রাত পোহালেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভের যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বছর জুড়ে টানা হারে জর্জরিত টিম টাইগার্স সোমবার মাঠে নামবে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে।
হোবার্টে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসরে যাওয়ার আগে বড় দুই দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ নিয়েছিল বাংলাদেশ। সে আসরে যদিও জয়ের দেখা মেলেনি। আর এবার বিশ্বকাপের মঞ্চে গিয়েছে বাংলাদেশ একেবারেই শূন্যহাতে। তবে অষ্টম আসরে প্রাপ্তির ঝুলিটা ভারি করতে চায় তারা। প্রথম ম্যাচ দিয়েই জয়যাত্রা শুরু করতে চায় সাকিব-সোহানরা। সেক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডস হালকা প্রতিপক্ষ, এমনটাও ভাবছেন না তারা।
সর্বশেষ ১০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ভেতর বাংলাদেশ জয়ের মুখ দেখেছে মাত্র ৩ ম্যাচে। সেই ৩ ম্যাচের ভেতর একটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাকি দুটি আইসিসির সহযোগী দেশ আরব আমিরাতের বিপক্ষে।
এই তিন ম্যাচ বাদে বাকি ৭ ম্যাচের ভেতর জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি করে আর পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২টি করে ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ।
অপরদিকে নিজেদের শেষ ১০ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ৬টিতেই জয় পেয়েছে নেদারল্যান্ডস। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে নামিবিয়া ও আরব আমিরাতের বিপক্ষে জয় পেলেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারকে সঙ্গী করে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। কিন্তু তাতেও বিশ্বকাপের মূল পর্ব নিশ্চিত করে নেয় ডাচরা।
দুই দলের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বিবেচনায় জয়ের পাল্লাটা বেশ ভারি নেদারল্যান্ডসের।
এদিকে এখন পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যেখানে বাংলাদেশের অর্জন ১ হারের বিপরীতে দুই জয়। সেদিক থেকে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয়ের দিকে পাল্লা কিছুটা হলেও ভারি বাংলাদেশের।
তবে আইসিসির সহযোগী দেশ হলেও নেদারল্যান্ডসকে মোটেও ছোট করে দেখছেন না বাংলাদেশের দলপতি সাকিব আল হাসান। ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ভারত, পাকিস্তানের বড় বড় দলের বিপক্ষয়ের ম্যাচের মতোই গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সাকিব বলেন, ‘আমরা এভাবে চিন্তা করি না। সব ম্যাচই আমাদের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। সব ম্যাচ থেকেই ২ পয়েন্ট পাওয়ার আছে। আমরা প্রতি ম্যাচই জেতার জন্য খেলতে নামবো। এ বিশ্বকাপে কোনো দুর্বল ও সহজ দল নেই, যেমনটা আপনারা কোয়ালিফায়ারে (প্রথম রাউন্ড) দেখেছেন। যে দলকে আপনারা হয়তো ভেবেছেন জিতবে, তারা জিততে পারেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারাই (মিডিয়া) হয়তো এই পারসেপশনটা আমাদের ওপর দিচ্ছেন। তবে আমরা কখনও এভাবে প্রস্তুতি নেইনি। নিজেদের সেরা প্রস্তুতি নেওয়াই একমাত্র পথ। যাতে আমরা সামর্থ্যের সেরাটা দিয়ে খেলতে পারি।’
এবারের বিশ্বকাপের শুরু থেকেই ইতোমধ্যে ঘটে গেছে বড় কিছু অঘটন। শুরুটাই হয়েছিল নামিবিয়ার হাত ধরে। শ্রীলঙ্কাকে ৫৫ রানে হারিয়ে প্রথম অঘটনের জন্ম দিয়েছিল আন্ডারডগ দলটি।
এরপর স্কটল্যান্ড ৪২ রানে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। সবশেষ আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে বিশ্বকাপ মিশনটাই শেষ হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
সেই দিক বিবেচনায় সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আরও অঘটনের সম্ভাবনা দেখছেন ডাচ অধিনায়ক টম কুপার। সুপার টুয়েলভে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।
কুপার বলেন, ‘সুপার টুয়েলভে কিছু শক্তিশালী দল আছে। তবে (বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে) আমরা সুযোগ দেখছি। আমরা কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ খেলে এসেছি। বাংলাদেশ মাত্র শুরু করছে। তাদের একটি (প্রস্তুতি) ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। মাত্র একটি ম্যাচ খেলতে পেরেছে। আর আমরা খেলার মধ্যেই আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা বলছেন এটি (বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতলে) হয়তো অঘটন হবে। কিন্তু আমি সেভাবে দেখছি না। আমরা এখানে লড়াই করতে এসেছি। অতীতে আমরা তাদের বিপক্ষে সমানে সমান খেলেছি। আগামীকাল তাদের হারাতে না পারার কোনো কারণ দেখছি না। আশা করি আমরা তাদেরকে অপ্রস্তুত অবস্থায় শিকার করতে পারব এবং দারুণভাবে সুপার টুয়েলভ শুরু করতে পারব।’
এদিকে হোবার্টে বাংলাদেশের ম্যাচ শুরু নিয়ে রয়েছে সংশয়। কেননা আবহাওয়া আপডেটে জানা গেছে ম্যাচের সময় বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। যে কারণে ম্যাচ মাঠে গড়ালেও সম্ভাবনা রয়েছে ওভার কমে যাওয়ার।
ব্যালেরিভ ওভালে আগে ব্যাটিং করা দল কিছুটা হলেও জয়ের দিকে এগিয়ে থাকবে। আগে ব্যাটিং করা দলের এই ভেন্যুতে গড় ১৫৬।
এখন শুধুই অপেক্ষা, কাঙ্ক্ষিত জয়ের দেখা কি মিলবে টাইগারদের, না আরও একবার হারকে সঙ্গী করে মাঠ ছাড়তে হবে তাদের।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে তিন পেইসার ও এক স্পিনার কম্বিনেশনে খেলার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। একাদশে অনুপস্থিতি দেখা যেতে পারে মুস্তাফিজুর রহমানের। আর সেই সুবাদে বিশ্বকাপে অভিষেক ঘটতে পারে হাসান মাহমুদের।
বাংলাদেশ সম্ভাব্য একাদশ: সৌম্য সরকার, লিটন দাস, আফিফ হোসেন, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), ইয়াসির আলি রাব্বি, নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক), মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ।