বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঘরোয়া ক্রিকেটে দর্শক ফেরাতে কাজ শুরু করবেন মিঠু

  •    
  • ১৪ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:৫৫

ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত মিঠু। বিসিবিতে জায়গা করে নেয়ার পর সেদিকটাতেই নজর থাকতে বেশি এমনটাই জানালেন নিউজবাংলাকে। নির্বাচনের পর কোনো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে প্রথম বিস্তারিত আলাপচারিতায় মিঠু কথা বলেছেন ক্লাব ক্রিকেট ছাড়াও ঢাকা ও বাংলাদেশের ক্রিকেটের নানা দিক নিয়ে।

বিসিবি নতুন পরিচালক পর্ষদের নতুন মুখ ইফতেখার রহমান মিঠু। সাবেক এই ক্রিকেটার ও বর্তমানে ক্রিকেট সংগঠক ঢাকার ক্লাব পাড়ায় পরিচিত নাম প্রায় তিন দশক ধরে। লাইমলাইটে খুব একটা না থাকলেও, প্রথমবার নির্বাচন করে সাফল্যে পেয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন।

ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত মিঠু। বিসিবিতে জায়গা করে নেয়ার পর সেদিকটাতেই নজর থাকতে বেশি এমনটাই জানালেন নিউজবাংলাকে। নির্বাচনের পর কোনো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে প্রথম বিস্তারিত আলাপচারিতায় মিঠু কথা বলেছেন ক্লাব ক্রিকেট ছাড়াও ঢাকা ও বাংলাদেশের ক্রিকেটের নানা দিক নিয়ে। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য তার সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

প্রথমবার নির্বাচন করেই সফলতা। নির্বাচনের আগে কি কোনো শঙ্কা ছিল জয় নিয়ে?নির্বাচনে সবসময়ই ভয় থাকে। দুশ্চিন্তা একটা থাকেই। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমি ক্লাবের একদম তৃণমূল পর্যায় থেকে যেহেতু এসেছি আর আমার বন্ধু বান্ধবরা যারা কাউন্সিলর, তারাও বিভিন্ন ক্লাব থেকে এসেছেন। সে দিক থেকে নিজেকে একটু এগিয়ে রেখেছিলাম।

আমি ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে জড়িত অনেক বছর। ১৯৯৫ সাল থেকে নানা স্ট্যান্ডিং কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব করেছি। বোর্ডের পরিচালক না হলেও বোর্ডের কার্যকলাপে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। তাই খুব একটা চ্যালেঞ্জিং লাগছে না। একটাই পরিবর্তন এসেছে। আগে কারো অধীনে ছিলাম, এখন আমি নেতৃত্ব দিচ্ছি।

একজন বোর্ড পরিচালক হিসেবে ক্রিকেটের কোন বিষয়গুলো আপনার কাছে অগ্রাধিকার পাবে?

আমার প্রথম পরিচয় হচ্ছে আমি একজন সাবেক ক্রিকেটার। আমরা যারা বোর্ড পরিচালক রয়েছি, আকরাম আছে, সুজন আছে, মাহবুব আছেন সবারই প্রধান লক্ষ্য ক্রিকেটের উন্নতি করা।

যখন ক্রিকেট খেলতাম ৯০-এর দশকে, তখন ক্লাব ক্রিকেট খুব জনপ্রিয় ছিল। আবাহনী-মোহামেডান ক্রিকেট ম্যাচে তখন ৬০ হাজার লোক হতো। সেই উন্মাদনা এখন আর নেই। ব্যক্তিগতভাবে ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশি কাজ করে একে আরও জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করব।

সৌরভ গাঙ্গুলির বিসিসিআই থেকে বিসিবির ক্রিকেট উন্নয়নে কতোটা সমর্থন আপনি বন্ধু হিসেবে আশা করেন?

দেখেন সৌরভ আমার ছোটবেলার বন্ধু। সে এখন ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। তার নিজের কিছু প্রফেশনাল বিষয় আছে। তার বাইরে বন্ধু হিসেবে যতটুকু সাহায্য করতে পারবে লিমিটেশনের ভেতর থেকে সেটাই করবে। আমি মনে করি বন্ধু হিসেবে তার থেকে সেটি আমি আদায় করে নিতে পারব।ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের শক্তিশালী কাঠামো থেকে কোন বিষয়গুলো আমরা নিজেদের ক্রিকেটে ব্যবহার করতে পারি?

তাদের উপদেশ, তারা যেই পরিকল্পনা করেছে সেগুলো আমরা অনুসরণ করতে পারি।

ঘরোয়া ক্রিকেটের উন্নতিতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে আপনি মনে করেন?

আমাদের জাতীয় দলের ক্রিকেট একটা দারুণ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের উন্নতি করতে না পারলে সেটির পরিধি বাড়ানো সম্ভব হবে না। ক্রিকেটের উন্নয়ন করতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেটের উন্নতি করতে হবে। তাতে খেলোয়াড়রা বের হয়ে আসতে পারবে। অবকাঠামোর অনেক বেশি উন্নতি করতে হবে। আমাদের খেলার মাঠ কম। তবে ভালো খবর হচ্ছে সভাপতি প্রথম সভাতে বলে দিয়েছেন যে আমাদের খেলার মাঠ তৈরি করতে।

জনপ্রিয়তা ফেরাতে হলে ভালো মাঠে খেলানো, ভালো কোয়ালিটির লোকাল ও বিদেশি প্লেয়ারকে খেলাতে হবে। সবচেয়ে জরুরি যেই বিষয়টা যথার্থ সূচী যদি করা সম্ভব হয়, যেমন ধরুন গরমে (জুন-জুলাইয়ে) খেলা না ফেলে যদি একটা গ্যাপ বের করে বিদেশি ট্যুরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভালো একটা সময় বের করা যায়, তাতে জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে।

ঘরোয়া ক্রিকেটে তারকা খেলোয়াড়দের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না?

বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার যেই ১৫-১৬ জন আছেন তাদের কিন্তু ফুল টাইম কখনও পাওয়া যাবে না। কারণ আইসিসির একটা সূচি রয়েছে। এটা সবসময়ই আমাদের সমস্যা ছিল। এফটিপিতে যদি খেলা কম থাকে তাহলে তাদের অংশগ্রহণ বেশি হয়। বিপিএলে আপনি পান কেন? বিপিএল১৫ দিনের একটা স্লটে খেলা হয়। ডিপিএলের কথা যদি বলেন, সেটি হয় দুই-তিন মাস জুড়ে। তাই স্বভাবতই তিন মাস ধরে আপনি জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড়কে পাবেন না।

ঘরোয়া ক্রিকেটের গুরুত্ব ফিরিয়ে আনতে আর কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে বলে মনে করেন?

আমরা সবাই চাচ্ছি ঘরোয়া ক্রিকেটের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে। তার জন্য প্রথমেই যেটা করতে হবে সেটা হলো সূচি নির্দিষ্ট করতে হবে। জুন-জুলাইয়ের পরিবর্তে যদি জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে আয়োজন করা যায়, লোকজন কিছুটা হলেও উৎসাহী হবে। কারণ কেউ জুন-জুলাইয়ের গরমের ভেতর, বৃষ্টির ভেতর বসে খেলা দেখতে চায় না। তাই এটা শীতকালে করতে পারলে প্রিমিয়ার লিগে আগ্রহ চলে আসবে।

সেই সাথে মাঠ বাড়াতে হবে। এরপর ক্রিকেটারদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে দেয়া, দলগুলোকে মোটিভেট করা, খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক বাড়ানোসহ অনেক কিছু আছে। এটা শুধু ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব না, এখানে আন্তরিকতা থাকতে হবে ক্লাব মালিকদেরও। সবাই মিলে বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব কোনটা ভালো হবে ঘরোয়া ক্রিকেটের উন্নতিতে।

ঘরোয়া ক্রিকেটের টিভি সম্প্রচার বাড়ানো সম্ভব কি না?

এটা একটা দুর্দান্ত কথা বলেছেন। সংবাদমাধ্যমগুলোর সঙ্গে বসে, কোচ ও খেলোয়াড়দের সঙ্গে বসে আমরা যদি মতবিনিময় করতে পারি তাহলে এমন আরও দুর্দান্ত মত উঠে আসবে। প্রতিদিন যদি কোনো রেডিও বা টিভিতে খেলার কমেন্ট্রি সম্প্রচার হয়, সংবাদমাধ্যমগুলো যদি খেলাগুলোকে আরও বেশি কাভারেজ দেয় তাহলে মানুষের আগ্রহ বাড়বে। বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবব। একই সঙ্গে আমাদের দেখতে হবে খেলা সম্প্রচারের সম্ভাবনা কেমন। খেলা সম্প্রচার কিন্তু সহজ বিষয় না।

প্রথমে আমরা দুটো ম্যাচ করলাম। আস্তে আস্তে সম্প্রচারের পরিধি বাড়ালাম। শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামটা যখন হয়ে যাবে তখন দুটো স্টেডিয়ামে আমরা ম্যাচ ফেলতে পারব। সুযোগ সুবিধা দিতে পারব। ম্যাচও ব্রডকাস্ট করতে পারব। ঘরোয়া ক্রিকেট ব্রডকাস্ট করতে পারলে সেটির জনপ্রিয়তা অবশ্যই বাড়বে।

আম্পায়ারিং নিয়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় বিভাগ লিগে অনেক বিতর্ক হয়। আছে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগও, কীভাবে মোকাবিলা করবেন?

প্রথম দিনের সংবাদসম্মেলনে আমাদের বোর্ড সভাপতি খুব ভালো একটা কথা বলেছেন। কেন চাপ দেয়া হয় আম্পায়ারকে, সেটা বের করতে হবে। চ্যাম্পিয়ন দলসহ চার-পাঁচটা দল ছিল, সেসব ম্যাচে চাপ তৈরি হতো। কারণ তারা রেলিগেশনে চলে গেলে বেশ সিরিয়াস ইস্যু তৈরি হত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ লিগের কোনো কাউন্সিলরশিপ নেই। সব লিগে যখন কাউন্সিলরশিপ চলে যাবে তখন কিন্তু এমনিতেই আম্পায়ারিংয়ে চাপ কমে যাবে।

সেই সঙ্গে আমাদের আরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সাবেক খেলোয়াড়রা যত আসবেন, আম্পায়ারিংয়ের মান ততো উন্নত হবে।

আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কোন অবস্থানে দেখতে চান?

এখন আমরা সাত নম্বর র‍্যাঙ্কিংয়ে আছি ওয়ানডেতে। আমাদের লক্ষ্য পাঁচ অথবা চারে যাওয়ার। টেস্টে একদম নিচে আছি। সেখান থেকে দুই ধাপ উঠে আসা। টেস্টে দুই ধাপ উন্নতি কিন্তু বিশাল ব্যপার। আমার নিজের ব্যক্তিগত লক্ষ্য হচ্ছে ঘরোয়া ক্লাব ক্রিকেট ও লঙ্গার ভার্সন ক্রিকেটের যেন আরও উন্নতি করা যায়।

বাংলাদেশ আগামী ১০ বছরে দুটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চায়, প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত দিক দিয়ে কতখানি প্রস্তুত বিসিবি?

আমরা ২০১১ বিশ্বকাপ সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। ২০১৪ সবগুলো দল নিয়ে সফলভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ করেছি। এরপর এশিয়া কাপ, অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ আয়োজন করেছি। মোটামুটি ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অবকাঠামোর অনেক পরিবর্তন এসেছে। নতুন যে স্টেডিয়ামটা হবে, যেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামে করা হচ্ছে, সেটা হয়ে গেলে অবকাঠামোর আরও উন্নতি হবে।

ঢাকার বাইরে ফতুল্লা ও খুলনার মতো আন্তর্জাতিক ভেন্যুগুলোতে প্রাণ ফিরিয়ে আনার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

আমাদের জাতীয় দলকে দিয়ে এ সব জায়গায় খেলানো খুব কঠিন। এইসব ভেন্যুতে হোটেলের একটা সমস্যা রয়েছে। পর্যাপ্ত রুম নেই। সিলেটে মোটামুটি আছে। আপনি দেখবেন ঢাকা ও চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক খেলাগুলো হয়। আন্তর্জাতিক খেলায় হোটেলে বেশি কক্ষের প্রয়োজন হয়। টিভি ক্রু থাকে। দুটো দল ও তাদের অতিথিরা থাকেন। প্রধান দুর্বলতাটাই হচ্ছে হোটেল। দ্বিতীয় স্তরে যারা রয়েছে, এ-দল, এইচপি, অনূর্ধ্ব ১৯ তাদের খেলা অবশ্য ওই ভেন্যুগুলোতে দেয়া যায়।

এ সমস্যাগুলো জানি আমরা, তারপরও কেন সেটি সমাধানে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না?

বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হচ্ছে মেইনটেন্যান্স। করে ফেলা যায় খুব সহজে। এর পরের মেইনটেনেন্সের বিষয়ে আমরা বেশ পিছিয়ে আছি। সেটির উন্নয়ন করে স্টেডিয়ামগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করার বিষয়ে বোর্ডের হয়ে যিনি ঘরোয়া ক্রিকেটের দায়িত্বে আসবেন, তার সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেয়া হবে। আমরা আসলে দিনে দিনে উন্নতি করছি। এখন আর নিচে নামার কোনো সুযোগ নেই।

নিয়মিত ক্রিকেটার হান্ট আবার চালু করার কোনো চিন্তা ভাবনা আছে কিনা?

বোর্ডের এরকম একটা পরিকল্পনা আছে। পেইসার হান্টের মতো প্রোগ্রাম আমাদের আগে ছিল। মাঝে সব কিছু নিয়ে এতো ব্যস্ততা, তাতে ওরকম প্রোগ্রামে ভাটা পড়েছে। বোর্ডের সদস্য হিসেবে আমার পরামর্শ হল, একটা লেগ স্পিনারের ক্যাম্প যদি করা যায় তাহলে সেখান থেকে ক্রিকেটার উঠে আসবে। আমরা যখন ক্রিকেট খেলতাম তখন ক্যাম্প থেকে ক্রিকেটার উঠে আসত। এখন ক্রিকেটের অবস্থা যেমনটা হয়েছে, অনেক কোচের অধীনে থেকে ভাগ হয়ে যাচ্ছে সব। সেসব ক্যাম্প থেকে সবাই আসে। আমি ব্যক্তিগতভাবে গেম ডেভেলপমেন্টের দায়িত্ব যিনি পাবেন তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।

এ বিভাগের আরো খবর