বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘সিত্রাং’ শব্দের উৎপত্তি কোথা থেকে?

  •    
  • ২৪ অক্টোবর, ২০২২ ১৬:২০

এক শতাব্দীরও বেশি আগে ত্রাং প্রদেশের গভর্নর অস্ট্রেলিয়া থেকে গ্রিন ইবোনি গাছ (Jacaranda filicifolia) এনে রোপণ করেন নিজ এলাকায়। এই গাছ ও ফুল দারুণ ভালোবেসে ফেলেন স্থানীয়রা। একে প্রাদেশিক গাছ ও ফুল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। স্থানীয়ভাবে নাম রাখা হয় ‘সি-ত্রাং’ বা ‘স্রি-ত্রাং’। থাইল্যান্ডের প্রতিটি প্রদেশেই এভাবে আলাদা আলাদা প্রাদেশিক গাছ ও ফুল রয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এগিয়ে আসছে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে। ঝড়টি উপকূল অতিক্রম করতে পারে সোমবার সন্ধ্যার দিকে। এ সময় গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার।

এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হয়েছে থাইল্যান্ডের দেয়া তালিকা থেকে। বাংলাদেশ ও ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম সিত্রাং শব্দটির উৎপত্তি অনুসন্ধানে একে থাইল্যান্ডের একটি বংশপদবি হিসেবে উল্লেখ করেছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম বলছে ভিয়েতনামি ভাষায় শব্দটির অর্থ ‘গাছের পাতা’। তবে এসব প্রতিবেদনের কোনোটিতেই সুনির্দিষ্ট সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।

থাইল্যান্ডের প্রধান ইংরেজি সংবাদমাধ্যমে সোমবার দুপুর পর্যন্ত সিত্রাং নিয়ে কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। থাইল্যান্ডে সাধারণভাবে ব্যবহৃত বংশপদবির তালিকাতে সিথং, সিংথং সিথওয়াং, ত্রাং-এর মতো বিভিন্ন পদবি পাওয়া গেলেও সেখানে সিত্রাংয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

তবে অনলাইনে সিত্রাং শব্দের উৎপত্তি অনুসন্ধানে থাইল্যান্ডের একটি প্রদেশের তথ্য পাওয়া গেছে।

থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে মালয় উপদ্বীপের পশ্চিম দিকে এই ‘ত্রাং’ প্রদেশের অবস্থান। সাগরতীরের মনোরম এই এলাকাটি একসময় বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। থাইল্যান্ডে এই ত্রাং প্রদেশেই প্রথম রাবারগাছ রোপণ করা হয়। আর এই রাবারগাছ মালয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে ১৮৯৯ সালে এনেছিলেন ত্রাং প্রদেশের গভর্নর ফ্রায়া রাতসাদানুপ্রাদিত মাহিসন পাকরি।

থাইল্যান্ডের ত্রাং প্রদেশের সাবেক গভর্নর ফ্রায়া রাতসাদানুপ্রাদিত মাহিসন পাকরির ভাস্কর্য

ফ্রায়া রাতসাদানুপ্রাদিত একই সময়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে গ্রিন ইবোনি গাছ (Jacaranda filicifolia) এনে রোপণ করেন ত্রাং প্রদেশে। এই গাছ ও ফুল দারুণ ভালোবেসে ফেলেন স্থানীয়রা। একে প্রাদেশিক গাছ ও ফুল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। স্থানীয়ভাবে এর নাম রাখা হয় ‘সি-ত্রাং’ বা ‘স্রি-ত্রাং’। থাইল্যান্ডের প্রতিটি প্রদেশেই এভাবে আলাদা আলাদা প্রাদেশিক গাছ ও ফুল রয়েছে।

ত্রাং প্রদেশের স্লোগান হলো- ‘เมืองพระยารัษฏา ชาวประชาใจกว้าง ถิ่นกำเนิดยางพารา เด่นสง่าดอกศรีตรัง ปะการังใต้ทะเล เสน่ห์หาดทรายงาม น้ำตกสวยตระการตา।’ বাংলায় এর অর্থ দাঁড়ায় ‘ফ্রায়া রাতসাদার শহর, উদার মানুষ, শূকরের সুস্বাদু রোস্ট, রাবারগাছের প্রথম শহর, প্রাদেশিক ফুল সি ত্রাং, পানির নিচে প্রবাল প্রাচীর, মনোরম সৈকত এবং জলপ্রপাত।’

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ সিত্রাং হওয়ার পেছনে থাইল্যান্ডের ত্রাং প্রদেশের সি-ত্রাংয়ের যোগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্বজুড়ে ঘূর্ণিঝড় নামকরণে ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) একটি তালিকা রয়েছে। সেখানে সিত্রাংয়ের উচ্চারণের ক্ষেত্রেও ‘সি’ এবং ‘ত্রাং’ শব্দ দুটিকে আলাদা কিন্তু সম্পর্কিত (হাইফেনের মাধ্যমে যুক্ত) হিসেবে দেখানো হয়েছে।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর দেয়া নাম অনুযায়ী ডব্লিউএমওর ঝড়ের তালিকা

ঘূর্ণিঝড়ের নাম কীভাবে দেয়া হয়

ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) তালিকা অনুসারে চক্রাকারে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর দেয়া নাম অনুযায়ী নামকরণ হয় ঘূর্ণিঝড়গুলোর।

এই তালিকা অনুযায়ী এবারের ঘূর্ণিঝড়টির নাম (সিত্রাং) দিয়েছে থাইল্যান্ড। এর আগের ঝড়টির নাম দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সিংহলি ভাষায় ওই ঝড় ‘আসানি’ শব্দের অর্থ ছিল ‘ক্রোধ’।

ডব্লিউএমওর ৪৫তম বার্ষিক সভা হয় ২০১৮ সালে। ওমানের রাজধানী মাসকাটে অনুষ্ঠিত সেই সভায় দীর্ঘ মেয়াদে যেসব ঘূর্ণিঝড় আসবে সেগুলোর নাম চূড়ান্ত করা হয়।

উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম এরই মধ্যে নির্ধারিত করা আছে। এই অঞ্চলের ১৩টি দেশের ১৩টি করে দেয়া নামের ভিত্তিতে ১৩টি চক্রে আছে মোট ১৬৯টি ঝড়।

প্রতিটি চক্রের শুরু হয় বাংলাদেশের দেয়া নামের ঝড়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশের দেয়া নামগুলোর মধ্যে রয়েছে নিসর্গ, বিপর্যয়, অর্ণব, উপকূল, বর্ষণ, রজনী, নিশীথ, ঊর্মি, মেঘলা, সমীরণ, প্রতিকূল, সরোবর, মহানিশা। নিসর্গ এরই মধ্যে আঘাত হেনেছে উপকূলে।

ইংরেজি বর্ণক্রমিক দিক থেকে অন্য দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে থাকার কারণেই বাংলাদেশের দেয়া ঝড়ের নাম প্রতি চক্রের শুরুতে থাকে।

সিত্রাংয়ের পর এই অঞ্চলে যে ঝড়টি তৈরি হবে তার নাম হবে ‘মানদউস’। এ নামটি দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এর পরে বর্তমান চক্রের শেষ ঘূর্ণিঝড়টি আসবে ‘মোখা’ নামে। এ নামটি দিয়েছে ইয়েমেন।

কেন দেয়া হয় সাইক্লোনের নাম?

ডব্লিউএমওর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী সাইক্লোনের নামকরণ হয় পাঁচটি কারণে:

১. প্রতিটি সাইক্লোনকে আলাদা করে চেনার জন্য

২. এর গতিবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে

৩. একই অঞ্চলে একই সময়ে একাধিক সাইক্লোনের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি দূর করতে

৪. দ্রুত বহুজনের কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছে দিতে

৫. সহজে উপকূলীয় সাইক্লোনগুলোকে মনে রাখতে

এ বিভাগের আরো খবর