২০০৩ সালে সবশেষ সাফের শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। প্রায় দেড় যুগেরও সময় ধরে শিরোপা খরায় ভুগছে জাতীয় দল। এর মাঝে কোচ আসা- যাওয়ার মিছিল। পূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজারে দিনদিন যেন পিছিয়ে পড়ছে দেশের ফুটবল!
যেখানে পিছিয়ে থাকা প্রতিবেশী দেশগুলো তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ পেছাচ্ছে কেন?
ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিছিয়ে থাকার রোগের ওষুধটা তৃণমূলের ফুটবলে। শিশু ফুটবলই জাতীয় দলের উন্নতির চাবি-কাঠি। জাতীয় দলের সাফল্য পেতে কাজ করতে হবে শিশু ফুটবল নিয়ে।
বিষয়টার ব্যাখ্যা করেছেন বাংলাদেশকে ২০০৫ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে তোলা সাবেক কোচ ডিয়েগো ক্রুসিয়ানি।
এ আর্জেন্টাইন কোচ বলেন, ‘আমাদের দেশসহ (আর্জেন্টিনা) ইউরোপ, আমেরিকায় যে জায়গা নিয়ে বেশি কাজ হয় তা হলো ফর্মেশন। বাচ্চাদের থেকে শুরু করে কিশোরদের-সব জায়গায় এ নিয়ে কাজ হয়। বাংলাদেশেও এ নিয়ে কাজ হওয়া উচিত। এটাই সাফল্যের চাবিকাঠি।
জাতীয় দলের চিরচরিত রোগ গোলস্কোরিংয়ের সমস্যার সমাধানও এর মধ্যে আছে মনে করেন তিনি, ‘উদাহরণ হিসেবে বলা যায়-আমাদের বেশি বেশি স্ট্রাইকার, গোলস্কোরার লাগবে। তৃণমূলে যদি এ নিয়ে কাজ করা যায় সাফল্য আসবেই।’
দেশে শিশু ফুটবল বলতে তেমন কিছুই নেই। গ্রাম বা শহরে শিশু ফুটবল নিয়ে কাজ হচ্ছে তা বলার সুযোগ নেই। যত টুর্নামেন্ট রয়েছে সবই ১২ বছরের ওপরে। তার নিচে বা ৫ থেকে শুরু করে তার ওপরের কোনোও টুর্নামেন্ট হয় না এ দেশে।
ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে ভর্তি শুরু হয় ১২-১৩ বছর থেকে। সুতরাং সেখানে কিশোর ফুটবলের উন্নয়ন আসলেও শিশু ফুটবলের উন্নয়ন ছায়ায় রয়ে যাচ্ছে।
বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা মনে করিয়ে দিলেন দেশের একমাত্র উয়েফা প্রো লাইসেন্স প্রাপ্ত কোচ মারুফুল হক।
জাতীয় দলের সাবেক এক কোচ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিশু বলতে বাংলাদেশে যা বোঝায় তাহলো ১২ বছরের ওপরে। মোটেও তা শিশু নয়। ওই বয়সে পা মোটামুটি শক্ত হয়ে যায়। একদম ছোট বয়স অর্থাৎ ৪-৫ বছর থেকে ফুটবল উন্নয়ন করলে বড় হয়ে আরও পরিপক্ক হবে তারা।’
দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্লাবগুলোর দশা আরও করুণ। কোনও ক্লাবের কোনও একাডেমি নেই। নেই বয়সভিত্তিক ক্লাব কোনো কার্যক্রম। শুধু নামে মাত্র অনূর্ধ্ব-১৮ বছরের টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। সেটাও এএফসি-ফিফার গাইডলাইনের চাপে পড়ে। রীতিমত ধার-দেনা করে খেলোয়াড়দের এ টুর্নামেন্টে অংশ নেয় শীর্ষ ক্লাবগুলো।
জেলা ও বিভাগ পর্যায়েও শিশু ফুটবল নিয়ে কার্যক্রম নাই। অবহেলিত থেকে গেছে ফুটবল শেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি।
আর এ জায়গায় কার্যক্রম বাড়িয়ে ভারত-মালদ্বীপের মতো দেশগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। এমনটা মনে করেন ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ও স্পেনের শিশু ফুটবলে কাজ করা বিদেশি কোচ হাভিয়ের কাবরেরা।
এ স্প্যানিশ কোচ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের কী অবস্থা তা বলতে পারি না। তবে ভারতে শিশু ফুটবলের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। তার ফলও তারা এক যুগের মধ্যে পেয়ে যাবে।’
শিশু ফুটবলের সঙ্গে দেশের ফুটবল অবকাঠামো উন্নয়নটাও এগিয়ে নেয়ার বিকল্প নাই। দেশের তথাকথিত সর্বোচ্চ পেশাদার লিগের কোনোও ক্লাবেরই ‘হোম গ্রাউন্ড’ নাই। বা নিজস্ব ক্লাবের মাঠকে হোম ভেন্যু হিসেবে খেলা হয় না লিগে।
এমনকি মোহামেডান-সাইফসহ বেশিরভাগ ক্লাবের নাই অনুশীলন করার মাঠ। ভাড়া করা মাঠে খেলতে হয় ক্লাবগুলোকে।
সেজন্য শিশু ফুটবলের সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি বলছেন ডিয়েগো ক্রুসিয়ানি।
তিনি বলেন, ‘শুধু শিশু-কিশোরদের নিয়ে কাজ করলেই হবে না। অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। আফ্রিকায় দেখবেন বাচ্চারা রাস্তা থেকে শুরু করে সবখানেই ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত। এটাই তো পার্থক্য।’