মৌসুমের প্রথম ম্যানচেস্টার ডার্বি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে থাকা ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে টানা ৪ ম্যাচ জয়ে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একটা জমজমাট লড়াইয়ের অপেক্ষায় ছিলেন ফুটবল ভক্তরা।
তেমনটা হয়নি। আক্রমণাত্মক ফুটবলের তোড়ে ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ৬-৩ গোলে ম্যাচ জিতে নিয়েছে সিটি। সিটির হয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন আর্লিং হালান্ড ও ফিল ফোডেন।
পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা চোখে আঙুল দিয়ে প্রথমার্ধে দেখিয়ে দেয় দুই দলের পার্থক্য। নিজ মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ৪-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে গেছে সিটি।
ম্যাচের শুরু থেকে আক্রমণে যায় ম্যান সিটি। নিজ মাঠে তারা নাভিশ্বাস তুলে ফেলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের।
সুফলটাও পায় দ্রুত। ম্যাচের ৮ মিনিটে জোয়াও কানসেলোর কাছ বাম প্রান্তে বল পেয়ে যান বার্নার্দো সিলভা। তিনি বল বাড়ান বক্সের কিনারায় থাকা ফিল ফোডেনের দিকে। চমৎকার শটে ঘরের দলকে লিড এনে দেন ফোডেন।
এগিয়ে যেয়েও প্রতিপক্ষকে স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি সিটি। ১৮ মিনিট ইলকায় গুন্দোয়ান ফ্রি কিক পোস্টে লেগে ফিরে না আসলে ২ গোলে এগিয়ে যেতে পারত স্বাগতিক দল।
সিটির হয়ে প্রথম গোলের পর উচ্ছ্বসিত ফিল ফোডেন। ছবি: টুইটার
তাতে হতাশ হয়নি স্বাগতিক দল। টানা আক্রমণ চালাতে থাকে গার্দিওলার সিটিজেনরা। দ্বিতীয়বারের মতো তারা ইউনাইটেডের রক্ষণ ভাঙে ৩৪ মিনিটে। কেভিন ডি ব্রুইনার কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে ম্যাচে নিজের প্রথম ও মৌসুমে নিজের ১২তম গোল করেন আর্লিং হালান্ড।
সিটিজেনরা ম্যাচভাগ্য নিশ্চিত করে দেয় ৩৭তম মিনিটে। আবারও ডি ব্রুইনা-হালান্ড কম্বিনেশন থেকে লিড বাড়িয়ে নেয় ম্যান সিটি।
মাঝমাঠ থেকে ডি ব্রুইনার নিখুঁত ক্রস বক্সের ভেতর পেয়ে যান অফসাইড ফাঁদকে ফাঁকি দেয়া হালান্ড। লক্ষ্যভেদ করতে কোনো ভুল করেননি নরয়েজিয়ান এ গোলমেশিন।
পুরোটা সময় ডি ব্রুইনাকে মাঝমাঠে থামাতে ব্যর্থ হয় ইউনাইটেড। যার খেসারত দিয়ে হয় ৪৩ মিনিটে আরও একবার। মাঝমাঠে বল পেয়ে বেশ খানিকটা ফাঁকা দৌঁড়ে হালান্ডকে বক্সের ডানদিকে ক্রস ছাড়েন ডি ব্রুইনা।
এবারে নিজে শট না নিয়ে ফিল ফোডেনের জন্য পাস বানিয়ে দেন হালান্ড। কাছ থেকে সিটির চতুর্থ গোল করেন এ তরুণ ইংলিশ ফরোয়ার্ড।
৪-০ গোল ও ম্যাচ একরকম পকেটে নিয়ে বিরতিতে যায় চ্যাম্পিয়নরা। বিরতির বাঁশির আগে দুই দলের দুই ডিফেন্ডার চোটের কারণে মাঠ ছেড়ে যান।
চোট পাওয়া রাফায়েল ভারানের জায়গায় ইউনাইটেড মাঠে নামায় ভিক্টর লিন্ডেলফকে। আর সিটি অধিনায়ক কাইল ওয়াকার আহত হলে তার বদলি হিসেবে নামেন সার্হিও গোমেস।
বিরতির পর খেলা শুরু হলে কিছুটা আশার আলো দেখে ইউনাইটেড। ৫৬ মিনিটে নতুন রিক্রুট অ্যান্টনির দারুণ গোলে ব্যবধান কমায় সফরকারী দল।
ডি বক্সের বেশ খানিকটা বাইরে থেকে চমৎকার বাঁকানো শটে গোল করেন এ ব্রাজিলিয়ান।
নিজেদের চার গোলের পার্থক্য এর ৮ মিনিট পর ফিরে পায় সিটি। ৬৪ মিনিটে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন হালান্ড।
এবারে বাম প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে যায় সিটি। গোমেসের নিঁচু ক্রস বক্সের ভেতরে খুঁজে পায় হালান্ডকে। নিজের মার্কার লিসান্দ্রো মার্তিনেসকে পাত্তা না দিয়ে অনায়াসে নিজের তৃতীয় গোল করেন হালান্ড।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা ৩ হোম ম্যাচে হ্যাটট্রিক করলেন এ স্ট্রাইকার।
টানা তৃতীয় হোম ম্যাচে হ্যাটট্রিকের পর আর্লিং হালান্ডের উদযাপন। ছবি: এএফপি
শুধু গোল করে থামেননি হালান্ড। ৭২ মিনিটে ফোডেনকে বল বানিয়ে দেন তিনি। হালান্ডের অ্যাসিস্টে নিজের হ্যাটট্রিক তুলে নেন ফোডেন।
৩ পয়েন্ট নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর গার্দিওলা ৪ খেলোয়াড় বদল করেন। মাঠ ছেড়ে যান কেভিন ডি ব্রুইনা, ফিল ফোডেন, জ্যাক গ্রিলিশ ও ইলকায় গুন্দোয়ান।
তাদের বদলে মাঠে নামেন হুলিয়ান আলভারেস, রিয়াদ মাহরেজ, কোল পামার ও আয়মেরিক লাপোত।
ম্যাচের শেষ সময়ে আরও দুই গোল শোধ করে ইউনাইটেড। হেড করে প্রথমে স্কোরলাইনকে ৬-২ বানিয়ে দেন অ্যান্থনি মার্সিয়াল। আর অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টি থেকেও একটি গোল করেন এ ফরাসি তারকা। তাতে ম্যাচের ফল পাল্টায়নি।
৬-৩ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সিটি। এ জয়ে ৮ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে আর্সেনালের চেয়ে ১ পয়েন্ট পিছিয়ে টেবিলের দুইয়ে থাকল ম্যানচেস্টার সিটি।