ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের ঠিক আগ মুহূর্তে হুট করেই টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মুমিনুল হক। এরপর থেকেই জল্পনা কল্পনা শুরু হয় মুমিনুলের উত্তরসূরি হিসেবে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে নিয়ে।
মুমিনুলের উত্তরসূরি হিসেবে নাম এসেছে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদী হাসান মিরাজের। তবে নতুন অধিনায়কের সেই দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন সাকিব।
২০১৯ সালে ক্রিকেট থেকে সাকিবের নিষেধাজ্ঞার কারণেই টেস্ট দলের গুরুভার পড়েছিল মুমিনুলের কাঁধে। মিমির সরে যাওয়ার পর সেই দায়িত্বভার আবারো তার ওপর বর্তাতে যাচ্ছে বলে জোর গুঞ্জন চলছে।
যদিও বোর্ডের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছুই জানানো হয় নি। একই সঙ্গে জানানো হয়নি মুমিনুলের সিদ্ধান্ত কি বোর্ড মেনে নিয়েছে না তার সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তার নেতৃত্বেই দলকে পাঠানো হবে। বৃহস্পতিবার বোর্ড সভায় এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাবে বোর্ড।
তবে এটি যে নিছকই গুঞ্জন নয় সেটির কিছুটা ইঙ্গিত আগে থেকেই দিয়ে রেখেছেন জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। সরাসরি না হলেও অনেকটা অকপটেই জানিয়ে দিলেন সাকিবই অধিনায়ক হিসেবে পছন্দের তালিকায় বেশ এগিয়ে।
শুধু তাই নয় বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার অধিনায়কের দায়িত্বভার পেলে সেটি দলের জন্য খুবই ভালো হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এমনটাই জানান সুজন।
তিনি বলেন, ‘সাকিবের সাথে ক্যাপ্টেসি নিয়ে আমার কোনো কথা হয়নি। তবে অন্যান্য বিষয়ে আমাদের কথা হয়। এই টেস্ট ম্যাচ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) নিয়ে গতকালও কথা বলেছি বেশ কিছু। ম্যাচের সিচুয়েশন বা অন্য কিছু নিয়ে। খেলার প্রতি তার জ্ঞান অনেক, সবসময় যেটা হয় ওর সাথে কথা বলে সেই আরামটা পাওয়া যায়। ও যেভাবে সবার সাথে মিশতে পারে, আমার মনে হয় ও যদি ক্যাপ্টেন্সি পায় তাহলে সেটি দলের জন্য খুবই ভালো হবে।’
সুজন আরও বলেন, ‘সাকিবের সঙ্গে যতবার কথা বলেছি, সে বলে আমি অন্য ফরম্যাটের থেকে টেস্ট বেশি উপভোগ করি। আমি সব সময় বেশি টেস্ট খেলতে চাই। যদি সাকিব খেলতে চায়, সাকিব দিতে চায়, আমি মনে করি সেটা সাকিবেরও একটা পরিবর্তন আসতে পারে। আমি বলছি না সাকিবই টেস্ট ক্যাপ্টেন হবে বা তামিমও আছে। মাহমুদউল্লাহ যেহেতু ছেড়ে দিয়েছে, মুশফিকও আছে। তবে সে নেবে কী না সেটা বড় ব্যাপার। তো কে হবে আমি জানি না।’
সাকিব জাতীয় দলের দায়িত্বভার বুঝে পেলে বনেদি ফরম্যাটের ক্রিকেটে বাংলাদেশের বেশ উন্নতি হবে বলেও মনে করছেন সাবেক এই ক্রিকেটার।
সুজন বলেন, ‘অবশ্যই। সাকিব খুবই অভিজ্ঞ একজন ক্রিকেটার। আমার মনে হয় সে টেস্ট ম্যাচ উপভোগ করে। এটার প্রমাণ হিসেবে আমি মনে করি দুটো টেস্ট ম্যাচে সাকিব যে পরিমাণ বল করেছে, কবে সাকিব একটানা এতো বোলিং করেছে আমার মনেও নেই। আমাদের ভয় ছিল দুটো টেস্ট ম্যাচে সাকিব বেশি বোলিং করবে না, কিন্তু সে প্রমাণ করেছে নিজেকে।’
‘ম্যাচের আগে ওর ফিটনেস নিয়ে অনেক কথা উঠেছিল। আমি মনে করি যে বল হাতে সাকিব অলওয়েজ গ্রেট। ব্যাট হাতে তেমন বড় কিছু করতে পারেনি। আমি মনে করি ও দায়িত্ব পেলে... ও তো এখনও ক্রিকেট খেলতে চায়ারও দুই তিন বছর খেলবে। যতদিনই খেলে ওর উচিত বাংলাদেশের জন্য কিছু করা। বাংলাদেশকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যাওয়া’, তিনি যোগ করেন।
জাতীয় দলের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে এখন পর্যন্ত সাকিব দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ১৪ ম্যাচে। এই ১৪ ম্যাচের ভেতর মাত্র ৩টি ম্যাচে জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি ১১টিতেই হারকে সঙ্গী করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিদের।
অন্যদিকে মুমিনুলের অধীনে বাংলাদেশ ১৬ টেস্টের ভেতর জয় পেয়েছে তিনটিতে। পাশাপাশি ১১ হারের বিপরীতে ২ ম্যাচে ড্র করেছে টাইগাররা।