ইন্টারন্যাশনাল বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের (এআইবিএ) বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে নভেম্বরে সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে গিয়েছিল আফগানিস্তানের একট বক্সিং দল। তাদের ১১ জন দেশে ফিরতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
১১ বক্সারের সঙ্গে দুজন কর্মকর্তাও রয়েছেন, যারা বেলগ্রেডে থেকে গেছেন। পুরো দলটি এখন শহরের বিভিন্ন হোটেলে থাকছে।
দলের সদস্য ১৯ বছর বয়সী লাইটওয়েইট বক্সার ও আফগানিস্তানে নিজের ক্যাটাগরিতে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হাসিব মালিকজাদা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, তারা তালেবানের ভয়ে দেশে ফিরছেন না। দেশের ফিরলে অনেকের প্রাণহানির আশঙ্কা আছে।
তিনি যোগ করেন, ‘তালেবান আসার পর আমরা বক্সিং চালিয়ে যেতে পারছিলাম না। জিম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।’
তার দুই ভাই তালেবান সরকারের বিরোধী পক্ষে যোগ দেন ও পাঞ্জশিরে যুদ্ধ করেন। যে কারণে মৃত্যভয় তার বেশি।
মালিকজাদা বলেন, ‘তালেবানরা আমাদের খুঁজে পেলে মেরে ফেলবে।’
আফগানিস্তানের যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থার মধ্যেই মালিকজাদার মতো বক্সাররা নিজেদের অনুশীলন চালিয়ে গেছেন।চারদিকের তাণ্ডবলীলার মাঝে তারা অনুশীলনের সময়টুকুতে শান্তি খুঁজে পেতেন বলে জানান ২০ বছর বয়সী তওফিকুল্লাহ সোলাইমানি।
তিনি বলেন, ‘বক্সিং আমাদের শরীর, স্বাস্থ্য ও মনকে প্রফুল্ল রাখত।’
তালেবানের প্রথম শাসনামলে ১৯৯০-এর দশকে বক্সিংকে নিষিদ্ধ করা হয়। এবারও তাই তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে বক্সাররা গোপনে অনুশীলন করতেন ও সরঞ্জাম লুকিয়ে রাখতেন।সার্বিয়ায় তারা এসেছেন সীমানা পেরিয়ে ইরান হয়ে। তেহরানে তাদের টুর্নামেন্টের আগ মুহূর্তে সার্বিয়ার ভিসা দেয়া হয়।
এত সমস্যার মাঝেও নিজেদের খেলা চালিয়ে গেছেন আফগান বক্সাররা। সার্বিয়ায় আসার পর খুব ভালো করে বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ না পেলেও অনুশীলন চালিয়ে গেছেন বলে জানান আফগান বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল্লাহ হামিদি।
হামিদি এএফপিকে বলেন, ‘আমি দেশ থেকে অনেক সতর্ক বার্তা পাচ্ছি। পরিবার ও বন্ধুরা বলছে দেশে না ফিরতে।’
দুই বছর আগে তালেবানের হাতে তার বাবা নিহত হন। হামিদির বাবা বক্সিং ফেডারশনের কর্মকর্তা ছিলেন। বক্সিংয়ে নারীদের অনুমতি দেয়ার জন্য তাকে হত্যা করা হয়।
পরিস্থিতি ঠিক না হলে দেশে ফিরতে চান না বক্সাররা। তবে শরণার্থীর জীবন নিয়ে কেউই সন্তুষ্ট নন।
হামিদি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক একটা পরিস্থিতি। কেউই তাদের মাতৃভূমি ছেড়ে থাকতে চায় না।’