বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আগের চেয়ে দ্রুত বিবর্তন ঘটছে মানুষের

  •    
  • ২০ জুন, ২০২১ ১৮:৪৯

এক গবেষণায় দেখা গেছে, আধুনিককালের পৃথিবীতে মানুষের বিবর্তন শুধু জিনের ওপর নির্ভরশীল নয়। বরং জেনেটিক রূপান্তরের চেয়ে সংস্কৃতিই মানব বিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে। নতুন এই ধারণা অনুযায়ী, টিকে থাকার সুবিধার জন্য জেনেটিক রূপান্তর এখন আর জরুরি নয়।

হোমো স্যাপিয়েন্সের উদ্ভবের পর থেকেই প্রাকৃতিক নির্বাচনের কারণে আমাদের পূর্বপুরুষেরা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়েছেন। এর পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে জিনগত বিবর্তন। জেনেটিক এই রূপান্তরের কারণেই বর্তমান মানুষের আবির্ভাব।তবে এক গবেষণায় দেখা গেছে, আধুনিককালের পৃথিবীতে মানুষের বিবর্তন শুধু জিনের ওপর নির্ভরশীল নয়। বরং জেনেটিক রূপান্তরের চেয়ে সংস্কৃতিই মানব বিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে।নতুন এই ধারণা অনুযায়ী, টিকে থাকার সুবিধার জন্য জেনেটিক রূপান্তর এখন আর জরুরি নয়। বরং সংস্কৃতির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে গড়ে ওঠা অভ্যাসই ‘রূপান্তর’ এর মূল চালিকা শক্তি, যা মানুষকে টিকে থাকার সুবিধা দিচ্ছে।এই ‘সাংস্কৃতিক বিবর্তন’ আগামীতেও মানবজাতির ভাগ্যকে আরও শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে বলে গবেষকদের ধারণা।যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ মাইনের বায়োলজি অ্যান্ড ইকোলজি বিভাগের গবেষক জ্যাক উড বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েবসাইট লাইভ সায়েন্সকে বলেন, ‘যখন কোনো প্রজাতিকে ভাইরাস আক্রমণ করে, সাধারণত সেটি জেনেটিক রূপান্তরের মাধ্যমে ওই ভাইরাস থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখে।’এই ধরনের বিবর্তন ঘটে ধীরে। কারণ, যারা ভাইরাস আক্রমণের ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর তারা মৃত্যুবরণ করে এবং যারা টিকে থাকে তারা আগ্রাসী ভাইরাস সংক্রান্ত জেনেটিক কোড পরের প্রজন্মে সঞ্চার করে।তবে বর্তমানে এ ধরনের হুমকিতে জেনেটিকভাবে ভাবে খাপ খাইয়ে নেয়ার আর দরকার নেই। বরং এখন মানুষ এখন কোনো নির্দিষ্ট একজনের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বহু মানুষের সংগ্রহ করা সাংস্কৃতিক জ্ঞানের ‘রূপান্তরের’ ফলে আবিষ্কৃত টিকা ও অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম। ইউনিভার্সিটি অফ মাইনের সোশ্যাল ইকোসিস্টেম মডেলিংয়ের সহযোগী অধ্যাপক টিম ওয়ারিং বলেন, “টিকা উদ্ভাবনের মাধ্যমে মানব সংস্কৃতি তার সম্মিলিত ‘ইমিউন সিস্টেম’ উন্নত করছে”।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ফলেও জিনগত বিবর্তন ঘটে। ওয়ারিং লাইভ সায়েন্সকে বলেন, ‘গরুর দুধ পান করা শুরুতে একটা সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য থাকলেও পরে তা এক দল মানুষের জেনেটিক বিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়।’

এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে জেনেটিক পরিবর্তনের আগে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন হচ্ছে।

ওয়ারিং বলেন, সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ধারণাটি শুরু হয়েছে বিবর্তনবাদের জনকের কাছ থেকেই। চার্লস ডারউইন বুঝতে পেরেছিলেন, মানুষের অভ্যাস বিবর্তিত হতে পারে এবং সেটি সন্তানের মধ্যে তার শারীরিক বৈশিষ্ট্যের মতোই হস্তান্তর করা সম্ভব। কিন্তু তার সময়ে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন, আচরণের পরিবর্তন উত্তরাধিকার সূত্রে পায় সন্তানেরা।উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনও মায়ের যদি এমন প্রবণতা থাকে, যা তার মেয়েকে খাবার অন্বেষণ শেখাতে পারে; তাহলে তিনি সেটি তার মেয়েকে দিয়ে যাবেন। এতে তার মেয়ের টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়বে এবং এর ফলে, এই প্রবণতা আরও মানুষের মধ্যে আরও বেশি দেখা যাবে।‘প্রসিডিংস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি’ এর জার্নালে ২ জুন প্রকাশিত গবেষণায় ওয়ারিং ও উড দাবি করেন, মানব ইতিহাসের কোনো এক সময়ে সংস্কৃতি আমাদের ডিএনএর বিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। দুই গবেষক বলছেন, সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আমাদের এমনভাবে বিবর্তিত হতে সাহায্য করছে, যা শুধু জৈবিক পরিবর্তনের পক্ষে সম্ভব ছিল না।এর কারণ ব্যাখ্যা করে তারা বরেন, সংস্কৃতি দল বা গ্রুপ নির্ভর। দলের সবাই একে অপরের সঙ্গে কথা বলেন, শেখেন ও অনুকরণ করেন। এই দলভিত্তিক আচরণ, সংস্কৃতি থেকে শেখা, খাপ খাইয়ে নেয়ার পদ্ধতি জিনগত ভাবে টিকে থাকার সুবিধার চেয়ে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

একজন ব্যক্তি অল্প সময়ে প্রায় সীমাহীন সংখ্যক লোকের কাছ থেকে দক্ষতা ও তথ্য গ্রহণ করতে পারেন এবং ঘুরেফিরে আরও অনেকের কাছে সেই তথ্য ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। গবেষকেরা বলছেন মানুষ যত বেশি লোকের কাছ থেকে শিখতে পারছে তত ভাল। বড় দলগুলো ছোট দলের চেয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান করে ও আন্তঃদলীয় প্রতিযোগিতা অভিযোজন ক্ষমতাকে উদ্দীপ্ত করে, যা তাদের টিকে থাকতে সহায়তা করে।নতুন ধারণা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সংস্কৃতিতে নতুন বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটে।বিপরীতভাবে, একজন ব্যক্তি বাবা-মায়ের কাছ থেকে কেবল জেনেটিক তথ্য উত্তরাধিকার সূত্রে পান এবং তাদের ডিম্বাণু বা শুক্রাণুতে তুলনামূলকভাবে মাত্র কয়েকটি এলোমেলো রূপান্তর রেকর্ড করেন। এগুলো তাদের সন্তানদের ছোট গ্রুপের মধ্যে সঞ্চারিত করতে প্রায় ২০ বছর সময় লাগে। এই পরিবর্তনের গতি অনেক ধীর।গবেষণাটির বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার কগনিটিভ অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সেসের সহযোগী অধ্যাপক পল স্মলডিনো বলেন,‘এই থিওরির জন্য অপেক্ষা ছিল দীর্ঘদিনের। বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞান সংস্কৃতির সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করে তা বর্ণনা করার জন্য অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।’গবেষকদের মতে, মানব সংস্কৃতির উপস্থিতি বিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।লাইভ সায়েন্সকে স্মলডিনো বলেন, ‘তাদের (দুই গবেষক) বড় দাবি হচ্ছে, মানুষের পরবর্তী বিবর্তনভিত্তিক রূপান্তরের সেতুবন্ধনের জায়গায় রয়েছে সাংস্কৃতিক প্রভাব।’ প্রাণের উদ্ভব ও বিকাশের ক্ষেত্রে এ ধরনের সেতুবন্ধন বিবর্তনের গতিপ্রকৃতির ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে। ডিএনএযুক্ত কোষের বিবর্তন ছিল এমন একটি বড় পর্যায়। এরপর ক্ষুদ্রাঙ্গ ও জটিল অভ্যন্তরীণ কাঠামোযুক্ত কোষের আবির্ভাব সবকিছুকে বদলে দেয়। প্রাণি ও উদ্ভিদকোষের আবির্ভাব ছিল আরেকটি বড় পরিবর্তন। লিঙ্গের উদ্ভব, ভূ-পৃষ্ঠে জীবনের শুরু- এর সবগুলোই একেকটি বড় মাইলফলক।এই প্রতিটি ঘটনাই বিবর্তন যেভাবে কাজ করে তাতে বদল এনেছে। গবেষকেরা বলছেন, এখন মানুষ আরও একটি বিবর্তনীয় রূপান্তরের মধ্যে পড়েছে। এখনও জিনগত পরিবর্তন অব্যাহত থাকলেও তা মানুষের টিকে থাকার শর্তকে খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।ওয়ারিং এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদে আমাদের প্রস্তাব এই যে, আমরা একক জেনেটিক জীব থেকে পিঁপড়ার বাসা বা মৌমাছির চাকের মতো সুপার অর্গানিজমে পরিণত হওয়া সাংস্কৃতিক গ্রুপে পরিণত হয়েছি।’

এ বিভাগের আরো খবর