পৃথিবীতে অন্যান্য প্রাণীর শাবক বা ছানার তুলনায় সবচেয়ে অসহায় আর দুর্বল অবস্থায় জন্ম হয় মানবশিশুর।
অনেক প্রাণীর ছানা বা শাবক জন্মের পর মুহূর্তেই উঠে দাঁড়ানোর পাশাপাশি হাঁটতেও পারে; হয়ে ওঠে স্বাবলম্বী। এদের অনেকে কোনো রকমের যত্ন-আত্তি ছাড়াই লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগিয়ে যেতে পারে।
সৈকতের বালিতে কচ্ছপের পারা ডিম ফুটে বের হওয়া ছানাগুলো সমুদ্রের দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে পারে।
জন্মের কয়েক মিনিট বা সর্বোচ্চ এক ঘণ্টার মধ্যে জিরাফের শাবকগুলো কোনো রকমের সহায়তা ছাড়া একাই উঠে দাঁড়ানোর পাশাপাশি হাঁটা শুরু করতে পারে। একইভাবে নিজে নিজেই উঠে দাঁড়াতে পারে ঘোড়া ও জলহস্তির শাবকও। এরপর মা ঘোড়ার হাঁটার সঙ্গে তাল মেলাতে দৌড়ও দিতে পারে শাবকগুলো।
জন্মের কয়েক মিনিট বা সর্বোচ্চ এক ঘণ্টার মধ্যে জিরাফের শাবকগুলো কোনো রকমের সহায়তা ছাড়া একাই উঠে দাঁড়ানোর পাশাপাশি হাঁটা শুরু করতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
অন্যদিকে জন্মের পর মানবশিশু নড়াচড়া ছাড়া চিত হয়ে অনেকটা স্থিরভাবে শুয়ে থাকে। তারা হাত-পা দিয়ে কোনো কিছু করার জন্যে কোনো ধরনের চেষ্টাও করে না। এমনকি জন্মের প্রথম এক হাজার ঘণ্টায় (৪১ দিন) তাদের মধ্যে কিছু করার চেষ্টাও দেখা যায় না।
জন্মের পর শুধু মাথা তুলতেই মানবশিশুর লেগে যায় দুই মাস সময়। আর বেঁচে থাকার জরুরি কিছু কৌশল বুঝতে সময় লেগে যায় ১২ বছরেরও বেশি।
সৈকতের বালিতে কচ্ছপের পারা ডিম ফুটে বের হওয়া ছানাগুলো সমুদ্রের দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে পারে। ছবি: ইন্ডিয়ান রিভার ম্যাগাজিন
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার (সিডিসি) শিশুবিষয়ক এক গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মের পর শুধু মাথা তুলতে বা এদিক-ওদিক ঘোরাতেই শিশুর দুই মাস সময় লেগে যায়। উপুড় হতে লেগে যায় চার মাস। বসতে লাগে কমপক্ষে ছয় মাস। নবম মাসে প্রথমবার উঠে দাঁড়াতে পারে। হাঁটার জন্য প্রথম পা ফেলতে লেগে যায় কমপক্ষে এক বছর।
বলা চলে, প্রাণিজগতের অন্যান্য শাবক ও ছানার তুলনায় শুধু মানবশিশুর জন্ম হয় অবিশ্বাস্যভাবে অসহায় ও দুর্বল হয়ে।
জন্মের পরই অন্যান্য শাবক বা ছানারা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও হাত-পা ছোড়াছুড়ির মধ্য দিয়ে নিজের দেহের ওজন বহন করতে পারে। তাই মা-ঘোড়া বা মা-জলহস্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দৌড়াতে পারে শাবকগুলো।
মানবশিশুর অসহায় জন্মের কারণ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্ক ও মাথা পরিপূর্ণ হওয়ার বেশ আগেই জন্ম হয় মানবশিশুর। প্রায় ৪১ সপ্তাহের (প্রায় ১০ মাস) গর্ভকালীন গঠিত হওয়া মাত্র ৩০ শতাংশ মস্তিষ্ক নিয়ে জন্ম হয় শিশুর।
গর্ভকালীন ৯ মাসের পরিবর্তে ২১ মাস হলে তবে অনেকটা বেশি পরিপূর্ণতা নিয়ে জন্ম হতে পারত মানবশিশু।
মানবশিশু নবম মাসে প্রথমবার উঠে দাঁড়াতে পারে। হাঁটার জন্য প্রথম পা ফেলতে লেগে যায় কমপক্ষে এক বছর। ছবি: নিউজবাংলা
রড আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটির গর্ভকালীন ও মাতৃত্ববিষয়ক অধ্যাপক হোলি ডানসওয়ার্থ জানান, শিশুর মস্তিষ্ক পূর্ণতা পেতে জন্মের পর আরও প্রায় ১৮ মাস সময় লাগে।
অন্যান্য স্তন্যপায়ীর তুলনায় নারীর নিতম্ব আকারে ছোট, কোমরে সুগঠিত হাড় ও জরায়ুর সংকীর্ণ মুখ থাকায় গর্ভাবস্থায় পরিপূর্ণ হয়ে মানবশিশুর জন্ম হওয়া অসম্ভব। তাই অনেকটা অপরিপূর্ণ হয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট মস্তিষ্ক নিয়েই জন্ম হয় শিশুর।
অন্যদিকে শাবক জন্ম দেয়ার সময় বিড়ালসহ অন্যান্য অনেক প্রাণীর যোনি অনেক প্রশস্ত হতে পারে। তাদের যোনির আশপাশের হাড় নরম থাকে, যাতে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের শাবকও তারা জন্ম দিতে পারে।