বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নারী ফুটবলাররা বেতনভুক্ত, পুরুষ খেলছে বিনা বেতনে

  •    
  • ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ১০:১৩

বাফুফে কর্তাদের আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে পুরুষ ফুটবলারদের বেতন কাঠামোর পরিকল্পনা। তবে আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আশাবাদী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ।

সাফ অনূর্ধ্ব ১৯ নারী ফুটবলে বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের পর উচ্ছ্বাস এখন দেশজুড়ে। তবে এর সঙ্গে নারী খেলোয়াড়দের সীমিত আর্থিক সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি নতুন করে এসেছে আলোচনায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই নারী ফুটবলারদের মাসে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা বেতন পাওয়ার তথ্য দিয়ে এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাদের দাবি, পুরুষ ফুটবলারদের তুলনায় ব্যাপক বেতন বৈষম্যের শিকার নারী খেলোয়াড়েরা।

তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাফুফের বেতন কাঠামোর আওতায় কেবল নারী ফুটবলাররাই আছেন, জাতীয় দলের পুরুষ খেলোয়াড়দের কোনো বেতন নেই। তবে ক্লাব ফুটবলে নারীদের তুলনায় অনেক বেশি পারিশ্রমিক পান পুরুষ খেলোয়াড়রা।

এ বছর কাঠামোতে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া বাফুফের ফান্ডে সমস্যা আছে। আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে পুরুষ ফুটবলাররা বেতন কাঠামোর মধ্যে আসবে বলে আশা করছি।

২০১৯ সাল থেকে বেতন কাঠামোর আওতাভুক্ত হোন দেশের নারী ফুটবলাররা। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সাবিনা-কৃষ্ণা-মারিয়াসহ ৩৬ ফুটবলারকে বেতনের আওতায় নিয়ে আসে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। নারী খেলোয়াড়দের বেতনের পরিমাণ খুব বেশি না হলেও এখন পর্যন্ত এ কাঠামোর আওতাভুক্ত হয়নি পুরুষ ফুটবল।

জাতীয় দলে খেলার জন্য জামাল ভূঁইয়াদের কোনো বেতন দেয়া হয় না। ক্যাম্পে থাকাকালীন নামমাত্র খরচ আর ম্যাচ ফি পেয়ে থাকেন জাতীয় দলের ফুটবলাররা।

পুরুষ ফুটবলারদের আয়ের একমাত্র উৎস ক্লাব ফুটবল। ক্লাবের চুক্তি অনুসারে পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন ফুটবলাররা।

চলতি বছরের গত জুনে অবশ্য পুরুষ ফুটবলারদের বেতন কাঠামোয় আনার বিষয়ে আশ্বাস দেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।

ঘরোয়া ফুটবলের পাঁচ খেলোয়াড় বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ, ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান, আবাহনীর ডিফেন্ডার টুটুল হোসেন, ফরোয়ার্ড সাদ উদ্দিন এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলামকে ডেকে বাফুফে ভবনে বেতন কাঠামো নিয়ে আলোচনা করেন বাফুফে সভাপতি।

খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনার সময় কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ৩০ জন ফুটবলারকে তিনটি গ্রেড-এর আওতায় এনে বেতন দেয়ার পরিকল্পনা করছে বাফুফে।

জাতীয় দলের প্রতি খেলোয়াড়দের আগ্রহ তৈরি করতেই এমন চিন্তা করা হচ্ছে উল্লেখ করে বাফুফে সভাপতি সে সময় সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘শুনেছি খেলোয়াড়েরা পা বাঁচিয়ে খেলে। জানি না সত্য নাকি মিথ্যা। এ জন্য চিন্তা করলাম এটা করলে হয়তো ভালো হবে।’

তবে এর ছয় মাস পরও কর্তাদের আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে পুরুষ ফুটবলারদের বেতন কাঠামোর আওতায় আনার পরিকল্পনা।

আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আশাবাদী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ।

তিনি বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা বিশেষ প্রক্রিয়া। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি বলেছি। তিনি আমাদের বিষয়ে ইতিবাচক। তবে সময় লাগবে একটু। এ বছর কাঠামোতে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া বাফুফের ফান্ডে সমস্যা আছে। আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে পুরুষ ফুটবলাররা বেতন কাঠামোর মধ্যে আসবে বলে আশা করছি।’

অন্যদিকে, নারী খেলোয়াড়রা বেতনভুক্ত হলেও ক্লাবে পর্যায়ে অনেক কম পারিশ্রমিক পান সাবিনা-কৃষ্ণারা। সর্বোচ্চ ৩-৪ লাখ টাকা, যেখানে তপু-জামালরা অর্ধকোটির উপরে আয় করেন।

ক্লাব পর্যায়ে এমন পার্থক্য কেন ব্যাখ্যা দিয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের টেকনিক্যাল ও স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর জুবায়ের নিপু।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্লাবে মেয়েদের বেতন কম পাওয়ার কারণ মেয়েদের ক্লাব ফুটবল টুর্নামেন্টে প্রতিযোগিতার অভাব। টুর্নামেন্টে যত বেশি প্রতিযোগিতা হবে তত বেশি বেতন বাড়বে। তপু-জামালদের মতোও বেতন হতে পারে যদি সে রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক টুর্নামেন্ট হয়।’

নারী ফুটবলারদের আবাসিক ক্যাম্পে রেখে বছর জুড়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি বেতনের আওতায় আনার বিষয়টিকে ইতিবাচক উল্লেখ করে সাবেক এ বাফুফে কর্মকর্তা বলেন, ‘মেয়েদেরকে ক্যাম্পে রেখে বাফুফে সারা বছর যেভাবে ট্রেনিং দিচ্ছে এটা প্রশংসার দাবিদার। তবে, পরিচর্যা আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে মেয়েদের। সঙ্গে বেতনও বাড়ানো যেতে পারে। তারা শিরোপা এনে দিচ্ছে।’

খেলোয়াড়রা শুধু গর্বের জায়গা থেকে জাতীয় দলে খেলে যায়, কিন্তু তারা কোনো বেতন পায় না। তাদের যদি বেতনের আওতাভুক্ত করা যায় তাহলে খেলার প্রতি আত্মনিবেদন ও গুরুত্ব আরও বাড়বে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, বাফুফে কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়

পুরুষ ফুটবলারদের ফেডারেশন থেকে বেতন কাঠামোর মধ্যে আনার পরিকল্পনা পক্ষে মত দিয়েছেন নিপু।

তিনি বলেন, ‘খেলোয়াড়রা শুধু গর্বের জায়গা থেকে জাতীয় দলে খেলে যায়, কিন্তু তারা কোনো বেতন পায় না। তাদের যদি বেতনের আওতাভুক্ত করা যায় তাহলে খেলার প্রতি আত্মনিবেদন ও গুরুত্ব আরও বাড়বে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, বাফুফে কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়।

‘এক্ষেত্রে সরকারও এগিয়ে আসতে পারে। অথবা বাফুফে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে সমন্বয় করতে পারে বিষয়টা নিয়ে। বেশি না, খেলোয়াড়দের ১৫-২০ হাজার টাকা দিলেও আরও ইতিবাচকতা আনা সম্ভব।’

বেতন কাঠামোর মধ্যে জাতীয় দলের ফুটবলারদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি ইতিবাচক হবে বলে মনে করছেন জাতীয় দলের গোলকিপার আশরাফুল ইসলাম রানা। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেতন কাঠামো থাকলে এটা অবশ্যই একটা খেলোয়াড়ের মধ্যে দায়িত্ববোধ বাড়াবে। খেলোয়াড়দের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা বাড়বে। সবাই ভালো করার চেষ্টা করবে, যা খেলোয়াড়দের উৎসাহ বাড়িয়ে দেবে।’

এ বিভাগের আরো খবর