ম্যাচের আগে মাঠের বাইরের বাকযুদ্ধ যে প্রভাব ফেলেছে মাহমুদুল্লাহর দলে তার প্রমাণ মিলল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে। ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ১২৪ রানে ভেঙ্গে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ।
সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেট ও ৩৫ বল অক্ষত রেখে চলতি বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় জয় বাগিয়ে মাঠ ছেড়েছে ইংল্যান্ড।
টানা দুই হারে সেমির আশা এখন ম্লান মাহমুদুল্লাহ বাহিনীর। শেষ চারে খেলতে পরের তিন ম্যাচে অনেক বড় ব্যবধানে জয় ছাড়া কোনো রাস্তা খোলা নেই বাংলাদেশের সামনে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বল হাতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ছিল কেবলমাত্র ওপেনার জস বাটলার ও জেসন রয়ের উইকেট।
পঞ্চম ওভারের শেষ বলে নাসুম আহমেদকে এক্সট্রা কভারে উড়িয়ে মারতে গিয়ে নাঈম শেখের হাতে ধরা দিয়ে ফেরেন বাটলার। আর দলের রান যখন ১১২, সে সময় নাসুমের তালুবন্দি করে ৬১ রান করা রয় ফেরেন শরিফুলের শিকার হয়ে।
জয়ের জন্য বাকি পথটা পাড়ি দিতে একদমই বেগ পেতে হয়নি জনি বেয়ারস্টো ও ডাউয়িড মালানকে। মালান অপরাজিত থাকেন ২৮ রানে। ৮ রানে অপরাজিত থেকে তাকে শেষ পর্যন্ত সঙ্গ দেন বেয়ারস্টো।
এর আগে দুবাইয়ের শেখ আবু জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে পুরো সময়টাতে স্নায়ু চাপে ভুগেছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা।
প্রথম ওভারে বেশ মারকুটে ছন্দে ছিলেন ওপেনার লিটন দাস। মঈন আলির উদ্বোধনী ওভারে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ১০ রান।
পরের ওভারে বাংলাদেশের রানের রাশ টেনে ধরেন ক্রিস ওকস। দ্বিতীয় ওভারে দেন তিন রান। ম্যাচের শুরুতে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেয়া লিটন ব্যর্থতার বেড়াজাল ছিঁড়ে বের হতে পারেননি এদিনও।
স্কয়্যার লেগে মইনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লিভিংস্টোনের হাতে ধরা দিয়ে ফেরার পথ ধরতে হয় ৯ রান করা লিটনকে।
লিটনের বিদায় যেন মেনে নিতে পারছিলেন না সঙ্গী নাঈম শেখ। পরের বলে সতীর্থের দেখানো পথে হাঁটলেন তিনিও। ৭ বলে ৫ রানের ইনিংস খেলে ক্রিস ওকসের তালুবন্দি হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।
বড় ইনিংসে খেলতে ব্যর্থ হন সাকিব আল হাসানও। ওকসের বলে শর্ট ফাইন লেগে আদিল রাশিদের হাতে ধরা দিয়ে চার রান করেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন এই অলরাউন্ডার।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ পাওয়ার প্লেতে স্কোরবোর্ডে তোলে তিন উইকেটের খরচায় ২৭ রান।
দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ে পরিস্থিত সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম।
একাদশ ওভারের রিয়াদের সঙ্গে ৩৭ রানের জুটি গড়ে আউট হন মুশফিক। লিয়াম লিভিংস্টোনকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ১১ তম ওভারের চতুর্থ বলে এলবিডব্লিউ হন মুশফিক। ফেরার আগে করেন ৩০ বলে ২৯ রান।
১৩তম ওভারের চতুর্থ বলে মিস ফিল্ডিংয়ের সুযোগে দুই রান নিতে যেয়ে আউট হন আফিফ। দ্বিতীয় রানের কল ছিল অন্যপ্রান্তে থাকা মাহমুদুল্লাহর।দল ও নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে বোর্ডের তোপের মুখে থাকা মাহমুদুল্লাহ স্নায়ু চাপ মুক্ত হতে পারেননি। ওই ওভারের পরের বলে মাহমুদুল্লাহের ভুলে কাটা পড়ার সম্ভাবনা জাগে নুরুল হাসান সোহানের। সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি।
মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে সোহানকেও যেন পেয়ে বসেছিল অপরপ্রান্তের ব্যাটারকে ঝুঁকিতে ফেলে রান নেয়ার নেশা। যার ফলে পরের বলটিও পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে দ্রুত সিঙ্গেল নেন। ভাগ্য ভালো হওয়ায় ফিল্ডারের থ্রো থেকে সে যাত্রায় বেঁচে যান রিয়াদ।
ইংলিশ বোলারদের বিপক্ষে এতোটাই ধুঁকছিল বাংলাদেশ যে প্রথম ১৪ ওভারে ডট বল দিতে হয়েছে ৩৭টি।
বারবার জীবন পেয়েও ইনিংস টেনে নিয়ে যেতে পারেননি রিয়াদ। লিয়াম লিভিংস্টোনের বল টাইমিং মিস করে পয়েন্টে ওকসের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। তার আগে খেলেন ১৯ রানের ইনিংস।
ব্যর্থতার খাতায় নাম লেখান মাহেদি হাসানও। শেষ দিকে নাসুমের ঝোড়ো ৯ বলে ১৯ রানের কল্যাণে দলীয় স্কোর ১২০ ছাড়ায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটের খরচায় ১২৪ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
ইংল্যান্ডের হয়ে তিনটি উইকেট নেন টাইমল মিলস। দুটি করে উইকেট নেন মঈন আলি ও লিভিংস্টোন। আর একটি উইকেট ঝুলিতে পুরেন ক্রিস ওকস।