টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব পার হওয়ার পর মূল পর্বের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় শ্রীলঙ্কাকে। জয়ের পথে থাকা টাইগারদের হাত ফসকে ম্যাচ চলে যায় প্রতিপক্ষের কাছে। শ্রীলঙ্কা পাঁচ উইকেটে জিতে নেয় ম্যাচ।
ম্যাচের প্রায় পুরো সময় অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর চোখেমুখে আতঙ্ক ও চাপ দেখা গেছে টিভি ক্যামেরায়। শেষ পর্যন্ত ক্যাচ ফসকে ও অধিনায়কের ভুল কৌশলে চাপের কাছে পরাস্ত হয়ে ম্যাচ হারতে হয় টাইগারদের।
কেন ১৫-১৬ বছর ধরে ক্রিকেট খেলা মাহমুদুল্লাহ-মুশফিকরা এখনও হারতে ভয় পায় বা ম্যাচের সময় আতঙ্কে থাকে? অভিজ্ঞ ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মতে বিসিবির কারণে বাড়তি এ চাপ থাকে সিনিয়রদের ওপর।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন বিসিবি কর্তাদের সমালোচনার কারণে ক্রিকেটাররা সেরাটা দিয়ে খেলতে পারছেন না। চাপের কাছে বারবার নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে।
ফাহিম বলেন, ‘খেলোয়াড়দের যে মানসিক অবস্থা সেটি আসলে সমালোচনার কারণে। মনে হয় না এটি বাইরের মানুষের সমালোচনার প্রতিক্রিয়া। কাছের মানুষের সমালোচনাই ওদের কষ্ট দেয় বলে আমার মনে হয়।’
তিনি যোগ করেন, ‘কারও ভেতর কোনো শক্তি নেই। সবার ভেতরই একটা চিন্তা, ভালো না করতে পারলে বাদ পড়ে যাবে। এই চাপ নিয়ে ভালো খেলা যায় না। ভয় নিয়ে খেলা যায় না। আমাদের ভেতর এটা অনেক বেশি। এটা আমাদের আরও ওপেন হতে দিচ্ছে না। চ্যালেঞ্জিং ক্রিকেট খেলতে দিচ্ছে না।’
চাপের পাশাপাশি ঘরের মাঠে স্লো ও লো উইকেটে খেলে বিশ্বকাপের স্পোর্টিং উইকেটে খেলতে যাওয়ায় বাংলাদেশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে মনে করেন সাকিব-মুশফিকদের কোচ।
ফাহিম বলেন, ‘আত্মবিশ্বাসের অভাব আমরা প্রথম থেকে দেখছি। প্রস্তুতি ম্যাচ ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর ওমানের বিপক্ষে টেনশন নিয়ে খেলেছি। আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা একদম নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভালো ক্রিকেট খেলা যায় না। আমরা যাদের সাথে খেলব প্রত্যেকে ভালো দল।
‘শ্রীলঙ্কা আমাদের মানের দল। তারা যেমন আক্রমণাত্মক খেলল, যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলল তেমনটা আমরা পারিনি। সে জায়গাটাতে আমরা যেতেই পারছি না। অনেক ব্যাটসম্যানের ফর্ম নেই। অনেকেই নিশ্চিত না যে পরের ম্যাচ খেলতে পারবে কি না। বোলাররা এই কন্ডিশনে কীভাবে বল করবে সে সম্পর্কে পুরোপুরি জানে না। আমাদের আত্মবিশ্বাসটা তুঙ্গে থাকার অবস্থানে নেই।’
প্রায় সময় দেখা যায় দল জিতলে সেটির কৃতিত্ব নিয়ে নেন বোর্ড সভাপতি থেকে শুরু করে অন্য কর্তারা। কিন্তু হারলে দায়ভার পড়ে খেলোয়াড়দের ওপর। এ বিষয়টিকে ভালো খেলার অন্তরায় বলে মনে করেন ফাহিম।
তিনি বলেন, ‘বোর্ডের কিছু কমেন্ট শুনেছি যেগুলো খেলোয়াড়দের জন্য ইতিবাচক ছিল না। খেলোয়াড়দেরও নিজের জায়গা থেকে সংযত হওয়া উচিত। সবাই সবার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারলে সব ঠিক হয়ে যাবে। দল মানে কিন্তু ১৫ জন না। কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে বিসিবি পুরোটাই দলের অংশ। তাই ভালো করি, মন্দ যাই হোক পুরো দলের সেই দায় নিতে হবে। এটা করতে পারলে আমরা আরও ভালো খেলতে পারব।’
ফাহিমের সঙ্গে সুর মিলিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি মোর্ত্তজা।
নিজের ফেসবুক আইডিতে মাশরাফি লেখেন ‘দায় খেলোয়াড়দেরই নিতে হয়/হবে। এটাই স্বাভাবিক, কারণ মাঠে তারাই খেলে। কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার যে, খেলোয়াড়দের সে রকম পরিবেশ করে দিতে হবে। তাদেরকে বোঝাতে হবে, তাদের বিপদে কেউ পাশে না থাকুক, অন্তত টিম ম্যানেজমেন্ট থাকবে।
‘যদি কোচ এ বিষয়ে রিয়াদের সঙ্গে কথা না বলে থাকে, তাহলে তো ব্রেকের সময় দলের টিম বয়কেই মাঠে পাঠিয়ে দেওয়া যায় হাই-হ্যালো করতে, কোচের আর প্রয়োজন কী!’