ব্যক্তিগত জীবনে অনেক বাধা-বিপত্তি পেছনে ফেলে বিশ্বকাপের আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন অস্ট্রেলিয়ার উইঙ্গার আওয়ের মাবিল। শরণার্থী শিবির থেকে যাত্রা শুরু করে জাতীয় দলের গর্বিত এক সদস্য ২৭ বছর বয়সী এই উইঙ্গার, বিশ্বের অনেক ফুটবলারের কাছে যিনি অনুপ্রেরণার নাম।লা লিগায় কাদিসের হয়ে খেলে নিজেকে জাতীয় দলের জন্য যোগ্য করে তুলেছেন মাবিল। কিন্তু এখনো অতীত ভুলতে পারেননি, ভুলতে পারেননি কোথা থেকে তিনি উঠে এসেছেন।অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম এসবিএসে এক সাক্ষাৎকারে নিজের অতীত নিয়ে মাবিল বলেন, ‘ওই সময়গুলো আমার ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল। শরণার্থী শিবিরে থাকার সময় আমি যে ধরনের মূল্যবোধ শিখেছি তা জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই কাজে লাগাতে পারছি। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নম্রতা। ছোট বয়সে এই একটি বিষয় আমি ওই পরিবেশ থেকে শিখে এসে এখনো ধরে রাখার চেষ্টা করছি।’সুদান থেকে পালিয়ে এসে মাবিলের বাবা-মা কেনিয়ায় একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ওই ক্যাম্পেই মাবিলের জন্ম। দিনে মাত্র একবার খাবার খাওয়ার সুযোগ পেতেন, কিন্তু সারা দিন ফুটবলের মধ্যেই ডুবে থাকতেন। খালি পায়ে পুরো মাঠ দাপিয়ে বেড়াতেন।মাবিল বলেন, ‘আমি একটি ছোট কুটিরে জন্ম নিয়েছিলাম। শরণার্থী শিবিরে একটি মাত্র ঘরে আমরা অনেক লোক একসঙ্গে থাকতাম। এখন আমি হোটেলের যে রুমে থাকি তা ওই কুটিরের থেকে অনেক বড়। অস্ট্রেলিয়া আমার পুরো পরিবারকে তাদের দেশে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। নতুন জীবন ফিরিয়ে দেবার জন্য আমি অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’এক নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় বসতি গড়ার সুযোগ পান মাবিল ও তার পুরো পরিবার। অস্ট্রেলিয়ায় এসে এ-লিগে অ্যাডেলেইড ইউনাইটেডের পক্ষে খেলে নিজের ফুটবল-মেধাকে উন্নতির চেষ্টা করেন। ১৭ বছর ১১৮ দিনে ক্লাবটির সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে মাবিলের অভিষেক হয়। ২০১৫ সালে ড্যানিশ ক্লাব মিটশেলানের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে মাবিল ইউরোপে পাড়ি জমান। ২০২০ সালে লিগ শিরোপা জয়ী দলের সদস্য ছিলেন। আর এর মাধ্যমে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার স্বপ্নও পূরণ হয়।ডেনমার্কে থাকার সময় পর্তুগাল ও তুরস্কের ক্লাবে ধারে খেলে চলতি বছর ফ্রি ট্র্যান্সফারে কাদিসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। ক্লাব ফুটবলে অভিজ্ঞতা থাকায় অস্ট্রেলিয়ার কোচ গ্রাহাম আর্নল্ডের অধীনে নিয়মিত জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। এ পর্যন্ত সকারুদের হয়ে ২৯ ম্যাচে করেছেন আট গোল।২০১৮ সালে কুয়েতের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে অভিষিক্ত হয়েই তিনি গোল করেছিলেন। ওই ম্যাচে দক্ষিণ সুদানের আরেক শরণার্থী ও ছোটবেলার বন্ধু টমাস ডেংয়েরও মাবিলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়। টানা পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম মূল সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন মাবিল। জুনে ইন্টার-কন্টিনেন্টাল প্লে-অফে পেরুর বিপক্ষে সাডেন ডেথে পেনাল্টিতে গুরুত্বপূর্ণ গোল করে ম্যাচের নায়ক হয়েছিলেন তিনি। ২২ নভেম্বর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে গ্রুপ-ডির ম্যাচ দিয়ে অস্ট্রেলিয়া তাদের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে। এই গ্রুপের অপর দুই দল হচ্ছে তিউনিশিয়া ও ডেনমার্ক।
শরণার্থী ক্যাম্প থেকে বিশ্বকাপের মঞ্চে আওয়ের মাবিল
সুদান থেকে পালিয়ে এসে মাবিলের বাবা-মা কেনিয়ায় একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ওই ক্যাম্পেই মাবিলের জন্ম। দিনে মাত্র একবার খাবার খাওয়ার সুযোগ পেতেন, কিন্তু সারা দিন ফুটবলের মধ্যেই ডুবে থাকতেন। খালি পায়ে পুরো মাঠ দাপিয়ে বেড়াতেন।
-
ট্যাগ:
- ফিফা বিশ্বকাপ
- অস্ট্রেলিয়া
এ বিভাগের আরো খবর/p>