানের ইনিংস।
উইকেট তুলে নিলেও পাকিস্তানের রানের চাকার গতি কমাতে পারছিলেন না তাসকিন-মুস্তাফিজরা মিলে। সেই সঙ্গে যোগ হয় বাজে ফিল্ডিং। মিস ফিল্ডিংয়ের পসরা সাজিয়ে রানের গতি বাড়াতে পাকিস্তানকে সহায়তা করেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা।
শেষ পর্যন্ত ১৮ বলে ৩১ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলা হারিস রউফ আর ১৪ বলে অপরাজিত ২৪ রান করে শান মাসুদ ৫ উইকেটের জয় এনে দেন পাকিস্তানকে। একই সঙ্গে নিশ্চিত করেন শেষ চার।