১৯৫০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল। ১০ বছরের ছোট দিকো গেছে বাবার সঙ্গে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয় দেখতে। উরুগুয়ের বিপক্ষে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ শিরোপা লড়াই দেখতে ঐতিহাসিক মারাকানায় হাজির লাখ দেড়েক দর্শক। পুরো দেশে উৎসবের প্রস্তুতি।
কিন্তু সবাইকে হতবাক করে দিয়ে ২-১ গোলে ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে চলে যায় উরুগুয়ে। ফুটবলের দেশে যেন নেমে আসে জাতীয় দুর্যোগ। পুরো ব্রাজিল ভেঙে পড়ে কান্নায়। ছোট দিকো কাঁদতে দেখে বাবাকেও।
ছোট বয়সেই সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে বিশ্বকাপের ট্রফি এনে দেবে তার বাবাকে। এর ঠিক আট বছর পর বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। আর সেলেকাওদের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের নায়ক ছিলেন সেই দিকো। পুরো বিশ্ব যাকে চিনে নেয় পেলে নামে।
এরপর আরও দুটি বিশ্বকাপ জিতেছেন কালো মানিক হিসেবে খ্যাত পেলে। ২৩ অক্টোবর এ ফুটবল কিংবদন্তির ৮১তম জন্মদিন।
দুই দশকের বেশি লম্বা ক্যারিয়ারে গড়েছেন অসংখ্য রেকর্ড। জিতেছেন তিনটি বিশ্বকাপ, করেছেন এক হাজার গোল। তারপরও পেলেকে মানুষ চেনে তার পরিসংখ্যান দিয়ে নয়, ফুটবল খেলাকে যে নন্দিত রূপ দিয়েছিলেন তার জন্য।
পেলে ফুটবলকে বলতেন ‘দ্য বিউটিফুল গেম’। মাঠে তার দ্রুতগতির, ছন্দময় ও শৈল্পিক ফুটবল ভক্তদের বিশ্বাস দেয় যে আসলেই ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর খেলা।
১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর পেলের জন্ম ব্রাজিলের মিনাস গেরেইস রাজ্যের ত্রেস কোরাকোয়েসে। তার আসল নাম এদসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো। ছোট থেকেই ফুটবলের প্রতি আকৃষ্ট পেলের ক্লাব ফুটবলে অভিষেক ১৫ বছর বয়সে, সান্তোসের জার্সিতে।
ছোটবেলায় তার প্রিয় খেলোয়াড় ছিলেন আরেক বিখ্যাত ক্লাব ভাস্কো দা গামার গোলকিপার বিলে। বন্ধুরা তাকে বিলে বলে খেপাতো স্কুলে। বিলে থেকেই বদলে তার নাম হয়ে যায় পেলে। হারিয়ে যায় বাবা-মার দেয়া ডাকনাম দিকো।
জাতীয় দলে পেলের অভিষেক হয় মাত্র ১৬ বছর বয়সে। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে মারাকানায় হার দিয়ে শুরু হলেও তার হাত ধরে রচিত হয় ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের নতুন ইতিহাস।
৫৮ এর পর ১৯৬২ ও ১৯৭০-এর বিশ্বকাপ জেতেন পেলে। ১৯৭০-এ পেলের দলটিকে বলা হয় ফুটবল ইতিহাসের সেরা দল। ৭০ বিশ্বকাপ জিতে ব্রাজিলের জার্সি থেকে অবসর নেন। আরও চার বছর খেলেন সান্তোসের হয়ে।
ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় খেলেন নিউ ইয়র্ক কসমসের হয়ে। আশির দশকে ডিয়েগো ম্যারাডোনার আবির্ভাবের আগে পেলেই ছিলেন ফুটবল রাজত্বের একচ্ছত্র অধিপতি।
আধুনিক যুগেও লিওনেল মেসির সঙ্গে তুলনাতে আসেন পেলে। যুগে যুগে যেন ফুটবলারদের শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি বনে গেছেন এই জীবন্ত কিংবদন্তি।
জন্মদিনের আগে শরীর ভালো যাচ্ছিল না পেলের। তবে চিকিৎসা শেষ পুরো সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনি।
নিজের ৮১তম জন্মদিনে ভক্তদের উদ্দেশে মজার এক বার্তা দিয়েছেন ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা নাম্বার টেন। ইন্সটাগ্রামে কেকের ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘আমার জন্মদিন আসছে। কেক তৈরি করেছেন তো?’
তার জন্মদিনে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছে ফিফা, ইউয়েফা বিশ্বজুড়ে অন্যান্য ফুটবল সংস্থা। ফুটবল সম্রাটের জন্মদিন শুধু তার একার নয়, পুরো ফুটবল বিশ্বের যেন উৎসবের মুহূর্ত।