ফুটবল জাদুকর ডিয়েগো ম্যারাডোনার ৬১তম জন্মদিন আজ (৩০ অক্টোবর)। হাসি-আনন্দে ব্যস্ত থাকা এই কিংবদন্তি এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন গত বছর। জাদুর পরশকাঠিতে ফুটবলকে জীবন্ত করে তোলা এই জাদুকরকে ছাড়া এবার প্রথম তার জন্মদিন পালন করছে ফুটবল বিশ্ব।
গত বছর বুয়েনোস আইরেসের হাসপাতালের আইসোলেশনে থেকে ৬০তম জন্মদিন পালন করেন ‘এল দিয়েগো’। কে জানত তার এক মাসের মধ্যেই না-ফেরার দেশে পাড়ি জমাবেন বিশ্বকাপজয়ী এ কিংবদন্তি।
ম্যারাডোনা চলে গেছেন, কিন্তু ছেড়ে গেছেন কোটি স্বপ্ন। আর্জেন্টিনা যখন অর্থনৈতিকভাবে ভারাক্রান্ত, সামরিক অভ্যুত্থানে দেশের পরিস্থিতি যখন বেসামাল, তখন আন্ডারডগ দলকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে পুরো দেশকে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখান।
১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর বুয়েনোস আইরেসের সুবিধাবঞ্চিত এলাকা ভিয়া ফায়োরিতায় জন্মান ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ছোট বেলা থেকে ফুটবলকে ঘিরেই তার স্বপ্ন।
স্বপ্নের যাত্রা শুরু ম্যারাডোনার ১৬ বছর বয়সে। জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার ওই বয়সেই। ছোট্ট বয়স, কিন্তু কী পরিণত! তার তিন বছর পর যুব বিশ্বকাপ জিতে দেশকে জানান দিলেন তিনি আসছেন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে।
তরুণ বয়সের কারণে ১৯৭৮ বিশ্বকাপ খেলতে না পারলেও, ১৯৮২ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে চাপান ম্যারাডোনা। ব্রাজিলের বিপক্ষে লাল কার্ড পেয়ে শেষ হয় তার আসর।
পরের বার মেক্সিকোতে বিশ্বকে দেখান তার সামর্থ্য। তার নৈপুণ্য ও নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো আর্জেন্টিনা জিতে নেয় বিশ্বকাপ।
তত দিনে বিশ্ব ফুটবলে সবার ওপরে একটিই নাম ডিয়েগো ম্যারাডোনা। যেখানেই গেছেন নিজের দ্যুতি ছড়াতে ভোলেননি।
আশির দশকের শেষে ইতালির নাপোলিকে জেতান লিগ ও ইউরোপিয়ান কাপ শিরোপা। ইউভেন্তাস-এসি মিলানদের মতো জায়ান্টদের ভিড়ে এত দিন আঁধারে থাকা নাপোলিকে হাত ভরে এনে দেন আলো।
সেই আলোর নিচে অন্ধকারও দেখেছেন এই কিংবদন্তি। ১৯৯১ সালে ড্রাগসহ ধরা পড়েন নেপলসে। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কৃত হন ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে।
২০০৭ সালে হাসপাতালে ভর্তি হন যকৃত ও পাকস্থলীর অসুখে। দ্রুত স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে তার। প্রায় দুই মাস পর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান।
১৩ বছর সেই রোগ ধরা দিল আরও বড় হয়ে। শেষ পর্যন্ত তার জীবনই কেড়ে নিল।
আরও কিছু সময় পৃথিবীতে থাকতে হয়তো দেখে যেতে পারতেন তার উত্তরসূরিদের কোপা আমেরিকা ট্রফির জয়োৎসব। ওই স্বর্গ থেকে তিনি হয়তো হাসছেন, আশীর্বাদ দিচ্ছেন দলকে।