টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসরের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭ রানের হারে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের। শিরোপার কাছাকাছি গিয়েও সেটি ছুঁয়ে দেখতে পারেনি কিউইরা। সেই হারের দগদগে ক্ষত নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর শুরু করে নিউজিল্যান্ড।
সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই তারা পায় আগেরবার স্বপ্ন ভেঙে দেয়া অস্ট্রেলিয়াকে। এ ম্যাচে ঘরের মাঠেই অজিদের বড় ব্যবধানে হারিয়ে যেন মধুর প্রতিশোধ নিল নিউজিল্যান্ড।
৮৯ রানের জয় দিয়ে উইলিয়ামসন বাহিনী শুরু করেছে তাদের বিশ্বকাপের মিশন। নিউজিল্যান্ডের করা ২০১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সব উইকেট হারিয়ে ১১১ রান তুলতে সক্ষম হয় স্বাগতিকরা।
রানের পাহাড় ডিঙানোর মিশনে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই দুর্ভাগ্য সঙ্গী হয় অস্ট্রেলিয়ার। টিম সাউদির গুড লেন্থের বল পুল করতে গিয়ে মিস করেন ওয়ার্নার। সেই বলটি তার ব্যাটের পেছনে লেগে অযাচিতভাবে আঘাত হানে স্টাম্পে। আর তাতেই স্কোরবোর্ডে ৫ রান তুলতেই প্রথম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।
সেই থেকে শুরু। ওয়ার্নারের বিদায়ের মধ্য দিয়ে বিপর্যয় নেমে আসে অজি শিবিরে। সাউদি-স্যান্টনারের পেইস তোপ সামলাতে হিমশিম খেতে থাকেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটাররা।
এভাবে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক উইকেটের পতন ঘটতে থাকে। স্কোরবোর্ডে ৬৮ রান তুলতেই একে একে বিদায় নেন অ্যারন ফিঞ্চ (১৩), মিচেল মার্শ (১৬), মার্কাস স্টয়নিস (৭) ও টিম ডেভিড (১১)।
মূলত শুরুর ধাক্কাটিই কাটিয়ে উঠতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। মাঝে ম্যাক্সওয়েলের ২০ বলে ২৮ রানের ইনিংসটা কেবল কমিয়েছে স্বাগতিকদের পরাজয়ের ব্যবধান। কিন্তু তার বিদায়ের পর আর কার্যকর ইনিংস খেলতে পারেননি অজি কোনো ব্যাটার।
শেষ পর্যন্ত সবগুলো উইকেট হারিয়ে ১১১ রানের থেমে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের চাকা। আর সেই সুবাদে নিউজিল্যান্ড পায় ৮৯ রানের বড় জয়। এর মধ্য দিয়ে ২০১১ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম জয় পেল নিউজিল্যান্ড।
সিডনিতে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বল থেকেই অজি বোলারদের ওপর চড়াও হন ফিন অ্যালেন ও ডেভন কনওয়ে। মাত্র ২৩ বলে দলীয় সংগ্রহ ৫০ রানের কোটা পার করেন এ দুই ওপেনার।
বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জুটি ভাঙে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে এসে। ফিন অ্যালেনের স্টাম্প উপড়ে ফেলে ব্রেক থ্রু আনেন জশ হেইজলউড। মাঠ ছাড়ার আগে অ্যালেন খেলেন ১৬ বলে ৪২ রানের টর্নেডো ইনিংস।
পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে কেবল অ্যালেনের উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে কিউইরা তোলে ৬৫ রান।
সঙ্গী বিদায় নিলেও তা বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পারেনি কনওয়ের তাণ্ডবে। উইলিয়ামসনকে সঙ্গে নিয়ে ৩৬ বলে চারটি চার ও দুটি ছক্কার মারে তুলে নেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক। বিশ্বকাপে এটি তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরি।
উইলিয়ামসন ধরে খেললেও অর্ধশতক তুলে নেয়ার পর আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন কনওয়ে। ১০.১ ওভারে দলীয় সংগ্রহ শতরানের কোটা পূর্ণ করেন এ দুইজন মিলে।
দুই ব্যাটারের জুটি ভাঙে ম্যাচের ১৩তম ওভারে জাম্পার হাত ধরে। ২৩ বলে ২৩ রান করে অজি এই স্পিনারের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে মাঠ ছাড়তে হয় কিউই দলপতিকে।
উইকেট তুলে নিলেও কনওয়ের আগ্রাসী ব্যাটিং থামাতে পারছিলেন না অজি বোলাররা। এবারে তিনি ব্যাট চালানো শুরু করেন গ্লেন ফিলিপসকে সঙ্গে নিয়ে। তবে ফিলিপসকে নিয়ে বেশিদূর যাওয়া হয়নি কনওয়ের।
দলীয় ১৫২ রানে ১০ বলে ১২ রান করে হেইজলউডের দ্বিতীয় শিকার বনে মাঠ ছাড়তে হয় ফিলিপসকে। আর তাতেই ভাঙে দুজনের ২৭ রানের জুটি।
অল্পতে দুই উইকেট হারানোর পরও স্বচ্ছন্দেই ব্যাটিং করছিলেন কিউই ওপেনার। কোনো অজি বোলারই সুবিধা করতে পারছিলেন না তার বিপক্ষে। জিমি নিশামকে সঙ্গে নিয়ে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে নিয়ে যাচ্ছিলেন রান পাহাড়ের চূড়ায়।
সঙ্গীর দেখাদেখি কামিন্স-হেইজলউডদের ওপর চড়াও হন নিশামও। এ দুই ব্যাটারের মারকুটে ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০০ রানের পুঁজি দাঁড় করায় নিউজিল্যান্ড।
সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে কনওয়ে অপরাজিত থাকেন ৫৮ বলে ৯২ রান করে। নিশাম শেষ পর্যন্ত তাকে সঙ্গ দেন ২৬ রান করে।