আফ্রিকার মাটিতে অবমুক্ত হলো ৭৮ হাজার বছরের পুরোনো একটি মানুষের কবর। ধারণা করা হচ্ছে, মহাদেশটিতে এযাবৎকালে প্রাগৈতিহাসিক কালের মানুষের যত কবর আবিষ্কৃত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন এটি।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন বছর বয়সী একটি শিশুকে কবর দেয়া হয়েছিল সেখানে। দুই পা বুকের সামনে যত্নের সঙ্গে মুড়োনো অবস্থায় অন্তিম শয্যায় শোয়ানো হয় তাকে।
শিশুটির মাথার কাছে বালিশের মতো করে কাফন জাতীয় কাপড় ভাঁজ করে রাখা ছিল।
বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচারে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণার বিস্তারিত। এতে বলা হয়, কেনিয়া উপকূলে পানির কাছাকাছি স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে আবিষ্কৃত হয়েছে নানা রকম অলঙ্কারে ভর্তি কবরটি। বলা হচ্ছে, প্রস্তর যুগের কোনো এক সময়ের কবর এটি।
বুধবার গবেষকরা জানান, প্রাচীন যুগে আফ্রিকা ও অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের সামাজিক আচরণ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে এ আবিষ্কারের ফলে।
গবেষণা প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক স্পেনের বার্গোসে ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার অন হিউম্যান ইভোল্যুশনের পরিচালক মারিয়া মার্টিনোন-টোরেস। তিনি বলেন, কাফনের কাপড়টি কবরে যে কায়দায় রাখা ছিল, তাতে তার মৃত্যুর পর শেষকৃত্যানুষ্ঠান হয়েছিল বলে ধারণা পাওয়া যায়।
শিশুটির কঙ্কালের খণ্ডাংশ মাটি খুঁড়ে বের করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। কিন্তু সে সময় পুরো কবরটির সন্ধান পাননি প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
তিন মিটার উঁচু গোল কবরটি পুরোপুরি বেরিয়ে আসে পাঁচ বছর আগে। হাড়গোড়ের বেশিরভাগই পঁচে গেছে।
গবেষকরা জানান, শুরুতে তারা বুঝতেই পারেননি যে এটি কবর ছিল। যা কিছু পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলোকে প্রথমে স্থানীয় একটি জাদুঘরে এবং পরে স্পেনের গবেষণা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সবকিছুর রাসায়নিক বিশ্লেষণের পর কবরের বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
এখন গবেষণা চলছে শিশুটির মাথার খুলি ও মুখের হাড় নিয়ে।
তার মেরুদণ্ড ও পাঁজরের হাড়গোড় প্রায় অক্ষত আছে বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা।
বলা হয়, আফ্রিকাই আদি মানবের জন্মস্থান। কিন্তু ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রাচীনকালে শেষকৃত্যের রীতি সম্পর্কে যতোটা জানা গেছে, সে তুলনায় আফ্রিকার বিষয়ে তেমন কোনো তথ্যই নেই।
এর আগে ইসরায়েলেও আদি যুগের একটি কবর অবমুক্ত হয়। সেটির বয়স এক লাখ ২০ হাজার বছর বলে ধারণা করা হয়।