ব্রাজিল দূতাবাস ও বাংলাদেশ ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ব্রাজিলে যাচ্ছে ১১ কিশোর ফুটবলার। ব্যাকআপ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে আরও চারজন।
এই দলের তিন খেলোয়াড় এসেছে হবিগঞ্জের ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন প্রতিষ্ঠিত সুমন ফুটবল অ্যাকাডেমি থেকে।
ব্যারিস্টার সুমন অ্যাকাডেমি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন- হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ত্রিপুরা পল্লীর সূর্য্য দেব বর্মার ছেলে অনিক দেব বর্মা, বেগম খান চা বাগানের শ্রমিক সুজন বাগতির ছেলে শংকর বাগতি ও ঘরগাঁও গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে রনি মিয়া হাবিব।
তাদের এই সাফল্যে ফুটবল অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও উল্লসিত। তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসন।সুমন ফুটবল অ্যাকাডেমির ম্যানেজার সাজি-উল ইসলাম বলেন, ‘সারাদেশ থেকে মাত্র ১১ জন খেলোয়াড়কে ব্রাজিল যাওয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আমাদের অ্যাকাডেমির তিনজন রয়েছে। প্রতিষ্ঠার মাত্র ২ বছরেই এ অর্জন আমাদেরকে আনন্দিত ও উৎসাহিত করেছে। আমাদের এই তিন খেলোয়াড়ের জন্য দেশবাসীর দোয়া ও ভালোবাসা কামনা করছি।’
অনিক দেববর্মা ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সন্তান। তারা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের একটি টিলায় বসবাস করে। তার বাবা সূর্য্য দেব বর্মা বনের ভেতর লেবু চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। শংকর বাগতির বাবা সুজন বাগতি চা বাগানের শ্রমিক।পরিবারকে সহায়তা করার জন্য এক বছর আগে খেলা ছেড়ে দিয়েছিল শংকর। পরে ব্যারিস্টার সুমন তাকে চা বাগানের ভেতরে একটি মুদি দোকান খুলে দেন। খেলাধুলার পাশাপাশি দোকানের আয় থেকেই চলে তার পরিবার।আরেক খেলোয়াড় রনি মিয়ার বাবা তৈয়ব আলী ও তার বড় ভাই দিনমজুরি করে সংসার চালান।রনি মিয়া বলে, ‘ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলতে ভালোবাসতাম। তবে কাজের জন্য খেলা থেকে হারিয়ে গিয়েছিলাম। ২০১৭ সালে খেলাধুলা একেবারে ছেড়ে দিয়ে কাজে লেগে যাই। ২০১৯ সালে সুমন ভাই আমাদেরকে আবার খেলায় ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এ জন্য প্রথমেই সুমন ভাইকে ধন্যবাদ জানাই।’অনিক দেব বর্মা বলেন, ‘আমরা কতটা খুশি তা বলে বোঝাতে পারব না। সবার কাছে দোয়া চাই- আমরা যেন ব্রাজিলে গিয়ে সুন্দরভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করে ফুটবলে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারি।’
শংকর বাগতি বলে, ‘আমি যতটুকু এগিয়েছি সবটুকু সুমন ভাইয়েরর জন্য। অ্যাকাডেমি আমাকে খুবই ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সংসার চালাতে সমস্যার কারণে আমি প্রশিক্ষণে আসতে পারতাম না। তখন তিনি আমাকে একটি দোকান খুলে দেন।’বৃহস্পতিবার এই তিন খেলোয়াড়ের পাসপোর্টসহ অন্যান্য খরচের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান। এ সময় তিনি বলেন, 'সব সময় আমি ওদের পাশে আছি। জেলা প্রশাসন ও ক্রীড়া সংস্থা থেকে ওদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে- যতনে রতন মেলে। এই ছেলেগুলোকে অভাব থেকে বের করে এনে আমি সেটাই প্রমাণ করছি। এখন এরা বাংলাদেশের স্টার হয়ে গেছে।’