ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতলে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন বেঁচে থাকত বাংলাদেশের। পুরো ম্যাচে সেই স্বপ্ন টিকে থাকল শেষ পর্যন্ত। এমনকী আন্ড্রে রাসেল যখন শেষ বল করতে দৌড় শুরু করেছেন তখনও আশায় বুক বেঁধে টাইগার ভক্তরা।
শেষ বলে চার রান নিতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ। তিন রানের হারে উইন্ডিজের কাছে ম্যাচের সঙ্গে হাতছাড়া হয়েছে বিশ্বকাপ সেমির আশায়।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। হাতে ছিল পাঁচ উইকেট। ক্রিজে ছিলেন আফিফ হোসেন ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
রাসেলের শেষ ওভারের প্রথম বলটি শর্ট ফাইন লেগে ঠেলে দিয়ে দুটো রান নিলেন আফিফ হোসেন। জয়ের জন্য দরকার তখন ৫ বলে ১১।
দ্বিতীয় বলটি স্লোয়ার দেয়ায় মিস করলেন আফিফ। উইকেটরক্ষক নিকোলাস পুরান বল থ্রো করার আগে একবার জায়গা পরিবর্তন করলেন আফিফ-রিয়াদ। প্রয়োজন তখন ৪ বলে ১০।
পরের তিন বলের প্রতিটিতে ২ রান করে নিয়ে জয়ের জন্য ব্যবধানটা ১ বলে চার রানে নিয়ে আসেন রিয়াদ। সে সময় ২৩ বলে ৩১ রানে অপরাজিত রিয়াদ।
শেষ বলটি ফুল টস পড়েছিল রিয়াদের সামনে। কিন্তু সেটি ব্যাটে লাগাতে ব্যর্থ হন টি-টয়েন্টি দলপতি। ফলাফল আরও একবার একবুক হতাশা ও ৩ রানের হারকে সঙ্গী করে মাঠ ছাড়তে হল ডমিঙ্গো শিষ্যদের। সেই সঙ্গে আরও একবার তীরে এসে তরী ডুবাতে হল বাংলাদেশকে।
জয়টা হয়তো বাগিয়ে নিয়েই মাঠ ছাড়তে বাংলাদেশ। কিন্তু সেখানে বাধা দেন জেসন হোল্ডার।
ডোয়াইন ব্রাভোর ১৯তম ওভারের শেষ বলটি লং অনে উড়িয়ে মারেন লিটন দাস। নিশ্চিত ছয়ের সেই শট লাফিয়ে ধরে লিটনকে মাঠ ছাড়া করেন হোল্ডার। তার আগে লিটন খেলেন ৪৩ বলে ৪৪ রানের ফর্মে ফেরা ইনিংস।
বাংলাদেশকে জয়ের মুখ দেখানোর মিশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ওপেন করেন সাকিব আল হাসান। নাঈম শেখকে সঙ্গী করে প্রথম চার ওভারে বিনা উইকেটে তোলেন ২০ রান।
দলীয় ২১ রানে সাকিব বিদায় নেয়ার পর ১৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন নাঈম। এরপর সৌম্যকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস মেরামতের মিশনে নামেন লিটন দাস।
১৩ বলে ১৭ করে সৌম্য বিদায় নিলে মুশফিককে নিয়ে ইনিংস এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন লিটন। বেরসিকের মতো স্কুপ খেলতে গিয়ে স্টাম্প হারান মুশি।
বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস ওপেন করেন সাকিব। ছবি: এএফপি
এরপর রিয়াদকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়েন লিটন। এই জুটিতে জয়ের বন্দরের কাছাকাছি চলে যায় বাংলাদেশ। ৪৪ করে লিটন যখন বিদায় নেন বাংলাদেশের তখন প্রয়োজন ৬ বলে ১৩ রান।
শেষতক আর জয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব হয়নি বাংলাদেশের। উইন্ডিজ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৩ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় রিয়াদ-আফিফদের।
এর আগে শারজায় টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকে উইন্ডিজ ব্যাটারদের চেপে ধরে টাইগার বোলাররা। বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেটের খরচায় ২৯ রান তোলে উইন্ডিজ।
দলীয় ১২ রানে ক্যারিবীয় শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। ৬ রান করা এভন লুইসকে ফেরান মুশফিকের তালুবন্দি করে। ম্যাচের পঞ্চম ওভারে ক্রিস গেইলকে ফেরান মাহেদী হাসান।
মাহেদীর দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন শিমরিন হেটমায়ার। তবে দুর্ভাগা ছিলেন আন্দ্রে রাসেল।
ম্যাচের ১৩তম ওভারে তাসকিনের বলে নন-স্ট্রাইকে থেকে রানআউট হন রাসেল। রস্টন চেসের ড্রাইভ তাসকিনের পায়ে লেগে নন-স্ট্রাইকের স্টাম্প ভেঙে দিলে শূন্য রানে ফিরতে হয় তাকে।
এরপর নিকোলাস পুরান ও চেসের ব্যাটে ভর করে দলীয় সংগ্রহ ১০০ ছাড়ায় উইন্ডিজ। দলের হাল ধরে দুইজনে মিলে গড়েন ৫৭ রানের জুটি।
ব্যক্তিগত ৪০ রানে শরিফুলের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে নাঈম শেখের হাতে আটকা পড়েন নিকোলাস পুরান।
সঙ্গীর বিদায় মেনে নিতে না পেরে পরের বলে স্টাম্প হারিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন চেস। তার ব্যাট থেকে আসে ৩৯ রান।
সৌম্যর সঙ্গে উইকেট উদযাপন করছেন মাহেদী হাসান। ছবি: এএফপি
শেষদিকে জেসন হোল্ডারের ঝড়ো ৫ বলে ১৫ রানের ইনিংসে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রানের পুঁজি নিয়ে মাঠ ছাড়ে উইন্ডিজ।
প্রথম ১৫ ওভারে তাসকিন-মুস্তাফিজদের বোলিং তোপের মুখে ১৫টি বাউন্ডারি হাঁকাতে পারে উইন্ডিজের ব্যাটাররা।
শেষ ৫ ওভারে পাশার দান উল্টে ফেলেন তারা। শেষ পাঁচ ওভারে হোল্ডার-পোলার্ডদের ব্যাট থেকে এসেছে ছয়টি ছক্কার মার।
বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন তাসকিন, মুস্তাফিজ ও মাহেদী।
ম্যাচ সেরা হন নিকোলাস পুরান।