করোনা বিধিনিষেধের কঠিন বেড়াজালে চীনের বেইজিংয়ে শুরু হয়েছে শীতকালীন অলিম্পিক গেমস।
শুক্রবার জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হয়েছে স্টেডিয়ামে দর্শকশূন্য এই আসরের। বেইজিং-২০২২ অলিম্পিকের স্লোগান হল- ‘অভিন্ন ভবিষ্যতের জন্য একসঙ্গে পথচলা’।
এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনন্য এক রেকর্ড গড়ল বেইজিং। এটিই একমাত্র শহর যেটি গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন দুই অলিম্পিকেরই স্বাগতিক শহর হওয়ার মর্যাদা লাভ করল। রাজধানী বেইজিং থেকে প্রায় ৪৭ কিলেমিটার দূরে ইয়ানকিং ও ঝাংজিয়াকু প্রদেশে এই অলিম্পিকের ইভেন্টগুলো হবে।
এই শীতকালীন অলিম্পিক চলবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর এই আসরে ১০৯টি আলাদা ইভেন্টে প্রতিযোগিতা করবেন প্রায় তিন হাজার অ্যাথলেট।
বিশ্বের ৯০টি দেশ থেকে অ্যাথলেট, কোচ, অফিসিয়াল, ফেডারেশনের ডেলিগেটস ও মিডিয়াসহ প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পুরো আসরে থাকবেন বায়ো বাবলের মধ্যে।
শীতকালীন অলিম্পিক শেষে আগামী ৪ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত এখানে হবে শীতকালীন প্যারাঅলিম্পিক্স। ওই আয়োজনে ৭৮টি ইভেন্টে প্রতিযোগিতা করবেন প্রায় সাড়ে সাতশ’ অ্যাথলেট।
এদিকে বিশ্বের অন্যতম বড় এই ক্রীড়া আসর শুরু হওয়ার আগেই করোনার থাবা পড়েছে অলিম্পিক ভিলেজে। ২৩ জানুয়ারি থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ২৮৭ জন অলিম্পিক-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
চীন কোভিড সংক্রমণ রুখতে দেশটি ‘জিরো কোভিড’ নীতি নিয়েছে। সেই কঠোর নীতি বাস্তবায়নে নতুন করে তোড়াজোড় চলছে দেশটিতে।
এ অবস্থায় সাধারণ চীনা নাগরিকরা বেইজিং অলিম্পিক ভেন্যুতে ঢোকার অনুমতি পাচ্ছেন না। কোভিডের কারণে সাধারণ জনগণের জন্য কোনো টিকেট বিক্রি করছে না কর্তৃপক্ষ। টোকিও অলিম্পিকের মতো এই আসরেও গ্যালারি দর্শক-শূন্য থাকছে। দর্শক থাকার সুযোগ রাখা হয়নি এখানেও। সাধারণ মানুষকে অলিম্পিক দেখতে হবে ঘরে বসে টেলিভিশনের পর্দায়।
করোনাভাইরাস যাতে না ছড়ায় তার জন্য অ্যাথলেট এবং কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে অলিম্পিক এলাকার ভেতরে। সেখানেও তাদের থাকতে হচ্ছে নির্দিষ্টভাবে বেঁধে দেয়া গণ্ডি বা বাবল-এর মাঝে।
একটি বাবল্ থেকে আরেকটি বাবলে যাওয়ার প্রয়োজন হলে ব্যবহার করতে হবে সরকারি গাড়ি। তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে গাড়ি কোন দুর্ঘটনায় পড়লেও সেখানে তারা যেন কোনো অবস্থাতেই সাধারণ মানুষের সামনাসামনি না যান; তারা যেন নিজেদের গাড়ির ভেতরেই থাকেন।
কোভিডের কড়াকড়ি ছাড়াও এই অলিম্পিকের আরেকটি বিশেষ দিক হল- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং আরও ১২টির মতো দেশের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা এই অলিম্পিক বয়কট করেছেন। চীনের মানবাধিকার লংঘনের ইস্যু তুলে তারা এই অলিম্পিকে যোগ দেননি।
চীনের সরকার ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো অলিম্পিকস আয়োজনে খরচ করছে ৩৯০ কোটি ডলার।
স্কেটিংসহ কিছু ইভেন্ট হচ্ছে বেইজিংয়ের বিভিন্ন স্টেডিয়ামে।
স্কি ও স্নো-বোর্ডিং জাতীয় ইভেন্ট- যেগুলোর জন্য উন্মুক্ত জায়গা প্রয়োজন- সেগুলো হবে বেইজিংয়ের কিছুটা বাইরে। এসব জায়গায় যেহেতু তুষারপাত হয় খুবই কম, তাই চীন প্রায় ১২ লাখ ঘনমিটার কৃত্রিম তুষার তৈরি করেছে।
রাশিয়ার সোচিতে ২০১৪ সালে শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজনের সময় সেখানেও কৃত্রিমভাবে তুষার তৈরি করা হয়েছিল। কারণ সোচি রাশিয়ার সবচেয়ে উষ্ণ অঞ্চলগুলোর একটি।