বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাকা লিগে উইকেটের উন্নতি চান পারভেজ রাসূল

  •    
  • ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ১৫:৩৪

‘একটা জায়গায় সুক্ষ্ম পার্থক্য চোখে পড়েছে। আর সেটা হল উইকেট। বিকেএসপিতে খুব বেশি ফ্ল্যাট উইকেট। ভারতে এমন সব উইকেটে খেলবেন যেখানে ব্যাটারদের পাশাপাশি বোলারদের জন্য কিছু না কিছু থাকে।’

ভারতের ক্রিকেটার পারভেজ রাসূল বেশ লম্বা সময় ধরে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত মুখ। জাতীয় দলের হয়ে তার ক্যারিয়ার ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতেই আটকে রয়েছে। অবসর না নিলেও কোনো এক অজানা কারণে জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ কাশ্মীরের এই ক্রিকেটার। কাশ্মীরের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে খেলে নিজের নাম ইতিহাসের পাতায় লিখিয়েছেন এই অলরাউন্ডার।

বর্তমানে রাসূল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে। নিউজবাংলা কথা বলেছে কাশ্মীরের এই ক্রিকেটারের সঙ্গে। পাঠকদের জন্য সে আলাপচারিতার চুম্বক অংশ দেয়া হল।

আপনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থমকে আছে একটি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে। আপনি কি জাতীয় দলে পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েছেন?

অবশ্যই। আমি আগেও বলেছি আমার হাতে করণীয় আছে শুধু একটা জিনিস, পারফরম্যান্স। নিজের সেরাটা বের করে আনার চেষ্টা করতে পারি। নির্বাচিত হওয়াটা আমার হাতে নাই। আমি তিনবার জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি। প্রথম জিম্বাবুয়ে সফরে, পরে বাংলাদেশ এবং সর্বশেষে ইংল্যান্ডে। এর আগে ভারত-এ দলের হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ৩ উইকেট নিয়েছি। আমি পারফরম করছি। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ পাইনি। কারণ মাত্র এক ম্যাচে একজন খেলোয়াড়ের সবকিছু দেখতে পাওয়া যায় না। অন্তত ২-৩টা ম্যাচ টানা সুযোগ দেওয়া উচিৎ।

ঢাকার ক্রিকেটে আপনি নিয়মিত মুখ। বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতিটা আপনি কীভাবে দেখেন?

এটা আমার চতুর্থ মৌসুম ঢাকা লিগে। আমি সত্যি উপভোগ করি এখানে খেলাটা। এখানকার ক্রিকেট সবসময় আমার কাছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মনে হয়। বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটাররা আসেন, তাদের সঙ্গে খেলেও কিছুটা হলেও উন্নতি করা যায়। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। বোলার হিসেবে ভালো মানের ব্যাটারকে বল করছেন। ব্যাটিং করার সময়ও ভালো মানের, সর্বোচ্চ পর্যায়ের বোলারকে মোকাবেলা করছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছে এমন প্রচুর খেলোয়াড় এখানে অংশ নেয়। ফলে শেখার জায়গাটা বিস্তৃত। তবে একটা জায়গায় সুক্ষ্ম পার্থক্য চোখে পড়েছে। আর সেটা হল উইকেট। বিকেএসপিতে খুব বেশি ফ্ল্যাট উইকেট। ভারতে এমন সব উইকেটে খেলবেন যেখানে ব্যাটারদের পাশাপাশি বোলারদের জন্য কিছু না কিছু থাকে।

আপনার রাজ্য থেকে এর আগে কোনো ক্রিকেটার জাতীয় দলের হয়ে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেনি। সে ক্ষেত্রে আপনি নিজেকে কীভাবে অনুপ্রাণিত করতেন?

নিজেকে এভাবে অনুপ্রাণিত করা কঠিন ছিল। ২০১২-১৩ মৌসুমে বিষেন সিং বেদি স্যার আমাদের কোচ হয়ে আসেন। উনি আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন।প্রথম দিনই উনি বলেছেন যে আমি রাজ্যের সেরা অফ স্পিনার। যা আমার মানসিকতা বদলে দিয়েছে। আমার মনে আছে একটা ট্রায়াল ম্যাচে ৩ বা ৪ উইকেট নিয়েছি। তখন বিষেন সিং স্যার নির্বাচকদের বলেন, ‘এ রাজ্য থেকে যদি কেউ প্রথম ভারতের হয়ে খেলে এই ছেলে হল সে’। নির্বাচকরা মনে করেছিল উনি মজা করছেন কারণ তারা এভাবে পর্যবেক্ষণও করেনি, ভাবেওনি। কিন্তু উনিতো কিংবদন্তী। ঐ মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে আমি ৩০ এর বেশি উইকেট ও ৫০০ এর বেশি রান করি। কয়েকটি ম্যাচ আমি জিতিয়েছি। ঐ মৌসুমের পারফরম্যান্সেই আমি ভারত-এ দলের হয়ে খেলি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

আপনি জম্মু কাশ্মীরের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ভারতের হয়ে খেলেছেন। এখন নিশ্চয়ই জম্মু কাশ্মীরের তরুণরা ক্রিকেটে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হয়?

যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছি দলের হয়ে সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছি। এখন জম্মু কাশ্মীরের ছেলেরা আরও অনুপ্রাণিত। আপনি যদি খেয়াল করেন আমার আইপিএল ও ভারতের হয়ে খেলার পর প্রচুর ক্রিকেটার উঠে আসছে ওখান থেকে। উদাহরণ হিসেবে আব্দুল সামাদ, উমরান মালিক। তারা জম্মু কাশ্মীর থেকে উঠে আসা দারুণ প্রতিভা, বেশ সম্ভাবনাময়।

জম্মু কাশ্মীরের অপর্যাপ্ত ক্রিকেট অবকাঠামো নিয়ে অভিযোগ পুরোনো। আপনি একাই লড়ে যাচ্ছেন সেখানকার পরিস্থিতি বদলে। বর্তমান অবস্থা কেমন?

অবকাঠামোর দিক থেকে এখনও সেখানে অপর্যাপ্ত অবস্থা। যখন আমি আইপিএল ও ভারতের হয়ে খেলি আমার খুব দৃঢ় বিশ্বাস ছিল জম্মু কাশ্মীর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন বোধহয় এবার নতুনভাবে ভাববে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা যেভাবে এগোনো দরকার সেভাবে করেনি। কিছুটা উন্নতি হয়েছে ঠিক, তবে সেটা পর্যাপ্ত নয়। যেটা হয়েছে সেটা ৩০ শতাংশও বলা যায় না। যদি ভারতের অন্য রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে সেটা হয়তো ১৫-২০ শতাংশ হবে। আমাদের মাত্র একটা মাঠ।

বাংলাদেশের বিপক্ষে উইকেট পাওয়ার পর উচ্ছ্বসিত রাসূল। ছবি: সংগৃহীত

কোনো নির্দিষ্ট কারণ কি আছে এর পেছনে?

আমি জানি না। আমি কোনো নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাই না কেন তারা পিছিয়ে থাকে। উন্নতি করে না। এটার পুরো দায়িত্ব অ্যাসোসিয়েশনের। প্রতি বছর বিসিসিআই টাকা দিচ্ছে, তারা ক্রিকেটের ভালোর জন্য সবসময় সবকিছু করছে। ক্রিকেট উন্নতিতে বিসিসিআই সবার জন্য উন্মুক্ত। দিন শেষে আমি কোনো উত্তর খুঁজে পাই না কেন আমাদের অ্যাসোসিয়েশন অবকাঠামোর দিক থেকে উন্নতি করতে পারছে না কিংবা করে না।

আপনার বোলিং উন্নতিতে বিষেন সিং বেদীর একটা প্রভাব আছে। তার সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?

এটা আলাদা করে আর বলার অপেক্ষা রাখে না কতটা প্রভাব রেখেছে। আমার মনে পড়ে অনুশীলন শেষে আমরা সবাই একটা জায়গায় উনার সামনে বসতাম। উনি একের পর এক গল্প শোনাতেন আমাদের। উনি বলতেন, ‘এগোবে ও লড়বে। শুধু অংশগ্রহণ করার জন্য যাওয়ার দরকার নেই।’ উনি আমাদের কোচ হয়ে আসার পর রাজ্য দলের পারফরম্যান্সও বদলে গিয়েছে।

আইপিএলে পুনে ওয়ারিয়র্সের হয়ে নাম লেখানোর আগে আপনাকে চারটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলে নিতে চেয়েছে। অথচ এখন নিলামে অবিক্রিত থাকেন। ব্যাপারটা কেমন লাগে?

হ্যাঁ, আমাকে ৪টা দল প্রস্তাব দিয়েছিল। আমি পুনে ওয়ারিয়র্সের হয়ে ডাক পাই প্রথমে। ২০১৩ সালে দুই ম্যাচের বেশি খেলার সুযোগ পাইনি। পরের মৌসুমে আবারও দেশসেরা অলরাউন্ডার নির্বাচিত হই (ঘরোয়া ক্রিকেটে)। আবারও সুযোগ পাই সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে। দুই মৌসুম সেখানে কাটিয়ে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে যোগ দিই। আইপিএলেও আমি সেভাবে সুযোগ পাইনি, জানি না ঠিক কেন।

গত ৩-৪ মৌসুমে আমি ১০০ এর বেশি উইকেট ও প্রায় ১ হাজারের মতো রান করেছি। ভালো পারফর্ম করছি। এটাই আমার কাজ। আমার কাজটাই আমি করে যেতে পারি, নির্বাচন তো আর আমার হাতে নেই। বিষেন সিং বেদি স্যার সবসময় বলতেন নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমন সব জিনিসই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে।

শেখ জামালের হয়ে পাঁচ উইকেট নেয়ার পর রাসূল। ছবি: ডিপিএল

ভারতে ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা খেলোয়ারদেরও নানাভাবে পুরস্কৃত করা হয়। আপনার কি মনে হয় বাংলাদেশেও ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য এমন উদ্যোগ, স্বীকৃতি থাকা উচিৎ?

অবশ্যই। ভারতে প্রতি বছর এই পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকে, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এটা ক্রিকেটারদের ভারতের হয়ে ও ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলতে নিশ্চিতভাবে অনুপ্রাণিত করে। এই সিস্টেমটা এখানেও সংযুক্ত করা উচিৎ বলে আমার মনে হয়। এটা ক্রিকেটারদের উৎসাহী করবে। তরুণ ক্রিকেটাররা বছরের সেরা ব্যাটার, বোলার, অলরাউন্ডার পুরস্কার জেতার জন্য নিজেদের আরও বেশি নিংড়ে দিবে।

আপনার দল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব গ্রুপ পর্ব শেষ করেছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে। শিরোপা জয়ের দারুণ সুযোগ সামনে। দলের পরিবেশটা কেমন এখন?

টুর্নামেন্টের শুরুতে যদি দেখেন কাগজে-কলমে আমরা গড়পড়তা একটা দলই ছিলাম। কিন্তু আমরা দারুণ করছি। আমাদের ম্যানেজমেন্টকেও কৃতিত্ব দিতে হবে। যারা ক্রিকেটারদের জন্য চমৎকার পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। আমাদের সিনিয়র ও জুনিয়র ক্রিকেটারের ভালো একটা সমন্বয় আছে। টুর্নামেন্টে আমাদের টেনে নিচ্ছে বোলাররা। আমাদের বোলিং আক্রমণ অসম্ভব ভালো। দেড় শর কম নিচে পুঁজি নিয়েও ম্যাচ জিতেছি। ১৯০ করে ম্যাচ জিতেছি। তবে সুপার লিগে আমাদের ব্যাটারদের আরও দায়িত্ববান হতে হবে।

আপনি নিজেও বল হাতে দারুণ করছেন। টুর্নামেন্ট শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমার একটা লক্ষ্য যেন দলে অবদান রাখতে পারি। এটাই আমার মূল কাজ। ব্যাটিং দিয়েও চেষ্টা থাকে যদিও উপরর দিকে সেভাবে সুযোগ হয়নি কম্বিনেশনের জন্য। একটা ম্যাচে উপরের দিকে খেলতে পেরেছি, তো যখনই সুযোগ আসবে নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করবো দলের জন্য।

এ বিভাগের আরো খবর