আগেই জানিয়েছিলেন লেভার কাপ হতে যাচ্ছে তার ২৪ বছরের ক্যারিয়ারের সবশেষ আনুষ্ঠানিক টুর্নামেন্ট। শনিবার ভোরে লেভার কাপের প্রথম রাউন্ডেই শেষ হলো রজার ফেডেরারের টেনিস কোর্টে পথচলা।
ফ্রান্সেস টিয়াফো ও জ্যাক সক জুটির কাছে গেরে গেছেন রজার ফেডেরার ও রাফায়াল নাদালের জুটি। ৪-৬, ৭-৬ (৭/২), ১১-৯ গেমে হার মানেন ফেডেরার ও নাদাল।
তবে এমন একটা ম্যাচে স্কোরলাইন ছিল শুধুই যেন আনুষ্ঠানিকতা। ম্যাচ শেষ হওয়া মাত্র ফেডেরারকে ঘিরে ধরেন খেলোয়াড়রা। সবাই তাকে শুভেচ্ছা জানান ও কাঁধে তুলে নিয়ে কিছুক্ষণ উল্লাসও করেন।
সর্বকালের সেরা এ টেনিস তারকার বিদায়ের ক্ষণে এমন উৎসবের পরই ছিল বাঁধভাঙা আবেগ। লন্ডনের ওটু অ্যারেনায় জায়ান্ট স্ক্রিনে ফেডেরারের ক্যারিয়ারের ভিডিও ক্লিপ দেখানো হচ্ছিল তখন কেঁদে ফেলেন ফেডেরার।
ম্যাচ শেষে ফেডেরারকে কাঁধে নিয়ে উল্লাস করেন সতীর্থরা। ছবি: এটিপি
অবাক করার মতো ব্যাপার হলো, ফেডেরারের পাশে বসা নাদালও নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। টেনিস কোর্টে ফেডেরারের সবচেয়ে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী নাদাল কোর্টের বাইরে ছিলেন কাছের বন্ধু। প্রিয় বন্ধুর বিদায়ে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি তিনি।
ম্যাচ শেষে প্রতিক্রিয়ায় জানান, ফেডেরারের বিদায়ে নিজের একটা অংশকেই যেন বিদায় দিতে হচ্ছে তাকে।
নাদাল বলেন, ‘আমাদের খেলাটির ঐতিহাসিক এ মুহূর্তের অংশ হতে পেরে আমি সম্মানিত। আমরা এতগুলো বছরে অনেক কিছু শেয়ার করেছি। রজার খেলা ছাড়ার অর্থ আমার জীবনেরও একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশের চলে যাওয়া।’
ম্যাচ শেষে ফেডেরার নিজের প্রতিক্রিয়ায় জানান আনুষ্ঠানিক খেলা শেষ হলেও, প্রদর্শনী ম্যাচ তিনি খেলতে চান। এখনও বিশ্বের অনেক জায়গায় তার টেনিস খেলা বাকি আছে।
তিনি বলেন, ‘আমার আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই কোথায় কবে আবার খেলব। যেটা জানি তা হচ্ছে এমনসব জায়গায় টেনিস খেলার ইচ্ছা যেখানে আমি যাইনি। এতদিন ধরে আমাকে যারা সমর্থন দিচ্ছেন তাদের কাছে যেতে চাই ও ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
১৭ বছর বয়সে ১৯৯৮ সালে পেশাদার টেনিসে অভিষেক হয় ফেডেরারের। ২০০৩ সালে উইম্বলডন দিয়ে শুরু হয় তার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়।
এরপর একে একে আটটি উইম্বলডন, ছয়টি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, পাঁচটি ইউএস ওপেন ও একটি ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতেছেন অনেকের চোখে সর্বকালের সেরা এ টেনিস তারকা।
নিজের ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের শেষটি ২০১৮ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে জেতেন ফেডেরার।
২০০৩ সালে র্যাংকিংয়ের শীর্ষে ওঠার পর ৩১০ সপ্তাহ শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন তিনি। তার এ রেকর্ড সম্প্রতি ভেঙেছেন নোভাক জকোভিচ।
সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের তালিকায় ৩ নম্বরে থেকে ক্যারিয়ার শেষ করলেন ফেডেরার। তার চেয়ে বেশি স্ল্যাম জিতেছেন নোভাক জকোভিচ (২১টি) ও রাফায়েল নাদাল (২২টি)।
তবে গত ৩ বছর চোটের সঙ্গে লড়াই আর অস্ত্রোপচার করেই কাটাতে হয়েছে আটবারের উইম্বলডনজয়ী এ তারকাকে।
২০২০ সাল থেকে অনুষ্ঠিত ১১টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মাত্র তিনটিতে খেলতে পেরেছেন তিনি।