বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ক্রিকেটে দিনবদলের নায়কের জন্মদিন

  •    
  • ৫ অক্টোবর, ২০২২ ১০:৩৯

এ-দলের হয়ে একটি ম্যাচ খেলেই জাতীয় দলে জায়গা করে নেন তিনি। ২০০১ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটের মধ্য দিয়ে তার অভিষেক ঘটে। বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচটি অমীমাংসিত থাকলেও নিজের জাত চিনিয়েছিলেন মাশরাফি। ১০৬ রানে ৪টি উইকেট তিনি ঝুলিতে পুরেন।

মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। হার না মানা হাঁটুর জোরে ২২ গজ দাপিয়ে বেড়ানো এক যোদ্ধার নাম। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ইনজুরি যার নিত্যসঙ্গী, যে কি না নতুন দিনের বাংলাদেশের ক্রিকেটের রূপকার, দলের খেলোয়াড়দের জন্য ভরসার আরেক নাম, শেষ আশ্রয়স্থল, যিনি কি না বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনন্য এক উচ্চতায়, আজ সেই ব্যক্তিটির ৩৯তম জন্মদিন।

১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর নড়াইলে জন্মগ্রহণ করেন মাশরাফি। নড়াইলে তার ডাকনাম কৌশিক। ছোটবেলা থেকেই বেশ ডানপিটে কৌশিক পড়াশোনার পরিবর্তে ফুটবল আর ব্যাডমিন্টন খেলতেই বেশি পছন্দ করতেন। সেই সঙ্গে চিত্রা নদীতে সাঁতার কাটতেন।

তবে একটা সময় ব্যাডমিন্টন আর ফুটবল থেকে আগ্রহ সরে আসে তার। ক্রিকেটের দিকে ঝোঁক আসে মাশরাফির। শুরুতে ব্যাটিংয়ে আগ্রহ থাকলেও একটা সময় তিনি বনে যান তারকা পেইসার।

আক্রমণাত্মক ও গতিময় বোলিং দিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে থাকতেই তিনি নজর কাড়েন তৎকালীন অস্থায়ী বোলিং কোচ অ্যান্ডি রবার্টসের। তার পরামর্শেই মাশরাফিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বাংলাদেশ এ-দলে।

এ-দলের হয়ে একটি ম্যাচ খেলেই জাতীয় দলে জায়গা করে নেন তিনি। ২০০১ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটের মধ্য দিয়ে তার অভিষেক ঘটে। বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচটি অমীমাংসিত থাকলেও নিজের জাত চিনিয়েছিলেন মাশরাফি। ১০৬ রানে ৪টি উইকেট তিনি ঝুলিতে পুরেন।

একই বছর ২৩ নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয়। অভিষেক ম্যাচে মোহাম্মদ শরীফের সঙ্গে বোলিং ওপেন করে ম্যাশ ৮ ওভার ২ বলে ২৬ রান দিয়ে বাগিয়ে নেন ২ উইকেট।

চলছিল ভালোই। কিন্তু বেরসিক ইনজুরির আঘাতে ইংল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় টেস্ট চলাকালীন তাকে ছিটকে যেতে হয় বছরখানেকের জন্য। সেই থেকে শুরু। এরপর হাঁটুর সেই ইনজুরি পিছু ছাড়েনি তার।

২০০৪ সালে ভারত সিরিজের মধ্য দিয়ে ফের ২২ গজে ফেরেন মাশরাফি। ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে নেমেই দাপুটে বোলিংয়ে নিজের স্বরূপে ফেরার ঘোষণা দেন। সেই সিরিজে ওয়ানডেতে একমাত্র জয়ের নায়কও ছিলেন ডানহাতি এই পেইসার।

২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে তার গড় ছিল সবচেয়ে ভালো। কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নাটকীয় জয়ে তিনি অবদান রাখেন। একই সঙ্গে নাম লেখান ২০০৬ ক্রিকেট পঞ্জিকাবর্ষে ওয়ানডে ফরম্যাটে বিশ্বের সর্বাধিক উইকেট শিকারী হিসেবেও। সে সময় তিনি ঝুলিতে পুরেছিলেন মোট ৪৯টি উইকেট।

২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়ে মাশরাফি ছিলেন অন্যতম নায়ক। ৩৮ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন ভারতের। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের নেপথ্য কারিগর ছিলেন তিনি।

মাশরাফির পারফরম্যান্স দেখে টিম ম্যানেজমেন্ট তার ওপর অধিনায়কত্ব দেয়ার কথা চিন্তা করে। সেই প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের আগে অধিনায়কের দায়িত্বভার মাশরাফির হাতে তুলে দেয়া হয়।

কিন্তু সিরিজের প্রথম ম্যাচেই হাঁটুর ইনজুরি তাকে ২২ গজ থেকে ছিটকে দেয় প্রায় ১ বছরের জন্য। এরপর ২০১৪ সালের নভেম্বরে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজে অধিনায়কত্ব ফিরে পান তিনি। এবারে দায়িত্ব পান কেবল ওয়ানডে দলের।

২০২০ সালে সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের পর অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।

১৬ বছরের ক্যারিয়ারে ১১ বার চোটের কারণে দলের বাইরে যেতে হয়েছে মাশরাফিকে। এই ইনজুরিই তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল ২০১১ সালের দেশের মাটিতে হওয়া বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ।

বর্ণিল, চড়াই-উৎরাই পার করে ১৯ বছর সাদা পোশাকে দেশকে সার্ভিস দেন ম্যাশ। প্রায় দুই দশকের দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে নড়াইল এক্সপ্রেস খেলেছেন মাত্র ৩৬টি টেস্ট। যার সবশেষটি ২০০৯ সালে। ইনজুরির কারণে এরপর আর সাদা পোশাকে মাঠেই নামা হয়নি নড়াইল এক্সপ্রেসের।

তবু এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী পেসারের নাম মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। টেস্ট ক্যারিয়ার চলাকালীন তো নয়ই, টেস্ট থেকে বাধ্যতামূলক সরে যাওয়ার পরের ১১ বছরেও মাশরাফিকে উইকেট সংখ্যায় ছাড়াতে পারেনি বাংলাদেশের আর কোনো পেইসার। সাদা পোশাকে তার মোট শিকার ৭৮ উইকেট, ব্যাট হাতে তিন ফিফটিতে রয়েছে ৭৯৭ রান।

সীমিত ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২২০ ওয়ানডে খেলেছেন মাশরাফি, শিকার করেছেন দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২৭০ উইকেট। ২০০৬ সালে এক ম্যাচে মাত্র ২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি, যা এখনও পর্যন্ত ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। ব্যাট হাতে এই ফরম্যাটে তার সংগ্রহ ১ হাজার ৭৮৭ রান।

২০০৬ সালে দেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়েই শর্টার ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয় নড়াইল এক্সপ্রেসের। আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফরম্যাট থেকে বিদায় নিয়েছেন ২০১৭ সালের এপ্রিলে। ১১ বছরের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন ৫৪ ম্যাচে। ৪২ উইকেট ঝুলিতে পুরার পাশাপাশি রান করেছেন ৩৭৭।

অধিনায়কত্বের অধ্যায়েও ওয়ানডেতেই সবচেয়ে সফল মাশরাফি। ২০১৪ পরবর্তী সময়ে তার হাত ধরেই সেরা সাফল্যগুলো পেয়েছে বাংলাদেশ। খেলেছে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, পৌঁছে গেছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে, এশিয়া কাপের রানারআপ হয়েছে দুই আসরেই। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো বহুজাতিক সিরিজের শিরোপা এসেছে মাশরাফির অধিনায়কত্বেই।

সবমিলিয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশকে ৮৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি। যার মধ্যে জিতেছেন ৫০টিতে। বাংলাদেশের আর কোনো অধিনায়ক ৫০ জয়ে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি। জয়-পরাজয়ের হারেও (৫৮.১৩%) অন্য যেকোনো অধিনায়কের চেয়ে এগিয়ে মাশরাফি।

টি-টোয়েন্টিতেও মাশরাফির অধীনে সর্বোচ্চ ১০টি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

এ বিভাগের আরো খবর