ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। সেই আনন্দে মাতোয়ারা পুরো দেশ। আনন্দ ছড়িয়েছে পাহাড়েও।
নারী ফুটবল দলের অন্যতম পাঁচজন খেলোয়াড় পাহাড়ি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর রাঙ্গামাটির পাহাড়েও হয়েছে উচ্ছ্বাস-আনন্দ। আনন্দে ভেসেছেন তাদের স্থানীয় কোচ শান্তি মণি চাকমা। আনন্দের সেই অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয় বলে নিউজবাংলাকে বলেছেন তিনি।
রাঙ্গামাটির মেয়ে রিতুপর্ণা চাকমা, আনাই মোগিনি, মনিকা চাকমা, রূপনা ও আনুচিং। তাদের বিজয়ে খুশিতে আত্মহারা তাদের স্বপ্ন দেখানো শিক্ষক শান্তি মণি চাকমা ও বিরসেন চাকমা।
জাতীয় দলের অন্যতম সেরা পাঁচ নারী ফুটবলারের তিনজন আনাই মোগিনি, আনুচিং মোগিনি ও মনিকা চাকমা ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন।
অন্য দুজনের মধ্যে রিতুপর্ণা চাকমা ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে বিকেএসপিতে চলে যান। গোলকিপার হিসেবে ছিলেন রাঙ্গামাটির মেয়ে রুপনা চাকমা।
জেলায় ফুটবলার তৈরিতে অন্যতম ভূমিকা রাখছে ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়। ২০১২ সালে বঙ্গমাতা চ্যাম্পিয়ন হয় ঘাগড়ার মগাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়।
এই পাঁচ তারকা ছাড়াও জাতীয় দলের হয়ে খেলার মতো আরও ফুটবলার তারা তৈরি করছেন বলে জানালেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্র দেওয়ান।
রিতুপর্ণা, আনাই, মনিকা, রুপনা ও আনুচিংদের উঠে আসার পেছনে সেখানে স্থানীয় প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন শান্তি মণি চাকমা ও শিক্ষক বীরসেন চাকমা।
পাহাড়ের নারী ফুটবলাররা বিজয়ী হয়ে দেশে ফিরবেন, এই আনন্দে আত্মহারা তাদের শিক্ষক বীরসেন চাকমা। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকালে রিতুপর্ণা চাকমার সঙ্গে কথা হয়েছিল। সে নিজে ফোন করেছে। মনোবল না হারানোর জন্য সাহস দিয়েছিলাম। অবশেষে তাদের বিজয় হয়েছে। এ বিজয় দেশের, জাতির সেরা অর্জন।’
পাঁচ পাহাড়ি খেলোয়াড় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে বঙ্গমাতা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঘাগড়ার মগাছড়ি স্কুল। কিন্তু জেলা পর্যায়ে এ চ্যাম্পিয়ন তাদের কোনো ক্লাবই স্বীকৃতি দেয়নি। রুপনা চাকমাকে প্রথমে ২০১২ এবং ২০১৩ সালে খেলায় ডেকেছিলাম। কিন্তু সে আসেনি।
‘পরে ২০১৪ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে থাকাকালীন তাকে নিয়ে এসেছি। এ ছাড়া ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন, জেলা পর্যায়ে সম্মানজনক কোনো কিছু দেয়নি। দেশ-জাতির সুনাম অর্জন করেছে।’
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশি নারী ফুটবলারদের প্রতি শুভকামনা রইল। বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাই রাঙ্গামাটির রিতুপর্ণা চাকমা, আনাই, মনিকা, রুপনা ও আনুচিংদের। তারা রাঙ্গামাটি তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের নাম ছড়িয়েছে।’
পাহাড়ি এসব ফুটবলারের বিজয় উদযাপনে কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা এখন অনেক ব্যস্ত। মন চাইলেও তাদের সহজেই পাওয়া যায় না। যদি কখনও সুযোগ হয়, তাদের পুরস্কৃত করার উদ্যোগ নেয়া হবে।’