নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী নারী ফুটবল দল দেশে ফেরে বুধবার দুপুরে। বিমানবন্দরে নামার পরপরই রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ভালোবাসা, শুভেচ্ছায় সিক্ত হন ফুটবলাররা। এমন দিন শেষে সন্ধ্যায় আদালতের নথি নিয়ে পুলিশ গেছে নারী দলের অন্যতম ফুটবলার আঁখি খাতুনের সিরাজগঞ্জের বাড়িতে।
কী বলছেন আঁখি ও তার বাবা
এ বিষয়ে ডিফেন্ডার আঁখি বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) সন্ধ্যায় শাহজাদপুর থানা থেকে এসআই মামুন আমাদের বাড়িতে এসে আমার বাবাকে আদালতের একটি কাগজে সই করতে বলে। আমার বাবা সেই কাগজে সই করেননি। তাই আমার বাবাকে এসআই মামুন থানায় নিয়ে যাবে বলে হুমকি দেয় এবং গালাগাল করে।
‘পরে বাবা আমাকে ফোনে বিষয়টি জানান। এসআই নাকি বলেছে, আমি বাড়ি যাওয়ার পর থানায় যেতে হবে আমাকে। আসলে গতকাল এমন এক আনন্দঘন মুহূর্তে এমন সংবাদে আমার মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায়।’
আঁখির বাবা আক্তার হোসেন বলেন, “গতকাল সন্ধ্যায় থানা থেকে এসআই মামুন সাহেব এসে আমাকে একটা কাগজ দিয়ে বলে, ‘আঁখি তো বাড়িতে নেই। তার পরিবর্তে আপনি এই কাগজে সই দেন।’ আমি বলি কেন সই দেব? আমি তো বাদী বা আসামি কোনোটাই না। আমি পুলিশকে বলেছি, আপনারা ইউএনও মহোদয় বা ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।
“তখন আমাকে কটূক্তি করেছে, আর এক পুলিশ সদস্য আমাকে ধরে নিয়ে যাবে বলেছে। আসলে এই জায়গা তো আমাদের সরকার দিয়েছে। কোনো মামলা বা অভিযোগ হলে সরকারের নামে হবে। আমাদের নামে কেন আদালত সমন পাঠাবে?”
পুলিশ ও ইউএনওর ভাষ্য
শাহজাদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মামুন বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আসলে গতকালের যে ঘটনাটা আপনারা বলছেন, তা সত্য না। আঁখির নামে শাহজাদপুরের দাবারিয়ায় একটি জায়গা আছে। সেই জায়গা নিয়ে মোকাররম হোসেন নামের এক ব্যক্তি সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে অভিযোগ করে।
‘সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত শান্তির লক্ষ্যে ১৪৪ ধারা জারি করে একটি নোটিশ প্রেরণ করে। আমি বিজ্ঞ আদালতের সেই কাগজটিতে একটি স্বাক্ষর দিতে বলি, কিন্তু আঁখির বাবা সেই স্বাক্ষর দিতে রাজি না হলে আমি থানায় চলে আসি। আমি তাকে কোনো প্রকার হুমকি-ধমকি দিইনি বা থানায়ও নিয়ে আসতে চাইনি।’
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে গতকালের ঘটনাটা একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। পরে রাতেই আমি মিষ্টি নিয়ে ও আমার এসআইকে সঙ্গে নিয়ে আঁখিদের বাড়িতে যাই এবং এই ভুল-বোঝাবুঝির ঘটনাটা মিউচ্যুয়াল করে দিই।
‘আসলে আদালতের সমন এলে আমাদের সেই কাজ করতে হয়। বিষয়টি তেমন কিছু না।’
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের (নারী দলের ফুটবলার) ঘিরে যখন গোটা দেশ মেতেছে উৎসবে, তখন এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিতই বটে, তবে আমি রাতে শোনার সঙ্গে সঙ্গে ওসি সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে আঁখিদের বাড়িতে যাই। আঁখির বাবা ও মায়ের সঙ্গে কথা বলি। আর আঁখিকে যে জায়গা দেয়া হয়েছে, সেটা সরকারের একটা নিষ্কণ্টক জায়গা।
‘এখানে কোনো সমস্যা নেই, তবে এক ব্যক্তি যে অভিযোগ দিয়েছে, তা আমরা তদন্ত করে দেখব। সেই সঙ্গে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেব। আঁখির এই জায়গা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’