করোনার টিকা নেয়ার পর নারীদের ঋতুস্রাব (মাসিক) অনিয়মিত হয়ে পড়ছে কি না সেটি জানতে অনলাইনে একটি জরিপ চালাচ্ছেন দুই নারী গবেষক। ইতোমধ্যে প্রায় ২৫ হাজার নারী এই জরিপে অংশ নিয়েছেন।
এ বছরের শুরুতে করোনার টিকা নেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়িসের সহযোগী অধ্যাপক ড. ক্যাথরিন ক্ল্যান্সি এবং ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষক ড. ক্যাথেরিন লি।
দুই গবেষকই টিকা নেয়ার নারীদের মাসিক ঋতুচক্রে সাময়িক পরিবর্তন খেয়াল করেছেন। দেখা গেছে, ঋতুস্রাব স্বাভাবিক সময়ের আগে শুরু হচ্ছে অথবা আগের চেয়ে বেশি পরিমাণে হচ্ছে। আবার কখনো এটি অনিয়মিতও ঘটছে।গত ফেব্রুয়ারিতে বিষয়টি নিয়ে প্রথম টুইট করেন ক্ল্যান্সি। তিনি লিখেন, ‘টিকা নেয়ার পর আর কেউ কি তাদের ঋতুস্রাবে পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন?’
ঋতুস্রাবের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রয়োজন পড়ছে বলেও উল্লেখ করেন ক্ল্যান্সি। তার ওই টুইটে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ লাইক দেন। টুইটবার্তার উত্তরে অনেক নারী জানান, তারা নিজেরাও ঋতুস্রাবে অস্বাভাবিক পরিবর্তন খেয়াল করছেন।
পরে বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক জরিপ চালানোর সিদ্ধান্ত নেন ক্ল্যান্সি ও লি।
৭ এপ্রিল তারা জরিপের একটি লিংক টুইটারে পোস্ট করেন, যেখানে নারীরা টিকা নেয়ার পর তাদের ঋতুস্রাব সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা জানাতে পারবেন।
শিকাগো ট্রিব্রিউনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে লি জানান, সোমবার পর্যন্ত অনলাইন জরিপটিতে প্রায় ২৫ হাজার নারী অংশ নিয়েছেন।লি বলেন, ‘ঠিক কতজন নারী এই পরিবর্তন খেয়াল করছেন আমাদের জরিপে সেটি সঠিকভাবে জানা সম্ভব নয়। তবে আমরা তাদের অভিজ্ঞতার মিলগুলো সম্পর্কে অন্তত জানতে পারব। হয়ত এই জরিপ বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী গবেষণার পথ দেখাবে।‘
করোনা টিকা নারীদের ঋতুস্রাবে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে সেটি নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন গবেষণা হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, টিকা নেয়ার ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ওপরে চাপ তৈরি হয়। হয়ত এ কারণেই ঋতুস্রাবের ওপরেও কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি মেইল বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের অনুমোদন পাওয়া ফাইজার-বায়োএনটেক, মর্ডানা এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার পরীক্ষা চালানোর সময় ঋতুচক্রে পরিবর্তনের কোনো ঘটনা পাওয়া যায়নি। জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির ফ্যামিলি মেডিসিনের অধ্যাপক ড. রানিত মিশোরি জানান, টিকা নেয়ার পর ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কথা তিনি শুনেছেন। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো অসুবিধা নিয়ে কেউ তার কাছে আসেনি।
মিশোরি বলেন, ‘যারা এটি নিয়ে জরিপ করছেন আমি তাদের সাধুবাদ জানাই। কিন্তু টিকা নেয়ার কারণেই ঋতুস্রাবে সমস্যা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত এর সপক্ষে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ নেই।’তিনি বলেন, ‘সন্তান জন্মদানে সক্ষম এমন নারীদের ১৪-১৫ শতাংশের বেলায় মাসিকে বাড়তি রক্তপাত স্বাভাবিক ঘটনা।’
তিনি জানান, মানসিক চাপ, হরমোনের সমস্যা, বিভিন্ন ওষুধের প্রভাব, রক্তজমাট বাঁধার সমস্যা বা থাইরয়েডের সমস্যার কারণেও মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। টিকা নেয়ার সঙ্গে এর এর সম্পর্ক আছে কি না, সেটি বোঝার জন্য আরও গবেষণা ও সময়ের প্রয়োজন। মিশোরি আশা করেন, জরিপটির কারণে নারীরা টিকা নেয়া থেকে বিরত থাকবেন না। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই টিকা নিন। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে টিকার ভূমিকা অনেক। এর ফলে আপনার জীবন বাঁচবে। অন্যদিকে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাসিকে বাড়তি রক্তক্ষরণ জীবনের জন্য তেমন ঝুঁকিপূর্ণ কিছু নয়।’