তুরস্কের ইস্তাম্বুলে একটি জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে তিন হাজার ৭০০ বছরের পুরোনো একটি মাটির খণ্ড। গোলাকার চাকতির মতো খণ্ডটিতে জ্যামিতিক হিসাব খোদাই করা।
নতুন গবেষণা বলছে, এই মাটির চাকতি থেকে প্রমাণ মেলে যে, প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতার সময়েও প্রায়োগিক জ্যামিতির প্রচলন ছিল।
অর্থাৎ গ্রিক দার্শনিক পিথাগোরাসের এক হাজার বছরের বেশি সময় আগে ব্যাবিলন সমাজেও জ্যামিতিক জ্ঞানের ধারণা প্রচলিত ছিল।
টার্কিশ রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশনের (টিআরটি) প্রতিবেদনে জানানো হয়, ব্যাবিলন যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এই মাটির খণ্ডটি ইস্তাম্বুল আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়ামে আছে ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ফাউন্ডেশন অফ সায়েন্সে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সাড়ে তিন হাজার বছর আগে ভূমি জরিপের কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল মাটির খণ্ডটি।
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ওয়েলসের গণিতবিদ ড. ড্যানিয়েল ম্যান্সফিল্ডের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, এ পর্যন্ত প্রায়োগিক জ্যামিতির যত প্রাচীন চিহ্ন আবিষ্কার হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো ব্যাবিলনের মাটির খণ্ডটি।
এতে একটি জমির আইনগত ও জ্যামিতিক তথ্য খোদাই করা আছে। ধারণা করা হয়, জমিটির একটি অংশ কারও কাছে বিক্রি করা হয়েছিল।
ম্যান্সফিল্ড জানান, গ্রিক দার্শনিক পিথাগোরাসের জগদ্বিখ্যাত উপপাদ্যের সূত্র (a² + b² = c²) ব্যবহার করে তিনটি হিসাব করা হয়েছে মাটির খণ্ডটির ওপর।
অর্থাৎ পিথাগোরাস যে ত্রিকোণমিতিক তত্ত্ব উদ্ভাবনের দাবি করেছিলেন, তারও হাজার বছর আগে সেটির অস্তিত্ব ছিল ব্যাবিলন সাম্রাজ্যে।
পিথাগোরাসের তত্ত্ব অনুসারে, সমকৌণিক আয়তনে লম্ব ও ভূমির বর্গের যোগফল অতিভুজের বর্গের সমান।
গবেষক ড. ম্যান্সফিল্ড বলেন, ‘মাটির খণ্ডটিতে এ হিসাবের অস্তিত্বের অর্থ হলো জ্যামিতি, আয়তক্ষেত্র, সমকোণী ত্রিভুজের বিষয়ে পরিপূর্ণ তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক জ্ঞান ছিল ব্যাবিলনের ভূমি জরিপকারীদের।
‘এসব জ্ঞান ব্যবহার করে তারা বাস্তব সমস্যার সমাধান করতেন পিথাগোরাসের জন্মেরও হাজার বছর আগে।’
খ্রিষ্টপূর্ব ১৬০০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হওয়া প্রাচীন ব্যাবিলন সাম্রাজ্যের যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়েছে, তার মধ্যে জমিসংক্রান্ত একমাত্র দলিল মাটির খণ্ডটি।
ম্যান্সফিল্ড আরও বলেন, ‘মাঝে মাঝে সবচেয়ে চমৎকার আবিষ্কারগুলো আমাদের চোখের সামনেই লুকিয়ে থাকে কেবল দৃষ্টিগোচর হওয়ার অপেক্ষায়। এ আবিষ্কারের ফলে গণিতের ইতিহাস নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি পাল্টে যাবে।’
এসআই.৪২৭ হিসেবে পরিচিত মাটির এ খণ্ডটি। বর্তমান ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অবস্থান ছিল প্রাচীন ব্যাবিলনীয় শহর সিপারের ধ্বংসাবশেষে ১৮৯৪ সালে পরিচালিত এক প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানে খণ্ডটির সন্ধান মেলে।
এরপর থেকে খণ্ডটি ইস্তাম্বুলে সংরক্ষিত। নথিভুক্ত তথ্য থেকে জানা যায়, প্রথমে ইম্পেরিয়াল মিউজিয়াম অফ কনস্টান্টিনোপল নামের একটি জাদুঘরে রাখা ছিল সেটি। এখন ওই জাদুঘরটির অস্তিত্ব নেই।
কয়েক মাস লাগিয়ে প্রথমে খণ্ডটির প্রতিলিপি তৈরি করেন ড. ম্যান্সফিল্ড। পরে এতে থাকা তথ্য যাচাই ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে খণ্ডটির শৈল্পিক তাৎপর্য উপলব্ধি করেন তিনি।
জানতে পারেন পিথাগোরাসের উদ্ভাবন হিসেবে সুপরিচিত ত্রিকোণমিতিক তত্ত্ব তারও হাজার বছর আগে থেকে ব্যবহার হয়ে আসার কথা।