জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে প্রথমবারের মতো খেলবেন শেরপুর জেলার ফুটবলার আতিকুজ্জামান। শেরপুর সদর উপজেলার কানশাখোলা গ্রামের বাসিন্দা আতিকুজ্জামান আতিক। শেরপুর শহরেই বেড়ে ওঠা তার।
২৪ আগস্ট জাতীয় ফুটবল দলের হেড কোচ জেমি ডে কিরগিজস্থানে হতে যাওয়া তিন জাতি টুর্নামেন্টের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ২৩ সদস্যের নাম ঘোষণা করেন। ২৩ সদস্যের দলে প্রথমবারের মতো ডাক পান আতিকুজ্জামান।
আতিক ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডানের হয়ে খেলেন। জাতীয় দলের আগে অনূর্ধ্ব ১৯ দলে খেলেছেন। জাতীয় স্কুল ফুটবল ২০১২ প্রতিযোগিতায় শেরপুর সদরের ফসিহ্ উল উলুম দাখিল মাদ্রাসার হয়ে প্রথমে ঢাকা বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করেন। সেসময় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলে সবার নজরে আসেন আতিক।ঢাকায় প্রথমবার ফুটবলের অভিজ্ঞতা নিউজবাংলাকে জানান আতিকুজ্জামান আতিক। বলেন, ‘ফসিহ উল উলুম দাখিল মাদরাসা হয়ে প্রথম বঙ্গবন্ধু জাতীয় ফুটবল স্টেডিয়ামে খেলি। আর ওইটাই আমার প্রথম ঢাকায় যাওয়া। ফুটবল শিখেছি গুরু সাধন বসাকের কাছে। ফুটবল খেলা শেখার জন্য রিজভী ভাই, মজিবর স্যারসহ অনেকে সাহায্য করছে। তবে মূল খেলাটা সাধন দার কাছ থেকে শিখেছি। শেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও শেরপুর জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে।’
আতিক যোগ করেন, ‘ছোট থেকে আমার ইচ্ছে ছিল আমি একদিন জাতীয় দলে খেলব। দেশের জন্য কিছু করব। জাতীয় দলে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এটি আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’
শিষ্যের সাফল্যে ভাসছেন গুরু সাধন বসাকও। ছোটবেলায় আতিককে দেখে এই কোচ বুঝে যান বিশেষ কিছু আছে ছেলেটির মধ্যে।
সাধন বসাক বলেন, ‘আতিককে আমি ছোট থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলেছি৷ তাকে যখন আমি ছোট বেলায় দেখি তখনই মনে হয়েছে ছেলেটাকে দিয়ে কিছু হবে। তারপরে তাকে অনেক পরিশ্রম করে গড়ে তুলেছি। এখন মনে হচ্ছে আমার পরিশ্রম বৃথা যায়নি।’
বাংলাদেশের অন্য দশটা পরিবারের মতো আতিকের পরিবারও ক্যারিয়ার হিসেবে ফুটবলকে বেছে নেওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত ছিল না। এখন অবশ্য সবাই তাকে সমর্থন করে।
মোহামেডানের ডিফেন্ডার আতিক বলেন, ‘পরিবার থেকে তেমন সাপোর্ট ছিল না। অনেকেই চায় না যে তার ছেলেমেয়ে খেলাধুলায় আসুক। ঢাকার মাঠে খেলার আগে আমার পরিবার থেকেও চায় নাই যে আমি ফুটবল খেলি। এখন পরিবারের সবার সাপোর্ট আছে।’
শেরপুরের নাম উজ্জ্বল করতে চান জেলা শহরের এই গর্ব। আতিক বলেন, ‘শেরপুরের সবাই যেন আমার জন্য দোয়া করেন। শেরপুরকে আমি জামালপুরের শেরপুর নয় শেরপুর নামে চেনাতে চাই সারাদেশের মানুষকে।’
আতিককে নিয়ে গর্বিত জেলার ক্রীড়া সংস্থাও। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজিমুল হক নাজিম বলেন, ‘শেরপুরের ছেলে আতিক জাতীয় দলে ডাক পাওয়ায় আমার অনেক ভালো লাগছে। সে জাতীয় দলে ভালো খেলে আমাদের শেরপুরের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আতিককে আমরা ছোট থেকে বড় করে তুলেছি। আমাদের প্রত্যাশা তার ক্রীড়া নৈপুণ্যে শেরপুরকে উজ্জ্বল করবে।’
শেরপুর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মানিক দত্ত বলেন, ‘আতিককে ছোট থেকেই আমরা ফুটবল ফেডারেশনের প্রশিক্ষক দিয়ে গড়ে তুলেছি। এ ছাড়া, তাকে নানাভাবে তাকে আমরা সহায়তা করে আসছি। আজ সে জাতীয় দলে নিজের ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্থান করে নেয়ায় আমরা অনেক খুশি।’
২ সেপ্টেম্বর কিরগিজস্থানে শুরু হতে যাচ্ছে চার দলের টুর্নামেন্ট। কিরগিজস্থান জাতীয় দলের সঙ্গে খেলবে তাদের অনূর্ধ্ব ২৩ দলও। আসরের অপর দল ফিলিস্তিন। ৫ সেপ্টেম্বর তাদের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আসর শুরু করবে বাংলাদেশ। এ টুর্নামেন্ট খেলার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল ঢাকা ছাড়বে ২৮ অথবা ২৯ আগস্ট।