বাংলাদেশ ক্রিকেটের উত্থান পর্বে প্রতিভার কমতি কখনই ছিল না। নাসির হোসেন, মোসাদ্দেক সৈকত, এনামুল বিজয়, সাব্বির রহমান তালিকাটা নেহাত ছোট নয়।
এদের সবারই ছিল একই ধরনের সমস্যা। ধারাবাহিকতা ও পরিপক্বতার অভাব। ম্যাচের ক্রাইসিস মুহূর্তে বাজে শট খেলে আউট হয়েছেন এমন উদাহরণ দেয়া যাবে অসংখ্য।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে যখন বাংলাদেশ ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে, প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন দেশের চার সেরা ক্রিকেটার, তখন চট্টগ্রামে আফগানদের দেয়া ২১৬ রানের ছোট লক্ষ্যটিকেও মনে হচ্ছিল নাগালের বহু দূরে।
সেখান থেকে দায়িত্ব নিলেন মেহেদী মিরাজ ও আফিফ হোসেন। বয়সে তরুণ হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাঁচা বলা যাবে না দুজনের একজনকেও।
২৪ বছরের মিরাজ সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাটিয়ে দিয়েছেন ৬ বছর। আর আফিফ জাতীয় দলের ক্যাপ পেয়েছেন ৪ বছর আগে।
তারপরও বয়সের কারণে ও পুরোনো ‘তরুণদের’ কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশকে ম্যাচে সুযোগ দিতে রাজি ছিলেন না কোনো ভক্ত-দর্শক।
তবে সে ধারণা যেন ভাঙলেন মিরাজ ও আফিফ। দলের সিনিয়ররা যখন ব্যর্থ, সে সময় বাংলাদেশের হয়ে রেকর্ড জুটি গড়ে নিজেদের পরিণত হওয়ার বার্তা পৌঁছে দিলেন এ দুজন।
৩৭.৩ ওভার খেলে ১৭৪ রান করেছেন দুজন। তার চেয়েও বড় কথা আফিফ ও মিরাজের ব্যাট থেকে একবারের জন্য আসেনি কোনো ফলস শট।
ক্রিকেটের বেসিক ঠিক রেখে অধিকাংশ রান তারা বের করেছেন স্কয়্যার অফ দ্য উইকেটে। আফিফের পছন্দ ছিল লেগ সাইড। মিরাজ বেশি রান পেয়েছেন অফ থেকে।
২০১৮ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৭ম উইকেটে সাইফউদ্দিনকে নিয়ে ইমরুল কায়েস গড়েন ১২৭ রানের জুটি।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগ পর্যন্ত এটিই ছিল ৭ম উইকেটে বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপ। বুধবার সে রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়লেন মিরাজ আর আফিফ। নতুন রেকর্ড গড়ে দলকে এনে দিয়েছেন ৪ উইকেটের জয়।
রেকর্ড জুটি গড়ার পাশাপাশি আফিফ তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক। আর মিরাজ দ্বিতীয়। আফিফের ৯৩* ও মিরাজের ৮১* এর ইনিংস তাদের দুজনের ক্যারিয়ার সেরা।
যে ৩৭ ওভার ব্যাট করেছেন দুজন তার মধ্যে ইনিংসে ৪০তম ওভারের আগে এক ওভারে ৬-এর বেশি রান নিয়েছেন মাত্র চারবার। এ থেকে বোঝা যায় মাথা ঠান্ডা রেখে কতটা হিসাব করে খেলেছেন দুজন।
মিরাজ-আফিফ মিলে আক্রমণ যে করেননি তাও নয়। ২১টি বাউন্ডারি মেরেছেন দুজন। এর মধ্যে ছিল একটি ছক্কা।
পরিণত মস্তিষ্কের পরিচয়টা একেবারে শেষে দারুণ এক উদাহরণে রাখেন আফিফ ও মিরাজ। ১২ বল বাকি থাকতে মাত্র ৪ রান দূরে ছিল টাইগাররা।
তাড়াহুড়ো করেননি তারা। প্রথম বল ডট খেলে দ্বিতীয় বলে স্ট্রাইক বদল করেন মিরাজ। আফিফ তৃতীয় বলে ডাবল নেন।
১ রান দূরে যখন দল, তখন গুলবাদিন নাইবের বল ব্লক করেন আফিফ। ডট দেন। জয়ের জন্য অপেক্ষা বাড়লেও সেটি নিশ্চিত না করে ফিরে আসতে চাননি তিনি।
পরের বলে দারুণ বাউন্ডারি মেরে দলকে পৌঁছে দেন লক্ষ্যে। ম্যাচের জয়ের পাশাপাশি এ দুজনের পরিপক্ব ব্যাটিং যে বাড়তি প্রাপ্তি সেটা হয়তো এখন আর স্বীকার করে নিতে দ্বিধা নেই দর্শকদের।