আমেরিকা মহাদেশের প্রাচীন সোলার অবজারভেটরিকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করেছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।
দুই হাজার ৩০০ বছরের পুরোনো স্থাপনাটিকে আখ্যা দেয়া হয়েছে ‘মানুষের সৃজনশীল প্রতিভার মাইলফলক’ হিসেবে।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর উত্তরে একটি মরু উপত্যকায় অবস্থিত চানকিলো অবজারভেটরি। প্রাচীন সোলার অবজারভেটরিটিতে সারি বেঁধে সাজানো ১৩টি টাওয়ার।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক স্থাপনার নতুন তালিকায় যুক্ত হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৩টি জায়গার, যার অন্যতম চানকিলোর ধ্বংসাবশেষ।
চানকিলো অবজারভেটরির টাওয়ারগুলোর নির্মাণকাজ খ্রিস্টপূর্ব ২৫০ থেকে ২০০ অব্দের প্রত্নতত্ত্বের সুপরিচিত বৈশিষ্ট্য।
প্রাচীনতম সোলার অবজারভেটরির ১৩টি টাওয়ার পরপর সাজানো, যার মাধ্যমে সূর্যের কৌণিক অবস্থান নির্ণয় করা হতো। ছবি: সংগৃহীত
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সূর্যের কৌণিক অবস্থান অনুসরণ ও শনাক্তে ব্যবহৃত হতো এ ১৩টি টাওয়ার। নিরক্ষ ও বিষুবরেখা থেকে সূর্যের সবচেয়ে দূরে অবস্থানের সময় শনাক্তে সক্ষম ছিল সেগুলো। একই সঙ্গে বছরের নির্দিষ্ট এ সময়ের দুই-এক দিন আগেই এর আভাসও মিলত এসব টাওয়ারের মাধ্যমে।
চানকিলোতে একটি আকর্ষণীয় তিন স্তরবিশিষ্ট পাহাড়ের চূড়ার অংশও অন্তর্ভুক্ত। ‘ফর্টিফায়েড টেম্পল’ নামে পরিচিত এই অনুর্বর মরু এলাকাটি কাসমা নদী উপত্যকায় পড়েছে।
প্রাচীন স্থাপনাটি বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন চানকিলোর প্রকল্প পরিচালক ইভান গাজি।
এ মর্যাদা চানকিলোর প্রাপ্য ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রাচীনকালে এ রকম পূর্ণাঙ্গ সৌর বর্ষপঞ্জি আর একটাও ছিল না। টাওয়ারগুলো এমন অবস্থানে রয়েছে যে সেগুলোর মাধ্যমে দুটি সুনির্দিষ্ট জায়গা থেকে বছরজুড়ে সূর্যের অবস্থান নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা যেত।’
দুই দশকের বেশি সময় ধরে চানকিলো নিয়ে গবেষণা করা এ প্রত্নতত্ত্ববিদ আরও বলেন, ‘আমেরিকাসহ বিশ্বের আর কোথাও চানকিলো অবজারভেটরির মতো দ্বিতীয়টা নেই।
‘পৃথিবীর সমসাময়িক অন্যান্য সভ্যতার মধ্যে পেরুর প্রাচীন সভ্যতা জ্যোতির্বিজ্ঞানে সবচেয়ে সমৃদ্ধ ছিল।’
দর্শনীয় স্থানটি সংরক্ষণে পেরুর সরকার ও অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে এক দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করে আসছে ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড।
সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী ও প্রেসিডেন্ট বেনেডিক্ট ডি মন্টলার বলেন, ‘চানকিলোর গুরুত্ব খুব একটা পরিচিত বা আলোচিত নয়। এর ক্ষয় ও সুরক্ষার বিষয়টি উপেক্ষিত ছিল। বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা পাওয়ায় সে সমস্যা দূর হবে বলে মনে করছি।’
প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, খ্রিস্টাব্দের প্রথম শতকের শুরুর দিকে চানকিলো অবজারভেটরি পরিত্যক্ত হয়। এরপর ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এটি আলোচনাতেই আসেনি।
চানকিলোর ধ্বংসাবশেষে কোনো মানুষের দেহাবশেষ মেলেনি। সেখানকার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কেও খুব বেশি কিছু জানা যায়নি।
চলমান শতাব্দীতে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় নাম ওঠা পেরুর তৃতীয় স্থাপনা চানকিলো।