১৯৯৭ সালে যখন শেরিফ তিরাসপোল ক্লাব গঠিত হয়, তত দিনে রিয়াল মাদ্রিদ পাঁচবারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন। আলফ্রেডো ডি স্টেফানো, ফেরেনক পুসকাস, এমিলিও বুত্রাগুয়েনিওর মতো কিংবদন্তিদের জন্ম দিয়ে ফুটবল ইতিহাসের অংশ লস ব্লাঙ্কোস। বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা ক্লাব।
শেরিফের জন্ম মলডোভার তিরাসপোল শহরে। রাশিয়ার মদদপুষ্ট মলডোভার বিচ্ছিন্নতাকামী ট্র্যানসনিস্ট্রিয়া অঞ্চলে। অঞ্চলটি নিজেদের সার্বভৌম দাবি করলেও আন্তর্জাতিকভাবে তারা স্বীকৃত নয়।
দুই পুলিশ অফিসার ভিক্টর গুশান ও ইলিয়া কাজমেলি ১৯৯৭ সালে গঠন করেন শেরিফ নামের একটি কোম্পানি। যাদের মূল ব্যবসা কনিয়াক ও ক্যাভিয়ার উৎপাদন এবং বিক্রি। চার বছর পর এই কোম্পানির অধীনে যাত্রা শুরু করে ফুটবল ক্লাব।
প্রতিষ্ঠা হওয়ার ২৪ বছর পর শেরিফ যখন তাদের ইতিহাসে প্রথমবার রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হয়, তত দিনে রিয়াল জিতে নিয়েছে শতাব্দীর সেরা ক্লাবের খেতাব ও ১৩টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা।
এমন ম্যাচের ফল নিয়ে হয়তো আগ্রহী ছিলেন না কেউই। রিয়াল জিতবে চোখ বন্ধ করে বাজিও লাগতে পারেন ভক্তরা।
তবে ফুটবলকে যে কেন বলা হয় দ্য বিউটইফুল গেম তার আরও একটা উদাহরণ পাওয়া গেল বুধবার রাতে। রিয়ালের মাঠে ২-১ গোলের অবিশ্বাস্য এক জয় নিয়ে ফিরেছে শেরিফ তিরাসপোল।
প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে এসে এমন রূপকথার জন্ম দিয়ে, নিজ শহর তিরাসপোল তো বটেই পুরো ট্র্যানসনিস্ট্রিয়াকে আনন্দে ভাসিয়েছে শেরিফ।
শেরিফের পুরো স্কোয়াডের পারিশ্রমিক মিলিয়ে দাঁড়ায় এক কোটি ২০ লাখ ইউরো। যা রিয়ালের ডিফেন্ডার ডাভিড আলাবার পারিশ্রমিকের (এক কোটি দশ লাখ ইউরো) কাছাকাছি। ফলে দুই দলের মধ্যে সব দিক দিয়ে ছিল আকাশ-পাতালে তফাত।
এমন ঐতিহাসিক জয়ের পর শেরিফের অধিনায়ক ফ্র্যাংক কাস্তানেদা জানালেন রিয়ালের মাঠে তারা ভয় পাননি। নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে খেলেছে দল।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে জিততে এসেছিলাম, বসে থাকতে নয়। আমরা জানি আমাদের খেলোয়াড়রা কতটা ভালো। মাদ্রিদ কিছু সুযোগ হাতছাড়া করেছে। সেদিক দিয়ে ভাগ্য ভালো ছিল আমাদের।’
শেরিফের মিডফিল্ডার সেবাসটিয়েন টিল নিজের পায়ে ইউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি একটি ট্যাটু করিয়েছেন এবারের টুর্নামেন্টের আগে। ইউরোপ সেরা টুর্নামেন্ট খেলার স্বপ্ন তো পূরণ হয়েছেই, ম্যাচের ৮৯ মিনিটে তার গোলে এই অবিশ্বাস্য জয় নিশ্চিত হয়েছে শেরিফের।
টিল জানান ম্যাচ শেষে সবাই আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘ক্লাবের বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড় আছেন। এটাই আমাদের শক্তি। আমরা সবাই খুশিতে আত্মহারা। এটাই আমার ক্যারিয়ারের সেরা গোল।’
রিয়াল মাদ্রিদ অবশ্য কোনো অজুহাত খুঁজছে না এই হারের পর। তাদের মিডফিল্ডার কাসেমিরো জানান তাদের ভুলের সুযোগ নিয়েছে শেরিফ।
ব্রাজিলের এই অভিজ্ঞ খেলোয়াড় বলেন, ‘ফুটবল এ রকমই। আমরা ২০টার বেশি সুযোগ পেয়েছি। আর গোল করেছি মাত্র একটি। তারা দুটা সুযোগ পেয়েছে আর দুটা গোল করেছে। আমাদের রক্ষণের দিক থেকে আরও সতর্ক হতে হবে। পুরো ম্যাচই আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তারা শেষ মুহূর্তে দারুণ একটা গোল করে ম্যাচ নিজেদের করে নিয়েছে।’
শেরিফের অভিযান এখানেই থামছে না। ২০ অক্টোবর আরেক ইউরোপিয়ান জায়ান্ট ও ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন ইন্টারনাৎসিওনালের মুখোমুখি হবে তারা।
পুরো তিরাসপোলকে উৎসবের আরেকটি উপলক্ষ এনে দিতে নিশ্চিতভাবেই মুখিয়ে থাকবে টিল-কাস্তানেদারা।