দীর্ঘ নয় মাসের ১৯৭১ সালের যুদ্ধে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম হয় ‘বাংলাদেশের’। অস্ত্র হাতে মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেন। তবে, বন্দুক নয়, ফুটবল পায়ে এক দল নির্ভীক তরুণ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। দলটি ছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।
পৃথিবীর ইতিহাসে এই লড়াই বিরল। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ১৭টি প্রীতি ম্যাচ খেলে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল আয় করেছিল প্রায় ১৬ লাখ ৩৩ হাজার রুপি। সেই টাকা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুদান হিসেবে উপহার দেয় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।
সেই গল্প অজানা নয়। তবে, দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও জাতীয় স্বীকৃতি মেলেনি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের। এতো বছরে জাতীয় কোনো পুরস্কার না পাওয়াতে অবশ্য আক্ষেপ নেই তাদের। আছে আশাবাদ।
দলের অনেকে এখন না ফেরার দেশে। যারা বেঁচে আছে তাদের শেষ আশা, দেশ কখনও না কখনও স্বীকৃতি দেবে তাদের এই ইতিহাসকে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে নিউজবাংলাকে নিজের ইচ্ছার কথা জানালেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু। তিনি বলেন, ‘যারা জীবন বাজি রেখে ফুটবল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তাদের জাতীয় স্বীকৃতি দেবে দেশ এটাই শুধু চাওয়া।’
দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ক্রীড়া ও যুব মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘ধন্যবাদ দিতে চাই তাদের যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় এমন দল গঠন করেছিল যা ছিল নজির বিহীন। যাদের কারনে যাদের অবদান, ত্যাগের কারনে স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করতে পারছি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যুদ্ধের সময় তারা বসে না থেকে ফুটবলের মাধ্যমে তারা যুদ্ধ করেছে।
‘টাকার অংক দিয়ে বিচার করতে চাইনা। তারা যা করেছে তা কোন কিছু দিয়ে তুলনা করা যাবে না।’
জাতীয় স্বীকৃতির জন্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে বিষয়টি আবারও জানাব। আপাতত ২৭ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দেবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় অনুমোদন ছাড়াই বাংলাদেশের পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সাহস করেছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।
সেই রোমাঞ্চকর গল্পে স্মৃতিচারণ করে দলের সংগঠক সাইদুর রহমান প্যাটেল বলেন, ‘নদীয়ার কৃষ্ণনগর মাঠে ২৫ জুলাই, স্টেডিয়ামের আশেপাশে বড় গাছ ছিল। উক্ত মাঠে তিল ধরার ঠাই ছিল না দর্শকের কারণে। গাছে উঠেও মানুষ খেলা দেখেছে।
‘বাংলাদেশ কে অফিসিয়াল অনুমোদন দেয়া হয়নি পতাকা উড়ানোর ও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার। আমরা বেকে বসি খেলব না। খেলা শুরু না হওয়ায় দর্শকেরা উত্তেজিত হয়ে যায়। পরে বোস বাবু ও সেখানকার ফেডারেশন অনুমতি দেয়। সমস্ত মাঠ জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু নামে মুখরিত হয় পুরা স্টেডিয়ামে।’